ফাইল ছবি
চিকিৎসকদের মতে, করোনার চতুর্থ ঢেউ শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই ৮, ১০ ও ১২— সংক্রমণ নিয়ে দক্ষিণ কলকাতার এই তিনটি বরো এলাকাই আপাতত প্রধান মাথাব্যথা কলকাতা পুরসভার। পুর স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত কয়েক দিন ধরে এই তিন বরো এলাকায় দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল একশোরও বেশি। যদিও রবিবার সেই সংখ্যা তুলনায় কমেছে। তবে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা রোজই ওঠানামা করছে।
পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত কয়েক দিনে শহরে হু হু করে বেড়েছে সংক্রমণ। কিন্তু তার মধ্যেও ৮ নম্বর বরো এলাকার গড়িয়াহাট, বালিগঞ্জ, ভবানীপুর, ১০ নম্বর বরো এলাকার নিউ আলিপুর, কসবা, গরফা, লেক, যাদবপুর, রিজেন্ট পার্ক, নেতাজিনগর এবং ১২ নম্বর বরো এলাকার পাটুলি, যাদবপুর, গরফা ও কসবার একাংশ, আনন্দপুর, পূর্ব যাদবপুর, পঞ্চসায়রের বাসিন্দারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। পুরসভা সূত্রের খবর, ১২ নম্বর বরো এলাকার ১০১ থেকে ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডে গত কয়েক দিনে সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়েছে অনেকটাই। সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ নম্বর বরোর ৯১ থেকে ১০০ নম্বর ওয়ার্ডেও।
জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে কলকাতায় করোনার লেখচিত্র ফের বাড়তে শুরু করেছে। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, আক্রান্তদের মধ্যে অনেক প্রবীণ-প্রবীণাও রয়েছেন। তবে যাঁরা বুস্টার ডোজ় নিয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই এখনও পর্যন্ত করোনামুক্ত রয়েছেন। বুস্টার ডোজ় না-নেওয়া বয়স্কদের মধ্যেই সংক্রমিত হওয়ার হার বেশি দেখা যাচ্ছে। আর তাই প্রবীণদের প্রত্যেককে বুস্টার ডোজ়ের আওতায় আনতে চাইছেন পুর কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে শনিবার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, প্রবীণদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বুস্টার ডোজ় দেওয়া হবে।
তবে সংক্রমণ বাড়তে থাকলেও শহরবাসীর একাংশের মধ্যে এখনও মাস্ক পরার অনীহায় বিস্মিত চিকিৎসকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, করোনার চতুর্থ ঢেউ শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই শহরবাসীর একাংশ যে ভাবে মাস্ক ছাড়াই রাস্তায় ঘোরাফেরা করছেন তা একেবারে অনুচিত। বক্ষরোগ চিকিৎসক অনির্বাণ নিয়োগীর কথায়, ‘‘করোনা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হল মাস্ক পরা। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের ভীষণ ভাবে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।’’
যে সমস্ত ওয়ার্ডে করোনা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে, সেখানে পুরসভার তরফে স্থানীয়দের সচেতন করতে আরও বেশি করে প্রচার চালানো হচ্ছে। করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের মতো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আবাসন এলাকায় সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। আবাসন কমিটিগুলিকে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, পুর স্বাস্থ্য দফতরের তরফে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পুরসভার এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, ‘‘আবাসনের লিফ্টে চড়ার সময়ে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। তাই লিফ্টে ওঠানামার সময়ে হাত স্যানিটাইজ় করা ও আবাসনের প্রবেশপথের সামনে স্যানিটাইজ়ার রাখার কথা বলা হয়েছে। মাস্ক ছাড়া যাতে কেউ আবাসনে ঘোরাফেরা না করেন, সে বিষয়েও পুরসভার তরফে সতর্ক করা হয়েছে।’’
পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, অনেকে করোনা পরীক্ষা না করে বাড়িতে থাকছেন। অথচ পরীক্ষা করলে দেখা যাবে, তাঁরা সংক্রমিত। পুরসভার বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জ্বর, সর্দি-কাশি নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাই উপসর্গ থাকলে করোনা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে পুরসভা। পুর স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘এখন করোনায় ভয়ের কারণ নেই। আক্রান্তদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি উপসর্গহীন রয়েছেন। মৃত্যু হয়নি বললেই চলে। তবে আক্রান্তেরা একটু বেশি অসুস্থ বোধ করলে নিকটবর্তী হাসপাতাল বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।’’