eid

Eid: সম্প্রীতির আলোয় মসজিদের সামনেই কোভিড-প্রচার

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় প্রতি বছরই বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ দেখা যায় নাদিয়ালে। যেমন, মণ্ডপ তৈরি থেকে শুরু করে দুর্গাপুজোর নানা আয়োজনে সক্রিয় ভাবে অংশ নেন এলাকার মুসলিম যুবকেরা।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২১ ০৬:২০
Share:

n একযোগে: মসজিদের সামনে বৈঠকে শান্তি কমিটির সদস্যেরা। মঙ্গলবার, নাদিয়ালে। নিজস্ব চিত্র

ওয়ারিশ, রহমানদের সঙ্গে শামিল হবেন বীরবল, রুদ্রেন্দুরাও। আজ, বুধবার ইদুজ্জোহা উপলক্ষে বন্দর এলাকার নাদিয়ালের সাতটি মসজিদের সামনে থাকছে অভিনব আয়োজন। সেখানে করোনা সচেতনতায় বিশেষ প্রচারাভিযান চলবে। বিলি করা হবে মাস্ক। মুসলিম ভাইদের হাতে খেজুর ও পানীয় জলের বোতল তুলে দিয়ে তাঁদের অভ্যর্থনা জানাবেন ‘নাদিয়াল শান্তি কমিটি’র হিন্দু সদস্যেরা।

Advertisement

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় প্রতি বছরই বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ দেখা যায় নাদিয়ালে। যেমন, মণ্ডপ তৈরি থেকে শুরু করে দুর্গাপুজোর নানা আয়োজনে সক্রিয় ভাবে অংশ নেন এলাকার মুসলিম যুবকেরা। একই ভাবে ইদ বা ইদুজ্জোহার উৎসবে মুসলিমদের সঙ্গে হাত মেলান হিন্দুরাও।

এলাকায় শান্তি ও সম্প্রীতির বাতাবরণ অক্ষুণ্ণ রাখতে বছরখানেক আগে নাদিয়াল থানার তরফে উভয় সম্প্রদায়ের সদস্যদের নিয়ে তৈরি করা হয়েছিল ‘নাদিয়াল শান্তি কমিটি’। ওই কমিটির যুগ্ম সম্পাদক রুদ্রেন্দু পাল বললেন, ‘‘উৎসব তো সকলের। এলাকার মুসলিমরা যে ভাবে দুর্গাপুজোয় শামিল হন, সেই ভাবে ওঁদের উৎসবে আমরাও যোগ দিই। এর ফলে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে একতা ও হৃদ্যতা বাড়ে। বিপদে-আপদে আমরা সকলেই সকলের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ি। এটাই তো কাম্য।’’ নাদিয়ালের এক পুজো কমিটি তথা শান্তি কমিটির সদস্য প্রবীর পালের পর্যবেক্ষণ, ‘‘উভয় সম্প্রদায়ের
উৎসবেই আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শামিল হই। পরস্পরের সুখ-দুঃখের শরিক হই। এই অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না। পুজোর প্রসাদের মতো ইদের সিমুই, পায়েসও সকলের বাড়িতে পৌঁছে যায়।’’

Advertisement

গত দেড় বছরে করোনা অতিমারিতে অনেকেই নিজের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। নাদিয়ালের বেশির ভাগ মানুষই পেশায় দর্জি। কিন্তু করোনার প্রভাবে কাপড়ের ব্যবসাও মার খেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শান্তি কমিটির তরফে দরিদ্র মুসলিম পরিবারগুলির হাতে ইদের মতো ইদুজ্জোহাতেও নতুন কাপড় ও খাদ্যসামগ্রী (সিমুই, লাচ্চা) তুলে দেওয়া হয়েছে।

শান্তি কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, করোনা এখনও বিদায় নেয়নি। সামনেই তৃতীয় ঢেউটের ভ্রুকুটি। তাই সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে আজ, ইদুজ্জোহার দিন সাতটি
মসজিদের সামনে ওই কমিটির হিন্দু সদস্যেরা জড়ো হবেন। মুসলিমদের সঙ্গে হাত মেলাবেন তাঁরা। তার পরে করোনা নিয়ে প্রচার চালাবেন। রুদ্রেন্দুবাবুর কথায়, ‘‘করোনা সচেতনতায় লিফলেট বিলি করা হবে। করোনা থেকে বাঁচতে কী করণীয়, কী করণীয় নয়, তা ওই লিফলেটে লেখা থাকছে। নমাজিদের মধ্যে সেগুলি বিতরণ করা হবে। এ ছাড়া, মাস্ক পরার গুরুত্ব বোঝাতে মাইকেও প্রচার চালানো হবে।’’ শান্তি কমিটির আর এক যুগ্ম সম্পাদক মহম্মদ ওয়ারিশের কথায়, ‘‘এই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে সচেতনতা একটু কম। ইদুজ্জোহায় সকলেই মসজিদে নমাজ পড়তে আসবেন। সেই কারণে প্রচার
চালানোর জন্য আমরা এই দিনটাকেই বেছে নিয়েছি।’’ বীরবল গিরি নামে কমিটির অপর এক সদস্যের কথায়, ‘‘মনে রাখতে হবে, করোনা এখনও ভাল রকম সক্রিয় রয়েছে। মাস্ক পরার পাশাপাশি অযথা ভিড় না করা বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারেও প্রচার চালানো হবে।’’

নাদিয়াল থানার ওসি ময়ূখময় রায় বললেন, ‘‘এখানকার বাসিন্দারা যে ভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখেন, তাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার কাজটাও অনেক কমে যায় পুলিশের।’’ বন্দর এলাকার ডিসি জাফর আজমলের কথায়, ‘‘নাদিয়াল সারা দেশের মডেল হওয়া উচিত।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement