ফাইল চিত্র।
শহরে রোজই বেড়ে চলেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। গত ৫ জুন কলকাতা পুরসভা এলাকায় করোনায় সংক্রমিত হয়েছিলেন ২০ জন। ঠিক ১৫ দিন পরে, ২০ জুন সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯১-এ। অর্থাৎ, দু’সপ্তাহে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে। শহরে যে হারে সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, মানুষ যে ভাবে মাস্ক পরা-সহ যাবতীয় বিধি মানার পাট চুকিয়ে দিয়েছেন, তাতে আগামী দিনে বড়সড় বিপদের ভয় রয়েছে। চিকিৎসকদের অনেকের মতে, মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে ধরপাকড় ও জরিমানা ফের শুরু করা হোক।
কলকাতায় গত ১৮, ১৯ ও ২০ জুন করোনায় আক্রান্ত হন যথাক্রমে ১৩৯, ১১৫ ও ১৯১ জন। অথচ, জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত শহরে করোনা নিয়ন্ত্রণেই ছিল। কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, গত ৫ জুন শহরে করোনায় আক্রান্ত হন ২০ জন। ১২ জুন সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ৬০। ১৪ জুন তা ১০০ পেরিয়ে যায়। সে দিন আক্রান্ত হন ১০৫ জন।
পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, উত্তরের তুলনায় দক্ষিণ কলকাতায় সংক্রমণের হার এবং আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। বিশেষত, সাত, আট, দশ ও বারো নম্বর বরো এলাকায় করোনা ক্রমেই বাড়ছে। উত্তর কলকাতায় আক্রান্তের সংখ্যা কম থাকলেও দুই ও তিন নম্বর বরো এলাকায় সংক্রমণ কিছুটা বাড়ছে। করোনার এই বাড়বাড়ন্তের পিছনে সাধারণ মানুষের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন চিকিৎসকেরা। বক্ষরোগ চিকিৎসক ধীমান গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘‘অনেকে ধরেই নিয়েছেন, করোনা আর নেই। তাই বেশির ভাগ মানুষ মাস্ক ছাড়া ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মাস্ক পরাতে শাস্তির বিধান আনা প্রয়োজন।’’ ধীমানবাবুর মতে, ‘‘করোনাকে অবজ্ঞা করার ফল ভোগ করছেন বহু মানুষ। আমার কাছে এমন বহু রোগী আসছেন, যাঁরা অতীতে উপসর্গহীন থাকলেও এখন বেশি দৌড়ঝাঁপ করতে পারছেন না। নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনবেন না। মাস্ক পরুন। ভিড় এড়িয়ে চলুন।’’
দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের বক্ষরোগ চিকিৎসক অনির্বাণ নিয়োগীর কথায়, ‘‘বেশ কয়েক মাস পরে গত দু’সপ্তাহ ধরে ফের আমাদের হাসপাতালে করোনা রোগীরা ভর্তি হচ্ছেন। এখন মোট ছ’জন ভর্তি রয়েছেন।’’ জানা গিয়েছে, সারা রাজ্যে যত জন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশই কলকাতার বাসিন্দা। এ শহরে করোনা যে হারে বাড়ছে, তাতে উদ্বিগ্ন অনির্বাণবাবুর পর্যবেক্ষণ, ‘‘করোনা বাড়লেও বিধি মানার কোনও চেষ্টাই নেই। ট্রেনে, বিমানে, রাস্তাঘাটে কেউ কিছু মানছেন না। প্রশাসন কঠোর ভূমিকা না নিলে আগামী দিনে বিপদ আরও বাড়বে।’’
পুর স্বাস্থ্য বিভাগের এক আধিকারিক জানালেন, পয়লা জুলাই থেকে শহর জুড়ে মশাবাহিত রোগ দূরীকরণে প্রচার চালানো হবে। অটোয় মাইক লাগিয়ে ওই প্রচারে সাধারণ মানুষকে মাস্ক পরার কথাও বলবেন তাঁরা। যদিও পুরসভার চিকিৎসকদের মতে, শুধু প্রচার চালালেই হবে না। মাস্কবিহীন লোকজনকে ধরপাকড় ও জরিমানা না করলে কাজের কাজ কিছু হবে না।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।