police

Police: মামলার নিষ্পত্তির পরেও ধৃত! পুলিশ অফিসার ভর্ৎসিত

বিস্মিত অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারক গ্রেফতারির পক্ষে তদন্তকারী অফিসারকে আইনি ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশও দেন।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২১ ০৮:১০
Share:

প্রতীকী ছবি।

বাদী-বিবাদী দুই পক্ষের সম্মতিতে খোরপোশের মামলার নিষ্পত্তি হয়ে গিয়েছিল। তা সত্ত্বেও মামলার পুরনো নির্দেশের ভিত্তিতে এক পক্ষকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করানো হয়। এই ঘটনায় ধৃতকে মুক্তির নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি তদন্তকারী অফিসারকে ভর্ৎসনা ও তিরস্কার করেন আলিপুর আদালতের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারক আম্রপালি চক্রবর্তী। বিস্মিত অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারক গ্রেফতারির পক্ষে তদন্তকারী অফিসারকে আইনি ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশও দেন।

Advertisement

আলিপুর আদালত সূত্রের খবর, ২০১৫ সালে ওই আদালতের সপ্তম দায়রা বিচারকের এজলাসে ক্যানিং থানা এলাকার দক্ষিণ তালদির সোমা বৈদ্য তাঁর স্বামী সঞ্জিত বৈদ্যের বিরুদ্ধে খোরপোশের মামলা দায়ের করেন। কয়েক বছর শুনানির পরে চলতি বছরের ২১ মার্চ খোরপোশ আদায়ের জন্য সঞ্জিতের বিরুদ্ধে ‘ডিসট্রেস ওয়ারেন্ট’ জারি করে আদালত। আইনজীবীদের ব্যাখ্যায়, এই ওয়ারেন্ট কোনও গ্রেফতারি পরোয়ানা নয়। খোরপোশের মামলায় অভিযুক্তের অস্থায়ী সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ। যার ভিত্তিতে তদন্তকারী অফিসার অভিযুক্তের অস্থায়ী সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে আদালতে জমা করবেন। আদালত তা বিক্রি করে খোরপোশ মেটানোর ব্যবস্থা করবে।

কিন্তু লক্ষ্মী পুজোর পরে সোমা ও সঞ্জিত ফের সংসার করতে আগ্রহী হলে মামলার বিচারকের কাছে দু’জনেই সম্মতিপত্র পেশ করেন। যার ভিত্তিতে ৩০ অক্টোবর মামলার নিষ্পত্তি হয়। খোরপোশের ডিসট্রেস ওয়ারেন্ট বাতিল করে উভয় পক্ষের হাতেই সেই সংক্রান্ত প্রামাণ্য নথিও তুলে দেন বিচারক।

Advertisement

সঞ্জিতের আইনজীবী সাহেব হালদার বলেন, ‘‘সোমা ওই নথি ক্যানিং থানার অফিসার রবিন পালের কাছে জমা দিতে গেলে নিতে অস্বীকার করেন তিনি। সোমাকে গালিগালাজ করে তাড়িয়ে দেন অফিসার।’’ অভিযোগ, ওয়ারেন্ট বাতিল করতে বিচারকের নির্দেশ সত্ত্বেও ৩১ অক্টোবর গভীর রাতে সঞ্জিতকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে হাজতে নিয়ে যান রবিন পাল। পরদিন অর্থাৎ, ১ নভেম্বর ক্যানিং হাসপাতালে সঞ্জিতের মেডিক্যাল পরীক্ষার পরে আলিপুর আদালতে অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারকের এজলাসে হাজির করেন ওই অফিসার। আদালত সূত্রের খবর, মামলা নিষ্পত্তির সমস্ত নথি দেখানোর পরে ক্ষুব্ধ হন বিচারক। তৎক্ষণাৎ সঞ্জিতকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই গ্রেফতারির আইনি ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেন ওই অফিসারকে।

অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারককে আইনি ব্যাখ্যায় রবিন পাল জানিয়েছেন, পরবর্তী নির্দেশের বিষয়ে জানতেন না। কয়েক বার সঞ্জিতের বাড়ি তিনি গিয়েছিলেন। ওই রাতেও সেখানে গেলে তাঁর উপরে হামলার চেষ্টা হয়। তাই সঞ্জিতকে গ্রেফতার করেন। তাঁর ভুল হয়ে গিয়েছে বলেও দাবি করেন রবিন।

কিন্তু ওই অফিসারের বিরুদ্ধে আদালতে লিখিত আকারে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন সঞ্জিত। তাঁর আইনজীবী সাহেব হালদার বলেন, ‘‘গত মার্চে থানায় ওই ডিসট্রেস ওয়ারেন্ট নথি আসার পরে সঞ্জিতের থেকে রবিন পাল ৩০ হাজার টাকা দাবি করেছিলেন। মামলার নিষ্পত্তি হওয়ায় ওই টাকা সঞ্জিতের থেকে নিতে পারেননি। সেই আক্রোশে এ ভাবে গ্রেফতার করেছিলেন। ওই অফিসারের সঙ্গে কথোপকথনের রেকর্ডও জমা দেওয়া হয়েছে।’’

এই ঘটনায় সপ্তম দায়রা বিচারক সুজাতা মণ্ডলও ক্ষুব্ধ। মঙ্গলবার আইনি ব্যাখ্যা চেয়ে তিনি ওই অফিসারকে তলব করেন। এ দিন আদালতে হাজির হয়ে ওই অফিসার কোনও আইনি ব্যাখ্যা বিচারককে দিতে পারেননি বলেই খবর। বিচারক ঊর্ধ্বতন অফিসার হিসাবে ক্যানিং থানার আইসি আতিবুর রহমানকে এই গ্রেফতারি সংক্রান্ত সমস্ত নথিপত্র ও থানার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে ১৫ নভেম্বর আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন।

এই বিষয়ে বারুইপুর পুলিশ জেলার কর্তারা মন্তব্য করেননি। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement