তিন বার চেষ্টা করেও সল্টলেকের একটি আধ্যাত্মিক প্রতিষ্ঠান থেকে এক কিশোরীকে হোমে পাঠাতে পারেনি পুলিশ। বাধ্য হয়ে অভিযান চালাতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল পুলিশ। শুক্রবার ওই প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালাতে সার্চ ওয়ারেন্ট জারি করল বিধাননগর আদালত। যদিও ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্তে পুলিশ ও শিশু কল্যাণ সমিতির গড়িমসি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বাসিন্দারা।
১৯ জুলাই শিশু কল্যাণ সমিতি পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে সল্টলেকের সিএল ব্লকে ওই প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালায়। সেখানে গিয়ে মুম্বইবাসী একটি মেয়ে পুলিশের নজরে আসে। অভিযোগ, ওই মেয়েটির বয়স ও ঠিকানার প্রমাণপত্রের নথি দেখাতে পারেনি সেই প্রতিষ্ঠান। সে দিনই শিশু কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান অরবিন্দ দাশগুপ্ত নির্দেশ দিয়েছিলেন ওই মেয়েটিকে হোমে পাঠাতে। সে দিনই ওই প্রতিষ্ঠানের ভিতরে ঢুকতে গিয়ে পুলিশ বাধার সম্মুখীন হয়। এমনকী বিভিন্ন সূচলো পদার্থ দিয়ে হামলা চলে পুলিশের উপর। ঘটনায় ৩ জন মহিলা পুলিশ আহত হন। এর জেরে ওই প্রতিষ্ঠানের ৭ জনকে গ্রেফতারও করেছিল পুলিশ।
কিন্তু নির্দেশ মানেনি সেই প্রতিষ্ঠান। পরে পুলিশকে লিখিত নির্দেশ পাঠায় শিশু কল্যাণ সমিতি। কিন্তু পুলিশও সেই কিশোরীকে উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়। পুলিশের একটি অংশের বক্তব্য, শিশু কল্যাণ সমিতি নির্দেশ পাঠালেও সার্চ ওয়ারেন্ট না থাকায় পুলিশ ওই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঢুকে ওই কিশোরীকে উদ্ধার করতে পারছে না। তাই বাধ্য হয়ে পুলিশ বিধাননগর আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল। এ দিন সেই সার্চ ওয়ারেন্টের আবেদন মঞ্জুর করে আদালত।
কিন্তু অভিযান চালানোর এই আইনি প্রক্রিয়া মাঝে ওই প্রতিষ্ঠানের অন্যতম কর্মকর্তা রবীন্দ্রনাথ দাসকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানায় পুলিশ। এই রবীন্দ্রনাথ দাসকে এর আগে খাদিম কাণ্ডে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তথ্যপ্রমাণের অভাবে সে বেকসুর খালাস হয়ে যায়।
এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে মাস তিন আগেই। দত্তাবাদের এক কিশোরীকে ওই প্রতিষ্ঠান কৃর্তৃপক্ষ জোর করে আটকে রেখেছে এবং অন্যত্র সরিয়ে দিয়েছে বলে অভিযাগ দায়ের করা হয়। যদিও পুলিশের এক কর্তা জানান, সেই কিশোরী রাজ্যের বাইরে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সেই কিশোরী নিজে পুলিশকে জানিয়েছে, সে নিজের ইচ্ছায় ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়েছে। ফলে তদন্ত অনেকটাই বাধা পায় বলে তদন্তকারীদের একাংশের বক্তব্য।
পুলিশ ও শিশু কল্যাণ সমিতি সূত্রের খবর, ওই প্রতিষ্ঠানের তরফে মুম্বইবাসী সেই কিশোরীর বয়সের তথ্যপ্রমাণ দিয়েছে। তবে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই প্রতিষ্ঠানের তরফে কিশোরীকে হোমে পাঠানোর সময়সীমা আরও ৭ দিন বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে।
যদিও দত্তাবাদবাসীদের অভিযোগ, ওই প্রতিষ্ঠানে অল্পবয়সী মেয়েদের নিয়ে গিয়ে কার্যত ‘মগজ ধোলাই’ করা হচ্ছে। শুধু একজন নয়, বেশ কয়েকজন কিশোরীকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁদের অভিযোগ, ওই প্রতিষ্ঠানে সব বাইরের রাজ্য থেকে আসা কিশোরীরা রয়েছে। এখানকার কিশোরীদের বাইরে পাঠানো হয়েছে।
সেখানেই পুলিশ ও শিশু কল্যাণ সমিতির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, একবার অভিযান চালানোর পরে পুলিশি নজরদারি থাকা সত্ত্বেও কীভাবে প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্মকর্তা পালিয়ে গেলেন? ওই প্রতিষ্ঠানে যদি কোনও কিশোরীকে রাখা হয়েও থাকে, তবে তাদেরও যে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়নি, তার কোনও প্রমাণ আছে কি?
বিধাননগরের গোয়েন্দা প্রধান কঙ্করপ্রসাদ বারুই বলেন, ‘‘অভিযানের জন্য সার্চ ওয়ারেন্ট জরুরি ছিল। তা মিলেছে, এ বার অভিযান চালানো হবে।’’ পাশাপাশি তদন্তে গড়িমসির অভিযোগ অস্বীকার করে শিশু কল্যাণ সমিতির উত্তর ২৪ পরগনা জেলার চেয়ারম্যান অরবিন্দ দাশগুপ্তের দাবি, ‘‘পুলিশের নজরদারি রয়েছে। কাউকে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে অন্যত্র সরাতে পারবে না।’’