মেয়ের সঙ্গে দোলা নস্কর। ছবি: সংগৃহীত।
অর্থনৈতিক সংকট এবং পারিবারিক অশান্তির জেরে শিশু কন্যাকে খুন করে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেছিল দম্পতি। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় সন্তানকে ছটফট করতে দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না মা। নিজেও তখন রক্তাক্ত অবস্থায় মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। হাতে, গলায় গভীর ক্ষত। সেই অবস্থায় শিশু কন্যার মা ফোন করলেন নিজের দাদাকে।
বুধবার সেই ফোনের সূত্র ধরেই, বাবা-মা এবং তাঁদের সাত বছরের শিশুকন্যাকে রক্তাক্ত অবস্থায় রিজেন্ট পার্ক থানার মুর অ্যাভিনিয়ের বন্ধ ঘর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনজনই এমআর বাঙুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
২৪/৫ মুর অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা মধ্য তিরিশের অতীশ দীপঙ্কর নস্কর এবং তাঁর স্ত্রী দোলা। দম্পতির একমাত্র সন্তান অদ্বিতীয়ার বয়স সাত। অতীশের বাড়ির পাশেই থাকেন তাঁর ভাইয়েরা। তাঁদেরই একজন জয়ন্ত নস্কর। এ দিন সকালে তিনি বলেন,“আমরা কিছুই জানতাম না। সকাল সাতটা নাগাদ একটি অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে পুলিশ হাজির হয়। তাঁরাই তিনজনকে ঘরের মধ্যে থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে।” পরে জয়ন্ত এবং পরিবারের অন্যেরা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকদের কাছ থেকে জানতে পারেন, অতীশ এবং দোলার বাঁহাতে এবং গলায় গভীর ক্ষত পাওয়া গিয়েছে। সাত বছরের অদ্বিতীয়ারও গলাতেও ধারালো অস্ত্রের ক্ষত।
স্বামী দীপঙ্কর নস্করের সঙ্গে দোলা নস্কর। ছবি: সংগৃহীত।
পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন সকালে রিজেন্ট পার্ক থানায় যান এক ব্যক্তি। তিনি নিজেকে দোলার দাদা হিসাবে পরিচয় দেন। পুলিশকে জানান, তাঁর বোন ফোন করেছিলেন। ফোনেই জানিয়েছেন তাঁরা স্বামী-স্ত্রী এবং সন্তানকে নিয়ে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় ঘরে পড়ে রয়েছেন। সকালে কোনও অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করতে না পেরে পুলিশের সাহায্য চান দোলার দাদা। রিজেন্ট পার্ক থানার পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। রক্তাক্ত অবস্থাতেই দরজা খুলে দেন দোলা।
আরও পড়ুন: ফেলে দেওয়া কাগজ, কাপড়ে গড়া হচ্ছে ভবিষ্যৎ
এমআর বাঙুর হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অতীশ এবং দোলার অবস্থা স্থিতিশীল কিন্তু অদ্বিতীয়া এখনও সংকটজনক অবস্থায় রয়েছে। তার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।
কিন্তু কেন এরকম সিদ্ধান্ত? একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করেন অতীশ। বাড়িতে স্ত্রী সন্তান ছাড়া আছেন মা গঙ্গা। কিন্তু মঙ্গলবার তিনিও গিয়েছিলেন জয়নগরে নিজের পৈত্রিক বাড়িতে। তাই রাতে ওই তিনজন ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। অতীশের ভাই জয়ন্তর স্ত্রী মিতা বলেন,“কখনও আমরা দোলা-অতীশের মধ্যে কোনও অশান্তির আঁচ পাইনি যা থেকে এ রকম একটা কাণ্ড হতে পারে।” তবে অতীশের এই ভাইপোর দাবি, কয়েকমাস ধরেই অর্থনৈতিক কারণে অবসাদে ভুগছিলেন অতীশ। একটা লোন নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। অর্থনৈতিক সংকট থেকেই এই ঘটনা বলে মনে করছেন তিনি। তবে পুলিশ এখনও নিশ্চিত নয় কী কারণে এই ঘটনা। পুলিশের এক আধিকারিক বলেন,“আমরা এখনও ওই দম্পতির সঙ্গে কথা বলতে পারিনি।”
উদ্বিগ্ন পরিবার। নিজস্ব চিত্র।
আরও পড়ুন: ‘ডেঙ্গি’তে মৃত আরও ১
দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকরা। তাঁরা ঘটনাস্থল থেকে একটি রক্তমাখা ফল কাটার ধারালো ছুরি উদ্ধার করেছেন। তাঁদের ধারণা, ওই ছুরি দিয়েই গলার নলি কাটার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান অতীশ তাঁর স্ত্রী মিলে খুন করার চেষ্টা করে নিজেদের মেয়েকে। তারপর স্ত্রীর গলা এবং হাত কেটে নিজে একই ভাবে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেন অতীশ। তবে তদন্তকারীরা এই ঘটনাক্রম নিয়ে এখনও পুরো নিশ্চিত নন।
(কলকাতার ঘটনা এবং দুর্ঘটনা, কলকাতার ক্রাইম, কলকাতার প্রেম - শহরের সব ধরনের সেরা খবর পেতে চোখ রাখুন আমাদের কলকাতা বিভাগে।)