প্রতীকী ছবি।
বছর পাঁচেক আগে শিশু দত্তক নিতে গিয়ে প্রতারণা শিকার হয়েছিলেন কাশীপুরের এক দম্পতি। প্রায় দু’লক্ষের বেশি টাকা তাঁরা খুইয়েছিলেন দত্তক নিতে গিয়ে। সম্প্রতি কাশীপুর থানায় সঞ্জীব মুখোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সেই প্রতারণার অভিযোগ জানালেন রমেশকুমার পাল এবং মীনা পাল (নাম পরিবর্তিত)। তদন্ত শুরু করে পুলিশ জেনেছে, এই সঞ্জীব মুখোপাধ্যায় জলপাইগুড়ির একটি হোমের সঙ্গে ছিলেন। যে হোমের মালিক ২০১৭ সালে গ্রেফতার হন দত্তকের নামে শিশু বিক্রির অভিযোগে।
কাশীপুরের ওই দম্পতি পুলিশকে অভিযোগে জানিয়েছেন, সন্তান না হওয়ায় ২০১৫ সালে তাঁরা দত্তক নিতে জলপাইগুড়ির একটি হোমে যোগাযোগ করেন। দত্তক নেবেন বলে সরকারি ভাবে আবেদন করেন এবং ৪১ হাজার টাকা মতো জমাও করেন। কিন্তু পরে ‘হোম ভিজিট’ করতে এলে জলপাইগুড়ির হোমের মালিক চন্দনা চক্রবর্তী তাড়াতাড়ি বাচ্চা দেওয়ার জন্য প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা চান। শুধু তাই নয়, শিশুপুত্র নিতে গেলে এর থেকে কম টাকায় তাড়াতাড়ি বাচ্চা মিলবে না বলেও জানান।
ওই দম্পতির অভিযোগ, চন্দনার সঙ্গে এসেছিলেন সঞ্জীব নামে ওই ব্যক্তি। সেই সময়ে তাঁরা শুধুমাত্র ‘হোম ভিজিট’-এর নামে ১০ হাজার টাকা নেন বলেও অভিযোগ। দম্পতি পুলিশকে জানান, বয়স বেশি হওয়ায় তাঁরাও তাড়াতাড়ি সন্তান পাওয়ার আশায় টাকা দিতে রাজি হয়ে যান। তবে আড়াই লক্ষ টাকা দিতে পারবেন না বলেও জানান। দম্পতির দাবি, পরে দেড় লক্ষ টাকায় রফা হয়। সেই কথা মতো কিছু দিন পরে তাঁরা সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়ের হাতে দেড় লক্ষ টাকা তুলে দেন। দম্পতি জানাচ্ছেন, সঞ্জীবকে টাকা নেওয়ার সময়ে সেটির একটি ‘নোট’ দিতে বললে তিনি রাজি হননি।
পুলিশ জানাচ্ছে, টাকা নেওয়ার পরেও বাচ্চা না পেয়ে দম্পতি সঞ্জীবকে ফোন করেন। তাতে সঞ্জীব জানান যে পরিবার বাচ্চা দেবেন, তাঁরা আরও টাকা চাইছেন। ফলে আরও ৪২ হাজার টাকা দিতে হয় কাশীপুরের দম্পতিকে। কিন্তু এর পরেও তাঁরা বাচ্চা পাচ্ছিলেন না। এক দিন তেঘরিয়ায় তাঁদের যেতে বলা হয়।
রবিবার মীনাদেবী জানান, তেঘরিয়ায় একটি ফ্ল্যাটে গিয়ে তাঁরা দেখেন যে বয়সের বাচ্চা চেয়েছিলেন, তার থেকে বেশি বয়সী একটি বাচ্চাকে তাঁদের জন্য ঠিক করা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, মীনাদেবী বলেন, ‘‘বাচ্চাটি দুর্বল ছিল। মুখ ছিল ভাবলেশহীন। বাচ্চাটিকে দেখে সুস্থ মনে না হওয়ায় আমি নিতে চাইনি।’’ কিন্তু হোমের লোকজন জোরাজুরি করায় বাচ্চাটিকে বাড়ি নিয়ে আসেন তাঁরা। মীনাদেবী জানান, বাচ্চাটিকে আনার পর থেকে শিশুটির ভাব-গতিক ঠিক নয় দেখে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান তাঁরা। আর তখন ওই চিকিৎসকই জানান বাচ্চাটি শারীরিক প্রতিবন্ধী। বেশি বয়সে বাচ্চা দত্তক নিতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন বুঝে ওই দম্পতি তেঘরিয়ার ফ্ল্যাটে গিয়ে বাচ্চাটিকে ফেরত দিয়ে আসেন। মীনাদেবীর দাবি, তাঁদের বলা হয়েছিল ভাল বাচ্চা এলেই তাঁরা পাবেন।
কিন্তু তারই মাঝে ২০১৭ সালে জলপাইগুড়ি হোম থেকে বাচ্চা বিক্রির অভিযোগে সিআইডি চন্দনাকে গ্রেফতার করে। পাল দম্পতি জানিয়েছেন, সেই সময়ে সিআইডি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এর মাঝে সরকারি নিয়মে দেওয়া ৪০ হাজার টাকা ফেরত পেলেও, বাকি দু’ লক্ষেরও বেশি টাকা তাঁরা ফেরত পাননি। এমনকি সিআইডিও সঞ্জীবকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তাই তাঁরা কাশীপুর থানার দ্বারস্থ হন সঞ্জীবের খোঁজে এবং টাকা ফেরত পাওয়ার আশায়।