এক বছর আগে বর্ষবরণের রাতে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল একমাত্র ছেলের। সেই শোকেই ভেঙে পড়েন মা-বাবা। শেষে শুক্রবার নিজেদের বাড়িতে এক সঙ্গে আত্মঘাতী হলেন তাঁরা। মৃত্যু পরবর্তী অন্তিম ক্রিয়াকলাপের জন্য রেখে গেলেন বেশ কিছু টাকাও। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া সুইসাইড নোটে তেমনটাই ইঙ্গিত মিলেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শুক্রবার, জগাছা থানার বামুনপাড়ার ঘটনা। মৃত দম্পতির নাম অলোক (৫৭) এবং সুজাতা চট্টোপাধ্যায় (৪৬)। স্থানীয় সূত্রে খবর, শনিবার সকালে প্রথমে প্রতিবেশীরা দোতলার জানলা দিয়ে এক জনের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে বসার ঘর থেকে অলোকবাবুর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে। পাশেই ওই দম্পতির ছেলের ঘর থেকে উদ্ধার হয় সুজাতাদেবীর ঝুলন্ত দেহ। দেহ দু’টি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই দম্পতির ছেলে সাবর্ণ চট্টোপাধ্যায় বি টেক পাশ করে ওড়িশায় চাকরি করতেন। গত বছর দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যুর পর থেকেই নিজেদের গুটিয়ে নেন ওই দম্পতি। অলোকবাবু রেলের চাকরি থেকে স্বেচ্ছাবসরও নেন। প্রতিবেশীদের সঙ্গেও আর যোগাযোগ রাখতেন না। স্থানীয় বাসিন্দা প্রতাপ ঘোষ বলেন, ‘‘পাড়ার সকলের সঙ্গে ওঁদের সুসম্পর্ক ছিল। কিন্তু ছেলের মৃত্যুর পরে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে নিয়েছিলেন।’’
পুলিশ জানায়, সুইসাইড নোটে লেখা আছে, ছেলের মৃত্যুশোক সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন ওই দম্পতি। মিলেছে একটি উইলও। যেখানে নিজেদের প্রায় ২০ লক্ষ টাকার সম্পত্তি কিছু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও পাড়ার ক্লাবে দান করে গিয়েছেন তাঁরা। এ ছাড়াও ব্যাঙ্কে থাকা শেষ ১১ হাজার ৪০০ টাকাও তাঁরা তুলে রেখে গিয়েছেন। মৃত্যুর পরে নিজেদের অন্তিম ক্রিয়াকলাপে ব্যবহারের জন্যই ওই টাকা রেখেছেন বলে উল্লেখ করেছেন তাঁরা।
হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ তথা কাউন্সিলর বিনোদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কিছু দিন আগেও অলোকবাবু অ্যাম্বুল্যান্স কিনতে পাড়ার ক্লাবকে কয়েক লক্ষ টাকার একটি চেক দেন। তার পরেই যে এই ঘটনা ঘটবে, বিশ্বাস করতে পারছি না কেউই।’’