প্রতীকী ছবি।
ঋণ প্রদানকারী সংস্থার তরফে ঋণ গ্রহীতাকে জানানো হয়েছিল, ঋণ পেতে হলে তাঁকে নিজের নামে প্রথমে ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। সেখানে জমা রাখতে হবে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা। তবেই তিনি ঋণ নিতে পারবেন। শর্ত অনুযায়ী অ্যাকাউন্ট খুলে কল্যাণীর বাসিন্দা রিঙ্কি গঙ্গোপাধ্যায় নিজের নামে ৩৫ হাজার টাকা রেখেছিলেন। কিন্তু অ্যাকাউন্ট খোলার পরদিনই উধাও হয়ে গেল সেই টাকা!
অভিযোগ, সম্প্রতি এ ভাবেই সাইবার প্রতারকদের ফাঁদে পড়েছেন কল্যাণীর বাসিন্দা অনুপ গঙ্গোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী রিঙ্কি। পুরো ঘটনাটি জানিয়ে কল্যাণী থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন অনুপ। ওই ব্যক্তি জানান, ব্যবসার জন্য তাঁর ঋণের দরকার ছিল। সংবাদপত্রে একটি ঋণ প্রদানকারী সংস্থার বিজ্ঞাপন দেখে তিনি যোগাযোগ করেন। অনুপ বলেন, ‘‘ফোনে ওই সংস্থার কয়েক জন আমার নথিপত্র যাচাই করে জানান, আমি আট লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পেতে পারি। তবে এর জন্য আমাকে নতুন অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে এবং তাতে ৪০ হাজারের কিছু বেশি টাকা জমা রাখতে হবে।’’
অনুপ জানান, ওই ঋণ প্রদানকারী সংস্থার কয়েক জনের সাহায্যে তিনি তাঁর স্ত্রীর নামে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলেন। পুরো পদ্ধতিটি ফোনের মাধ্যমে হয়। এবং অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে যে যে নথি প্রয়োজন, যেমন আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, মোবাইল নম্বর, ইমেল আইডি, ব্যাঙ্ক থেকে পাঠানো ওটিপি— সবই ওই সংস্থার এক জনকে দিয়ে দেন অনুপ। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ওই ব্যক্তি অনুপবাবুকে জানান, তাঁর স্ত্রীর নামে অ্যাকাউন্ট খুলে গিয়েছে। ঋণ পাওয়ার জন্য রিঙ্কি ওই অ্যাকাউন্টে ৩৫ হাজার টাকা জমা দেন। এ-ও জানান, বাকি টাকা পরের দিন জমা দেবেন। ওই সংস্থাও অনুপদের বলে দেয়, তারা শীঘ্রই ঋণ দিয়ে দেবে।
অনুপ বলেন, ‘‘অ্যাকাউন্টে ৩৫ হাজার টাকা জমা করার পরের দিনই দেখি, এক ব্যক্তি সেখান থেকে ওই টাকা তুলে নিয়েছেন। অ্যাকাউন্টে এক টাকাও নেই।’’ সঙ্গে সঙ্গে ব্যাঙ্কে গিয়ে বিষয়টি জানতে চান ওই দম্পতি। অনুপ জানান, ওই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তাঁদের জিজ্ঞাসা করেন, কেন তাঁরা অ্যাকাউন্ট খুলতে গিয়ে ব্যক্তিগত সব তথ্য এক অপরিচিতকে দিয়ে দিয়েছেন? এর পরেই ওই দম্পতি বুঝতে পারেন, তাঁরা প্রতারকের পাল্লায় পড়েছেন।
সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত জানান, বার বার সাবধান করা সত্ত্বেও মানুষ সচেতন হচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তি আসলে একটা বাড়ি তৈরি করে সেটির চাবি দিয়ে দিয়েছেন প্রতারকের হাতে। ফল যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। প্রতারক ঘরের তালা খুলে টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছে।’’ সন্দীপবাবু জানান, অ্যাকাউন্ট খুলতে গিয়ে ওই ব্যক্তি তাঁর মোবাইল নম্বর, আধার কার্ডের নম্বর, এমনকি ব্যাঙ্ক থেকে পাঠানো ওটিপি দিয়ে মারাত্মক ভুল করেছেন।
কল্যাণী থানার অফিসারেরা জানিয়েছেন, তাঁরা অভিযোগ পেয়েছেন। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।