স্রেফ হাত ধুলেই আটকায় অন্তত ১০টি রোগ।
Coronavirus in Kolkata

অপরিষ্কার হাতেই ফের সংক্রমণের আশঙ্কা

ধর্মীয় পরিসরে হাত ধোয়ার রীতি প্রাচীন হলেও চিকিৎসাক্ষেত্রে হাত ধোয়ার অভ্যাস বেশি পুরনো নয়।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২০ ০৩:৩০
Share:

শৈশব থেকেই হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়া জরুরি। কুমোরটুলিতে। ছবি: সুমন বল্লভ

১৮৪৬ সাল। তিন বছরের চুক্তির ভিত্তিতে ইগনাজ় সেমেলওয়েইজ় নামে হাঙ্গেরির এক চিকিৎসক ভিয়েনা জেনারেল হাসপাতালে যোগ দিলেন। তখন সংক্রমণের কারণে প্রসূতি-মৃত্যুর ঘটনা আকছার ঘটত। ইগনাজ় খেয়াল করেছিলেন, সেই সব হাসপাতালে এই হার সর্বোচ্চ ছিল, যেখানে শব ব্যবচ্ছেদের ক্লাসের পরে হাত না ধুয়েই চিকিৎসকেরা প্রসূতি বিভাগে চলে যেতেন। তখন থেকেই ইগনাজ় ভাবতে শুরু করেছিলেন, হাতে নিশ্চয়ই এমন কিছু রয়েছে যে কারণে প্রসূতিদের মৃত্যু হচ্ছে। এই ভাবনা থেকেই তিনি ভিয়েনা হাসপাতালে ব্লিচ ও চুন দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা চালু করেন। দেখা যায়, প্রসূতিদের মৃত্যুহার নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। সেই প্রথম চিকিৎসা ক্ষেত্রে হাত ধোয়ার গুরুত্ব প্রকাশ্যে আসে।

Advertisement

ধর্মীয় পরিসরে হাত ধোয়ার রীতি প্রাচীন হলেও চিকিৎসাক্ষেত্রে হাত ধোয়ার অভ্যাস বেশি পুরনো নয়। যে অভ্যাস নতুন মাত্রা পেয়েছে কোভিড ১৯-এর পরিপ্রেক্ষিতে। শুধুমাত্র হাত ধুয়েই যে কত রোগ আটকে দেওয়া যায়, তা বার বার বিজ্ঞানীদের চর্চায় উঠে এসেছে। তা সত্ত্বেও জনসাধারণের একটি অংশের মধ্যে এই অভ্যাস গড়ে ওঠেনি বলে আশঙ্কা অনেকের। যার ফল আগামী দিনেও ভুগতে হবে বলে সতর্ক করছেন তাঁরা।

অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস-এর সংক্রামক রোগ চিকিৎসক সায়ন্তন বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, আইসিইউ-তে সংক্রমণ রোধের যত রকম পদ্ধতি রয়েছে, তার অন্যতম হল চিকিৎসকদের হ্যান্ড হাইজিনের অভ্যাস। উন্নত দেশগুলি তো বটেই, এ দেশেরও প্রথম সারির হাসপাতালে এক জন রোগীর পরে অন্য এক রোগীকে দেখতে যাওয়ার আগে অ্যালকোহল বা স্যানিটাইজ়ার দিয়ে হাত ধোয়া বাধ্যতামূলক। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে এই দুটোর কোনওটাই কাজ করে না। শুধু সাবান-জলে হাত ধুয়েই সংক্রমণ রোধ করা যায়।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: কুর্নিশ জানাতে ইচ্ছে করে জীবনযুদ্ধের সৈন্যদের

‘হ্যান্ড হাইজিন ইন হেলথ কেয়ার’ নামে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) আলাদা নথি-ই রয়েছে। যেখানে হাত পরিষ্কার রাখা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা তথ্য দিয়ে প্রমাণ করা হয়েছে। সেমেলওয়েইজ়ের সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত হাত ধোয়ার রীতির ক্রমবিবর্তন তুলে ধরা হয়েছে। পরিসংখ্যান দিয়ে দেখানো হয়েছে, কী ভাবে স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যেই হাত ধোয়া নিয়ম পালনের ক্ষেত্রে ‘অসাম্য’ রয়েছে। দেখা গিয়েছে, স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতি শিফটে গড়ে ৫-৪২ বার পর্যন্ত হাত ধুয়ে থাকেন। প্রতি ঘণ্টায় ১.৭-১৫.২ বার। হাত ধোয়ার সময়ের মধ্যেও পার্থক্য রয়েছে। দেখা গিয়েছে, হাত ধোয়ার সময়ে ৬.৬ সেকেন্ড থেকে ৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছে। এক গবেষকের কথায়, ‘‘হ্যান্ড হাইজিন নিয়ে উন্নত দেশ যতটা মাথা ঘামায়, উন্নয়নশীল দেশ তত ঘামায় না।’’

অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ-এর এপিডিমিয়োলজি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান শম্পা মিত্র জানাচ্ছেন, শুধু কোভিড ১৯-ই নয়, শ্বাসযন্ত্রের যে কোনও অসুখই হাত অপরিষ্কার থাকলে হতে পারে। কারণ, ড্রপলেট হাতে পড়ার পরে সেই হাত মুখে দিলে সংক্রমণ দ্রুত ছড়ায়। শম্পাদেবীর কথায়, ‘‘শ্বাসযন্ত্রের অসুখের পাশাপাশি ডায়রিয়া, আমাশয় (ডিসেন্ট্রি), টাইফয়েডের মতো অসুখও হাত অপরিষ্কার থাকলে হতে পারে।’’

আরও পড়ুন: বিধি পালনের সঙ্গে লঙ্ঘনের ছবিও দেখলেন পরিদর্শকেরা

ইতিহাস বলছে, সেই সময়ে ইগনাজ় সেমেলওয়েইজ়ের কথা কেউ মানতে চাননি। সমকালীন চিকিৎসক মহল তাঁর হাত পরিষ্কারের তত্ত্বকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত মানসিক হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছিল সেমেলওয়েইজ়ের। এক গবেষকের কথায়, ‘‘এখনও জনসাধারণের একাংশ হাত ধোয়ায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে না। ফলে কোভিড ১৯-এর মতো সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement