প্রতীকী ছবি।
বেপরোয়া গতিতে আসা লরির চাকায় পিষে মৃত্যু হল এক পথকুকুরের। লকডাউনের শহরে শুক্রবার রাতে ধর্মতলা মোড়ের কাছে যখন দুর্ঘটনাটি ঘটে তখন এক দম্পতি পথকুকুরদের খাওয়াচ্ছিলেন। ওই দম্পতি-সহ তিন জন প্রত্যক্ষদর্শী ওই লরির পিছু নিয়ে নন্দন চত্বরের সামনে আটকান চালককে। পরে তাঁরাই ওই ব্যক্তিকে পুলিশে দেন। নিউ মার্কেট থানা বছর একুশের আইনুল হক গাজি নামে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। শনিবার কুকুরটির ময়না-তদন্ত হয়েছে।
লকডাউনের শহরে প্রতিদিনই দুঃস্থদের পাশাপাশি পথকুকুরদেরও খাওয়ানোর ব্যবস্থা করছেন নাগরিক, পুলিশ, নেতা-সহ অনেকেই। তেমন ভাবেই শুক্রবার রাতে ধর্মতলার ওই এলাকার পথকুকুরদের খাওয়াতে মাংস-ভাত নিয়ে গিয়েছিলেন দিবাকর বসাক এবং অনিতা দাস বসাক নামের এক দম্পতি। সবে ফুটপাত ঘেঁষে রাখা খাবারে মুখ দিয়েছিল কয়েকটি কুকুর। সেখানেই একটি কুকুর চাপা পড়ে।
দিবাকর জানান, রেস্তরাঁ, দোকানপাট বন্ধ। খাবারের অভাবে ধুঁকছে কুকুর-বেড়াল। গত দু’সপ্তাহ ধরে তাই তাঁরা ওদের খাওয়াতে বেরোন। দিবাকরের কথায়, “দিনে খাওয়ালে অনেকে ঝামেলা করেন। তাই রাতে বেরোই। রাস্তার এক ধারে কুকুরগুলিকে খেতে দেওয়া হয়। লরিটা এসে চোখের সামনে পিষে দিল!” অনিতার কথায়, “জওহরলাল নেহরু রোডের একাংশ গার্ডরেল দিয়ে ঘেরা ছিল। সেই রাস্তা ছেড়ে এসে লরিটা পিষে দিল! অনুতপ্তও নন চালক।”
দম্পতির অভিযোগ, “রাত আড়াইটেয় নিউ মার্কেট থানায় গেলে কুকুরদের খাওয়ানোর জন্য কর্তব্যরত পুলিশকর্মী উল্টে গ্রেফতারের হুমকি দেন।” অনিতার দাবি, “একের পর এক কুকুর খুনের ঘটনার বিচার না হওয়াই বোধহয় এই মন্তব্যের সাহস জোগায়।”
সব শুনে পশু রক্ষা আন্দোলনে যুক্ত শ্রীলেখা মিত্র বলেন, “এ ভাবে কত দিন প্রাণীদের উপরে আক্রমণ চলবে? নিজের হীনম্মন্যতা পথকুকুরদের উপরেও দেখাতে হবে! চালক তো বটেই, যে পুলিশ এমন বলেছেন তাঁরও কড়া শাস্তি চাই।” তৃণমূল বিধায়ক তথা পশু অধিকার রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম দেবশ্রী রায় বলেন, “এই পরিস্থিতিতেও যাঁরা প্রাণীগুলোর সেবা করছেন, তাঁদের সঙ্গে এই দুর্ব্যবহার! এঁরা কেমন মানুষ? শুধু মানুষ বাঁচবে আর কেউ নয়, এই ভাবনা থেকে না সরলে সব শেষ হয়ে যাবে।”
নিউ মার্কেট থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক বলেন, “ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ময়না-তদন্তও হয়েছে। দ্রুত চার্জশিটও দিয়ে দেওয়া হবে।”