প্রতীকী ছবি
প্রথম দফার ২১ দিন পার করে শুরু হয়ে গিয়েছে দ্বিতীয় দফার লকডাউন। তবু শহরের ওষুধের দোকানগুলিতে জরুরি ওষুধ বা স্যানিটাইজ়ার এখনও সহজলভ্য নয় বলে অভিযোগ। বুধবার দিনভর ঘুরে দেখা গেল, ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে লম্বা লাইন পেরিয়ে ওষুধের দোকানের গেট পর্যন্ত পৌঁছতে পারলেও অনেককেই ফিরে যেতে হচ্ছে খালি হাতে। ওষুধের পাশাপাশি বেশির ভাগ জায়গাতেই নেই বাড়ি-ঘর বা নিজেকে সাফসুতরো রাখার সামগ্রী। এর মধ্যেই জরুরি ওষুধ নেই জানিয়ে দেওয়া দোকান আবার নির্দিষ্ট দামের ওষুধ কিনলে ক্রেতাদের ‘উপহার’ দিচ্ছে হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার!
করোনা সংক্রমণের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ের সময়েও জরুরি ওষুধ বা স্যানিটাইজ়ার পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা মিটছে না কেন? শহরের ওষুধ ব্যবসায়ীদের বড় অংশেরই দাবি, অন্য জিনিসের মতোই করোনা-আতঙ্কে ওষুধও ‘স্টক’ করে রেখেছেন অনেকে। তাই হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে জোগান দিতে গিয়ে। শহরের একটি ওষুধ বিপণি চেনের মালিক রাজেন্দ্র খান্ডেলওয়াল বললেন, ‘‘প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ ওষুধ যাঁদের লাগে, তাঁরা এমনিতে খুব বেশি হলে দু’-তিন মাসের ওষুধ তুলে রাখেন। কিন্তু গত মার্চের শুরুতেই হঠাৎ করে তাঁরা পাঁচ-ছ’মাসের জন্য ওষুধ তুলতে শুরু করেন। তবু সামাল দেওয়া যাচ্ছিল। লকডাউনের প্রথম সপ্তাহেই এই বাড়তি ওষুধ তুলে রাখার প্রবণতা বহু লোকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।’’
শহরের আর একটি ওষুধ বিপণি চেনের শ্যামবাজার স্টোরের ম্যানেজার বিশ্বজিৎ ঘোষ আবার জানালেন, ছোট ব্যবসায়ীরা এখন সব চেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন। এই সময়ে ধার-বাকিতে ওষুধ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে প্রায় সব সংস্থা এবং ডিস্ট্রিবিউটর। ফলে স্বাভাবিক জোগান কিছুতেই ফিরছে না। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমরা প্রতিদিন দোকান খোলা রেখে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছি। বহু ডিস্ট্রিবিউটর সংস্থা তো কর্মী নেই বলে অর্ডারই নিচ্ছে না।’’
আরও পড়ুন: করোনার ভয়ে দু’দিন পার্কে রাখা হল যুবককে
এ দিন দুপুরেই এসএসকেএম হাসপাতালের সামনে এক ওষুধের দোকানে দেখা গেল, ক্রেতাদের লম্বা লাইন। দোকানের কর্মীরা মাস্কে ঢাকা মুখ বার করে সকলকে আশ্বস্ত করে বলে চলেছেন, ওষুধের গাড়ি আসছে। আর কিছু ক্ষণ! কয়েক মিনিট পরে সেই দোকানের সামনেই থামল একটি অ্যাম্বুল্যান্স। তা থেকেই বার করে আনা শুরু হল একের পর এক ওষুধের বাক্স। দোকানের ম্যানেজার বিশ্বজিৎ কর্মকার বললেন, ‘‘ডিস্ট্রিবিউটরেরা ওষুধ পৌঁছে দিতে পারবে না বলে দিয়েছে। ওদের নাকি লোক নেই। এ দিকে, দোকানের বাইরে এত লোকের লাইন। আমাদের একটা অ্যাম্বুল্যান্স আছে। সেটা নিয়েই ওষুধ আনতে চলে গিয়েছিলাম।’’ এসএসকেএম চত্বরেরই আর একটি ওষুধের দোকানের সামনের লাইন থেকে এক যুবক চেঁচাতে শুরু করলেন, ‘‘আগে থেকে বলে দিচ্ছি, স্যানিটাইজ়ার আছে তো? সকাল থেকে ঘুরছি। থাকলে তবেই লাইনে দাঁড়াব।’’ যা চাওয়া হচ্ছে, তা নেই জানিয়ে দেওয়ার পরে হাতে ধরা প্লাস্টিকের বোতল দেখিয়ে যুবক বললেন, ‘‘এ নিয়ে পাঁচটা দোকান ঘুরলাম। বোতলটা নিয়ে এসেছিলাম স্যানিটাইজ়ার ভরে নিয়ে যাব বলে। আজ আর মনে হয় না পাওয়া যাবে।’’
দক্ষিণ কলকাতার হাজরা মোড়, যাদবপুর, গাঙ্গুলিবাগান এলাকার বেশ কয়েকটি ওষুধের দোকান ঘুরে আবার দেখা গেল, জরুরি ওষুধের পাশাপাশি ডেটল, ফিনাইল নিয়েও চলছে প্রবল হাহাকার। একই চিত্র পূর্ব কলকাতার বেলেঘাটা, ফুলবাগান, কাঁকুড়গাছি মোড়-সহ উত্তর কলকাতারও একাধিক জায়গায়। তবে শ্যামবাজার মোড়ের কাছে একটি ওষুধের দোকানে ওই সব জিনিস মিলছে বলে জানালেন সেখানকার এক কর্মী। নারায়ণ শীল নামে ওই যুবকের সারা শরীর সাদা পিপিই-তে ঢাকা। কোনও মতে মাস্ক টেনে ঠিক করে নিয়ে ভিড় সামলাতে ব্যস্ত নারায়ণ বললেন, ‘‘আমাদের সংস্থা থেকে সব স্টোরে দু’টি করে পিপিই কিট দিয়েছে। বাইরে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের জন্য। এত লোকের লাইন। যে ওষুধ নেই, এই পিপিই পরে বেরিয়ে তা বলে দিচ্ছি। অকারণ লাইনে দাঁড় করিয়ে লাভ কী!’’
আরও পড়ুন: ভাড়া বাড়ি ছাড়তে হল বিদ্যুৎ সংস্থার কর্মীকে
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)