অমান্য: দূরত্ব-বিধি মেনে চলতে আঁকা রয়েছে গণ্ডি। তবু তা ডিঙিয়েই বৌবাজারে চলছে অবাধে বেচাকেনা। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুমন বল্লভ
পুলিশ-প্রশাসন তো বটেই, খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও রাস্তায় নেমে লকডাউন মেনে চলার আর্জি জানাচ্ছেন। কিন্তু সবাই তাতে কান দিচ্ছেন কি? গত এক মাসের ধারাবাহিক চিত্র বলছে, কোনও কোনও অঞ্চলে গোড়া থেকেই লকডাউনে সাড়া মিলেছিল। তবে এক মাস পেরিয়েও সার্বিক সাড়া কিন্তু মিলছে না!
লালবাজারের তথ্য বলছে, গত এক মাস ধরে প্রায় প্রতিদিনই লকডাউন ভাঙার অভিযোগে গড়ে ৫০০ জন করে গ্রেফতার হয়েছেন। হাওড়াতেও দিন দশেক আগে পরিস্থিতি অন্য রকম ছিল। শহরতলির বহু জায়গাতেই সে ভাবে লকডাউন মেনে চলতে দেখা যায়নি নাগরিকদের।
কলকাতায় গোড়া থেকেই রাজাবাজার, বেনিয়াপুকুর, নারকেলডাঙা, কবরডাঙা, হরিদেবপুরের পাশাপাশি বন্দর এলাকার মেটিয়াবুরুজ, গার্ডেনরিচে লকডাউন সে ভাবে মানা হচ্ছিল না। হাওড়ার পিলখানা-সহ বহু এলাকাতেও একই ছবি। দমদম ক্যান্টনমেন্ট, দুর্গানগরের বহু জায়গাতেও পথেঘাটে অকারণে লোকজনকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছে। বারাসতের কিছু কিছু এলাকাতেও গা-ছাড়া মনোভাব ছিল বাসিন্দাদের। আবার ভিন্ন ছবিও রয়েছে। পুলিশ সূত্রের দাবি, ভবানীপুর, টালিগঞ্জের বহু এলাকায় গোড়া থেকেই লকডাউন মানা হয়েছে। আজাদগড়, লায়েলকা বাজারের বিক্রেতারাও ভিড় জমলে আনাজ বা মাছ বিক্রি করতে চাইছেন না। উত্তর শহরতলির নিউ ব্যারাকপুরেও পথেঘাটে বা বাজারে লকডাউন পর্বের শুরু থেকেই ভিড় নিয়ন্ত্রিত ছিল।
আরও পড়ুন: মানিকতলা দমকল কেন্দ্রের ৩২ জন গৃহ পর্যবেক্ষণে
কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, এই মহানগরে লকডাউন ঠিক মতো বলবৎ করতে হলে শুধু নাগরিক সচেতনতার উপরে ভরসা রাখলে চলবে না। পুলিশ-প্রশাসনের কড়াকড়িও প্রয়োজন। যার অন্যতম উদাহরণ হাওড়া। সেখানে পুলিশি কড়াকড়ি শুরু হতেই পথঘাটের ছবি বদলে গিয়েছে। মধ্য কলকাতার কলুটোলাতেও পুলিশের ‘ধমকে’ ঘরে সেঁধিয়েছেন এলাকার অনেক পরিচিত ‘আড্ডাবাজ’। এন্টালির মতিঝিলের ‘বেপরোয়া’ তরুণেরাও স্থানীয় থানার বড়বাবুর ভয়ে পথেঘাটে বেরোচ্ছেন না। বিভিন্ন এলাকা ‘কনটেনমেন্ট জ়োন’ হিসেবে চিহ্নিত করে কড়াকড়ির পরে বারাসত, মধ্যমগ্রাম এবং কলকাতার কিছু অংশে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে শহরতলিতে তার মধ্যেও লোকজন ছুতোনাতায় এলাকা থেকে বেরিয়ে পড়ছেন। সূত্রের খবর, একটু ‘টাটকা’ মাছ-আনাজ কেনার অজুহাতে নিজের এলাকা ছেড়ে পড়শি এলাকায় যাওয়ার উদাহরণও কম নেই!
সব চেয়ে বেশি অভিযোগ উঠেছিল শহরের বিভিন্ন বাজারের ভিড় নিয়ে। পুলিশ কড়া হতেই অবশ্য ছবিটা বদলাচ্ছে। যেমন, কালীঘাটের তিনটি বাজার থেকে বারবার অভিযোগ আসছিল, সেখানে সামাজিক দূরত্ব-বিধি মানা হচ্ছে না। ওই থানার ওসি কড়া হতেই ভিড় উধাও। এখন প্রতিদিন ওই সমস্ত বাজারে একসঙ্গে পাঁচ-সাত জনের বেশি লোক ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে দেখে ভিড় উধাও। আবার যদুবাবুর বাজারের সামনের ফুটপাতে হকারদের এক দিন অন্তর বসার নির্দেশ দিতেই ভিড় কমেছে সেখানে।
প্রশ্ন উঠেছে, লকডাউনের কড়াকড়ির ছবি সর্বত্র দেখা যাচ্ছে না কেন? পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, সব জায়গায় একই ধরনের কড়াকড়ি করার ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। কিছু এলাকা ‘বিশেষ ভাবে সংবেদনশীল’ বলে পরিচিত। সেখানে পুলিশ অনেক কিছুই ‘স্বাধীন’ ভাবে করতে পারে না। এক পুলিশকর্তার বক্তব্য, ‘‘অনেক সময়েই মেপে পা ফেলতে হচ্ছে। তাতে সমস্যাও তৈরি হচ্ছে। তবু আমরা চেষ্টা করছি নিয়ন্ত্রণের।’’ রাজাবাজারে শেষমেশ বড় রাস্তা থেকে ভিড় হটানো গেলেও অলিগলিতে জমায়েত হচ্ছেই। কিছু কিছু এলাকায় বাজার বসলেই অনাবশ্যক ভিড় তৈরি হচ্ছে। পুলিশের একটি সূত্রের খবর, লকডাউন-পর্বে বিশেষ প্রয়োজনে গাড়ির ‘পাস’ দিয়েছিল লালবাজার। সূত্রের দাবি, মেয়াদ ফুরনোর পরে সেই পাস জাল করে কেউ ব্যবহার করছেন কি না, তার উপরেও নজরদারি রয়েছে। থানা এবং ট্র্যাফিকের পাশাপাশি তাই গোয়েন্দা বিভাগের তিনটি দলকেও পথে নামিয়েছে লালবাজার।
প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশি নজরদারি তো রয়েছে। কিন্তু নাগরিকদের কি কোনও দায় নেই? প্রশাসন এবং চিকিৎসকেরা বারবারই বলছেন, সংক্রমণ ছড়ালে ভুগতে হবে নিজেদেরই। সে কথা কানে তুলছেন না অনেকেই। কেন?
প্রশ্নটি সহজ হলেও উত্তরটা ‘অজানা’ই!
আরও পড়ুন: আতঙ্কে পাল্টে যাচ্ছে চেনা পড়শির আচরণ
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)