Coronavirus

ত্রাণের হাত ধরে বিপদ বাড়াচ্ছে সেই প্লাস্টিক

পরিবেশ দফতরের নিয়ম অনুযায়ী, জিনিস দেওয়ার জন্য ৫০ মাইক্রন বা তার বেশি পুরু প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ অথবা চটের ব্যাগ একমাত্র বিকল্প হতে পারে।

Advertisement

কৌশিক ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২০ ০৩:২৭
Share:

প্রত্যাবর্তন: ত্রাণ বিলির জন্য ফের ব্যবহার বেড়েছে প্লাস্টিকের। লেক গার্ডেন্সে। নিজস্ব চিত্র

লকডাউনে পরিযায়ী শ্রমিক এবং গরিব মানুষদের নিয়মিত ভাবে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই ত্রাণের হাত ধরে আবার মাথাচাড়া দিয়েছে পুরনো বিপদ— প্লাস্টিক। শুধু বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির তরফেই নয়, সরকারের খাদ্য বিতরণ কর্মসূচিতেও দেদার প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে। কলকাতা-সহ বহু জায়গায় যখন প্লাস্টিক ব্যবহারে ইতিমধ্যেই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন, তখন নিয়ম বহির্ভূত ভাবে যথেচ্ছ প্লাস্টিকের ব্যবহার কপালে ভাঁজ ফেলেছে প্রশাসনের কর্তাদের।

Advertisement

রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ‘‘আপৎকালীন পরিস্থিতিতে রাজ্যে প্রচুর মানুষকে ত্রাণ দিতে হচ্ছে। এই ত্রাণ বিলির জন্য ক্যারিব্যাগ প্রয়োজন। পরিবেশ দফতর যে নির্দিষ্ট মাপের ক্যারিব্যাগ ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিল, অধিকাংশ জায়গায় তা মানা সম্ভব হচ্ছে না।’’ তবে তিনি জানান, লকডাউন উঠে গেলে রাজ্য সরকার আগের নিয়মেই প্লাস্টিক ব্যবহারে কড়াকড়ি করবে।

পরিবেশ দফতরের নিয়ম অনুযায়ী, জিনিস দেওয়ার জন্য ৫০ মাইক্রন বা তার বেশি পুরু প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ অথবা চটের ব্যাগ একমাত্র বিকল্প হতে পারে। কিন্তু লকডাউনের পরিপ্রেক্ষিতে যত মানুষকে ত্রাণ দিতে হচ্ছে, সেই পরিমাণ চটের ব্যাগ বা নির্দিষ্ট মাপের প্লাস্টিক ব্যাগের অভাব রয়েছে। ফলে, অনেকটা বাধ্য হয়েই পুরনো মাপের প্লাস্টিক ব্যাগই বাছতে হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন প্রশাসনিক আধিকারিকদের একাংশ।

Advertisement

আরও পড়ুন: কলকাতায় ত্রস্ত পুলিশও, সুরক্ষায় জারি নতুন নির্দেশিকা

কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) স্বপন সমাদ্দার বলেন, ‘‘করোনার জন্য মানুষের পাশে দাঁড়ানো অত্যন্ত জরুরি।

সেটিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এটাও ঠিক, পরিবেশ দফতরের বিধি অনুযায়ী যে মাপের প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার করা উচিত তা হচ্ছে না। যত্রতত্র না-ফেলে কী ভাবে ওই প্লাস্টিক সরানো যায়, তা দেখা হচ্ছে। আর বিকল্প কোনও সংস্থানও এখন নেই।’’ মেয়র পারিষদ জানান, হঠাৎ লকডাউন ঘোষণা হওয়ার ফলে ত্রাণের জন্য অনেকে প্রস্তুতও ছিলেন না। যাঁদের কাছে চট বা পুরু প্লাস্টিকের ব্যাগ ছিল, তাঁরা তা ব্যবহার করেছেন। তবে সেই সংখ্যা কম বলেই তাঁর দাবি।

পরিবেশ দফতরের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, শহরের নিকাশির সব চেয়ে বড় শত্রু হল প্লাস্টিক। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘এখন যা পরিস্থিতি, ওই ব্যাগ বন্ধ করলে ত্রাণ দেওয়াই সম্ভব হবে না। তা ছাড়া কোনও বিকল্পও এই মুহূর্তে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক যত্রতত্র না-ছড়িয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেললে সেখান থেকে তা তুলে নিয়ে যাওয়া সহজ। এতে দূষণের আশঙ্কা অনেক কমে।’’

কলকাতা পুরসভা প্লাস্টিক বন্ধের নোটিস দিলেও সর্বত্র একই ছবি। ১০ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘আমার বরোর অনেক ওয়ার্ডেই প্লাস্টিক বন্ধ করে দেওয়ার নোটিস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু করোনার সময়ে ত্রাণ দিতে গিয়ে সেই নির্দেশ কার্যত জলাঞ্জলি দিতে হয়েছে। পরে অবশ্যই নিয়ম মানা হবে।’’ একই কথা বলেছেন ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত। তাঁর কথায়, ‘‘চিরাচরিত প্লাস্টিক ব্যাগের বিকল্প কিছু না-পাওয়ায় আমরা কার্যত অসহায়।’’ ১১১ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর সিপিএমের চয়ন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘অন্য কোনও ব্যাগ খোঁজা হলেও পাওয়া যায়নি।’’ আর ৮৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর সুব্রত ঘোষ বলছেন, ‘‘মানুষকে তো আর না-খাইয়ে রাখা যায় না। পুরনো ফিনফিনে ব্যাগ ব্যবহার করেই তাই ত্রাণ পৌঁছে দিতে হচ্ছে।’’

আরও পড়ুন: বইয়ের দোকান খোলার দাবি

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement