কর্মরত: পাম্প হাউসে মঙ্গল মাকাল। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
এলাকার কয়েকটি ওয়ার্ডের ঘরে ঘরে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার গুরুদায়িত্ব তাঁর কাঁধে। কিন্তু লকডাউনে ট্রেন, অটো, বাস— সব গণ পরিবহণ বন্ধ। বিধাননগর রোড স্টেশন থেকে ট্রেনে অফিস যাওয়ার উপায় নেই। আবার রোজ গাড়ি ভাড়া করে অফিস
যাওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্যও নেই তাঁর। কিন্তু দায়িত্ব থেকে যে পিছিয়ে এলে চলবে না। সে কারণে প্রতিদিন সল্টলেক থেকে দক্ষিণ দমদম পুরসভার সুকান্তপল্লির অফিস পর্যন্ত হেঁটেই যাতায়াত করছেন ওই পুরসভার পাম্প অফিসের কর্মী মঙ্গল মাকাল। লকডাউন শুরুর পরে রোজ দু’ঘণ্টা থেকে আড়াই ঘণ্টা হাঁটায় এখন অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন তিনি। হাসিমুখে বললেন, ‘‘শিফটিং ডিউটিতে আমি একা। না গেলে চলবে কী করে? তাই হেঁটেই অফিসে যাতায়াত করছি।’’
রোজ সকাল সকাল সল্টলেকের ডিএ ব্লকের বাড়ি থেকে বেরিয়ে হাঁটা শুরু করেন বছর পঞ্চাশের মঙ্গল। সল্টলেক থেকে উল্টোডাঙা এসে গোলাঘাটা হয়ে প্রথমে পাতিপুকুর। সেখান থেকে হাঁটতে থাকেন বাগজোলা খাল বরাবর। বেশ কিছুটা হেঁটে গলির রাস্তা ধরে পৌঁছন দক্ষিণ দমদমের এক নম্বর ওয়ার্ডে সুকান্তপল্লির অফিসে। ফেরার সময়েও একই পথ। মঙ্গল বলেন, ‘‘দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা লাগে বলে সকালে সাড়ে সাতটা থেকে আটটার মধ্যে বেরিয়ে পড়ি। কারণ, অফিসে দশটার মধ্যে ঢুকতেই হয়। সন্ধ্যা ছ’টায় ছুটি হলে বাড়ি ফিরতে ফিরতে সাড়ে আটটা থেকে ন’টা।’’ তিনি জানান, তাঁর কাছে পরিচয়পত্র থাকায় রাস্তায় কখনও সখনও পুলিশ ধরলেও অসুবিধায় পড়তে হয়নি।
আরও পড়ুন: বাজারে ভিড় কমাতে তৎপর পুলিশ
মঙ্গল আরও জানালেন, রোজ এতটা হেঁটে পাম্প হাউসে পৌঁছে ক্লান্ত হয়ে যান তিনি। কিছু ক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে লেগে পড়েন কাজে। সকালে ১১টা থেকে ১টা এবং বিকেলে চারটে থেকে ছ’টা— দু’বার পাম্প চালাতে হয় তাঁকে। তিনি পাম্প চালালে তবেই পুরসভার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের ঘরে ঘরে পানীয় জল পৌঁছয়। বিনয়ী মঙ্গল বলেন, ‘‘আমি পাম্প না চালালে হয়তো অন্য কেউ চালিয়ে দেবেন। ঘরে ঘরে জল ঠিকই পৌঁছে যাবে। কিন্তু আমি সব সময়ে চেষ্টা করি নিজের কাজ নিজে করতে। তাই রোজ নিজেই পাম্প চালাই।’’
রোজ কয়েক ঘণ্টা হেঁটে মঙ্গলের অফিস করতে আসার কথা জানেন সুকান্তপল্লির অনেকেই। তাঁরা জানাচ্ছেন, লকডাউনের মধ্যে ছুটির দিন বাদে প্রতিদিনই তাঁরা মঙ্গলকে কাজে আসতে দেখেছেন। কেউ কেউ তাঁকে বলেছিলেন সাইকেল নিয়ে আসার জন্য। তবে মঙ্গল জানিয়েছেন, তিনি সাইকেল চালাতে জানেন না।
বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী, ছেলে। তাঁরা আপত্তি করেননি? মঙ্গল জানালেন, প্রথম দিকে আপত্তি করলেও এখন দু’জনেই বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘লকডাউনে কত মানুষ কষ্টে আছেন। কত শ্রমিক মাইলের পর মাইল হেঁটে বাড়ি পৌঁছচ্ছেন। আমাকে তো এত কষ্ট করতে হচ্ছে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার তো ট্রেনেই অফিস যাব।’’
তাঁকে বাড়ি থেকে নিয়ে আসার জন্য পুর কর্তৃপক্ষ কোনও গাড়ির ব্যবস্থা করেননি বলে আফশোস নেই বছর পঞ্চাশের ওই কর্মীর। হেসে বলেন, ‘‘বাস-অটো যখন বন্ধ, তখন নিজের পা থাকতে আবার গাড়ি কেন?’’ দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান অবশ্য বলেছেন, ‘‘পুরসভায় যাঁরা জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের বাড়ি থেকে গাড়ি করে কাজের জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা আছে।’’
আরও পড়ুন: বিশ্ব জুড়ে বাতিল হচ্ছে উৎসব, পুজোতেও বিকল্পের খোঁজ
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)