Coronavirus

বিশ্ব জুড়ে বাতিল হচ্ছে উৎসব, পুজোতেও বিকল্পের খোঁজ

শুধু তো কারিগর-শিল্পী নয়, পুজো বন্ধ হলে বড় নেতাদেরও মাথায় হাত পড়বে।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২০ ০১:৫২
Share:

ভিড়: দক্ষিণ কলকাতার একটি পুজো মণ্ডপে দর্শনার্থীর ঢল। এ বছর করোনার কারণে এই দৃশ্যের দেখা মিলবে কি না, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। ফাইল চিত্র

অলিম্পিক গেমস থেকে বিশ্বকাপ ফুটবলও বাতিল হওয়ার ইতিহাস রয়েছে বিশ্বযুদ্ধের জেরে। কিন্তু বারোয়ারি দুর্গাপুজোর শতাধিক বছরে কোনও থেমে যাওয়ার নজির নেই। বঙ্গজীবনের এই পরম্পরাতেও এ বার হয়তো ছেদ পড়তে পারে। অন্তত সেটা মাথায় রেখেই চলছে বিকল্প পথের খোঁজ।

Advertisement

সাধারণত পুজো শেষ না-হতেই পরের বারের জন্য শিল্পীকে অগ্রিম ধরিয়ে দেয় বড়-মেজ থিম পুজোগুলো। পয়লা বৈশাখেই কেউ কেউ শুরু করে দেন কাজ। লকডাউনের ধাক্কায় এ বার সবই টালমাটাল। উল্টে বিশ্ব-পরিস্থিতি রীতিমতো কু-ডাক শোনাচ্ছে। ২০২০-র বাতিল টোকিয়ো অলিম্পিক্স ২০২১-এও হবে কি না সন্দেহ! অগস্টে স্পেনের লা টোমাটিনা উৎসব বাতিল। জুনে সমারসেটের গ্লাস্টনবেরি মিউজ়িক ফেস্টিভ্যালের নামগন্ধ নেই। এমনকি, দুর্গাপুজোর ঠিক আগে মিউনিখের জমজমাট অক্টোবরফেস্টও এ বছর পাততাড়ি গোটানোর কথা ঘোষণা করেছে। ২৩ জুন পুরীর রথযাত্রা ঘিরেও বড় প্রশ্নচিহ্ন। ১৯৪৩-এর মন্বন্তরের বছরেও বাংলায় বহুল প্রচলিত দুর্গাপুজো বন্ধ হয়েছিল এমন তথ্য নেই। কিন্তু এ বার অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। ছোঁয়াচে ভাইরাসের সামনে অসহায় মানুষের হাতে দাওয়াই বলতে শুধুই পারস্পরিক বা সামাজিক দূরত্ব। আর পুজো মানেই সামাজিক মেলবন্ধন বা মিলনমেলা। করোনার প্রকোপ জারি থাকলে পুজো হওয়া অসম্ভব তা এখন অনেকেই বুঝছেন।

দুর্গাপুজোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে যুক্ত মেলা ও উৎসব সংক্রান্ত উপদেষ্টা ধ্রুবজ্যোতি বসুর কথায়, “নমো-নমো করে মায়ের পুজো হলেই এ যুগে আর পুজো হচ্ছে বলা যায় না। পুজো ঘিরে ৫০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। অজস্র প্রান্তিক মানুষের রুটিরুজি জোগায় পুজো। পুজো বন্ধ হলে এই মানুষগুলোর প্রায় বিসর্জনের অবস্থা হবে।” হেদুয়ার একটি পুজোকর্তা সোমেন দত্তের ফোন ঘনঘন বাজছে। ও-পারে মেদিনীপুরের ঢাকি-কারিগরেরা। কাতর আর্জি, দাদা কাজটা কিন্তু বন্ধ কোরো না! নন্দীগ্রামের শিল্পী-কারিগরেদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছে টালায় শহরের বিগ বাজেট পুজো। বনগাঁয় ডেকরেটরের লোকেদের আশ্বাস দিয়েছে নাকতলার বড় পুজো। কলকাতার ৩০০০ পুজোর ৩৫০টি সর্বজনীনের সম্মিলিত মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য পার্থ ঘোষ বলছেন, “পুজো বন্ধ হবে, এখনই এমনটা ভাবছি না। তবে পুজোর সঙ্গে যুক্ত অজস্র ডেকরেটর-শিল্পী-কারিগরেদের পাশে দাঁড়ানোর একটা রাস্তা সবাই মিলে খুঁজতেই হবে।”

Advertisement

আরও পড়ুন: স্টেশনে পড়ে দগ্ধ যুবক, উদ্ধার

শুধু তো কারিগর-শিল্পী নয়, পুজো বন্ধ হলে বড় নেতাদেরও মাথায় হাত পড়বে। অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়ম, পুজোর জাঁকজমকের জোরেই নেতাদের অনেকের সারা বছরের জনসংযোগ, রং-বেরঙের ইভেন্টের পুঁজি। লেক টাউনে শহরের সব থেকে বড় বাজেটের পুজো কর্তা, মন্ত্রী সুজিত বসু অবশ্য সঙ্কটে ভাঙছেন না। বলছেন, “আমরা থিম পুজো করি না। নিয়মমাফিক পয়লা বৈশাখে ঠাকুরের বায়না সেরে রেখেছি। স্পনসরের অবস্থা বুঝে পরে শেষ মুহূর্তে চমকের ব্যবস্থা হবে।” ইতিমধ্যেই দেশপ্রিয় পার্কের কাছে বড় পুজোর পয়লা বৈশাখ, পঁচিশে বৈশাখের অনুষ্ঠান বিশ বাঁও জলে। অনেক পুজোর রক্তদান-শিবির বানচাল হয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি হলেও কর্পোরেট স্পনসরশিপ বা পৃষ্ঠপোষকতা যে কম করে ৪০-৬০ শতাংশ ধাক্কা খাবে, তা ঠারেঠোরে মানছেন সকলেই। দক্ষিণ কলকাতার বড় পুজোর কর্তা, শাসক দলের দেবাশিস কুমার তবু বলছেন, “মা যেমন চাইবেন, পুজো তেমনই হবে।” নিউ আলিপুরের নামী পুজোর সর্বেসর্বা, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস অবশ্য বাস্তববাদী, “আমাদের পুজোর এত দিনের পরিকল্পনা জলে গেলেও এ বার ছোট করেই পুজো করব। এটাই রাস্তা।”

তবে কর্পোরেট পুঁজি না-থাকলে দুর্গাপুজো ফের চাঁদার পথে হাঁটবে, তা মনে করছেন না পুজো উদ্যোক্তারা। কেউ কেউ খুশি, অনাবশ্যক আড়ম্বর বন্ধ হলে ভালই হবে। প্রবীণ মন্ত্রী, পুজোকর্তা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “পাড়ার লোকের সাধ্য ও পরিস্থিতি অনুযায়ী পুজো হবে।” বাগবাজারে শতাব্দীপ্রাচীন সাবেক পুজোর কর্তা অভয় ভট্টাচার্যের মতে, “পুজোর একটা তহবিল আমাদের থাকলেও মহামারি-অতিমারির রেড জ়োনে সে-ভাবে পুজো করা সম্ভব নয়।”

মহিষ থেকে করোনাসুরে বদলে গিয়েছে অসুর। তাকে হারাতে সদ্য একটি ভিডিয়ো-বার্তায় একজোট হয়েছিলেন পুজোকর্তারা। আগের মতো পুজো হবে বলেই তাতে আশাবাদের ধ্বনি। পঞ্জিকা মতে মায়ের আগমন এ বার দোলায়। তা শুভ না-হলেও তাঁর গজে গমন। পরিণাম, শস্যপূর্ণ বসুন্ধরা। বাস্তবের মাটি কঠিন। তবু মাকে ঘিরেই আশায় বুক বাঁধছেন পুজো-পাগলেরা।

আরও পড়ুন: বড় মেয়েকে অত্যাচার, অভিযুক্ত মা

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement