Coronavirus

তালাবন্দি শহরে চাবি ঘোরার অপেক্ষায় বন্ধ ঘড়ি

যুগের পর যুগ সরকারি অফিস থেকে শুরু করে গির্জার ‘বয়স্ক’ ঘড়ি, রাস্তায় বেরোনো শহরবাসীকে সময় জানিয়ে এসেছে।

Advertisement

কৌশিক ঘোষ

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২০ ০২:৫৯
Share:

থমকে: জিপিও-র ঘড়ি। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

যখন সময় থমকে দাঁড়ায়!

Advertisement

বি বা দী বাগে জিপিও-র ঘড়ির দিকে তাকিয়ে হাতঘড়ি এখন আর কেউ মেলাচ্ছেন না। ট্রেন বন্ধ। তাই বিখ্যাত বড় ঘড়িটির দিকে তাকিয়ে অফিসপাড়ামুখী যাত্রীর ভিড় নেই হাওড়া স্টেশনেও। রুদ্ধ জনজীবনের অংশ হয়ে ঘড়িবাবুরাও ঘরবন্দি। যাঁরা নির্ধারিত সময়ে দম দিয়ে চালু রাখেন শহরের রাস্তার ছোটবড় বিভিন্ন ঘড়ি। তাই লকডাউনের শহরে দম না পেয়ে বেশির ভাগ ক্লক টাওয়ারের ঘড়িতে সময়ের কাঁটাও আটকে পড়েছে।

যুগের পর যুগ সরকারি অফিস থেকে শুরু করে গির্জার ‘বয়স্ক’ ঘড়ি, রাস্তায় বেরোনো শহরবাসীকে সময় জানিয়ে এসেছে। উন্নত তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগেও জিপিও, কলকাতা বন্দর, জোড়া গির্জা, ধর্মতলার মেট্রোপলিটন বিল্ডিং কিংবা মানিকতলা বাজারের ঘড়ি দেখে এখনও রাস্তায় বেরোনো বহু মানুষ সময়ের হিসেব করেন। কিন্তু চাবি না দেওয়ায় সেই সব ঘড়িই আজ বন্ধ।

Advertisement

বহু রহস্য উপন্যাসে বন্ধ ঘড়ির উল্লেখ পাওয়া যায়। ওই সব গল্পে দেখা গিয়েছে গোয়েন্দারা ঘড়ির কাঁটায় দেখানো শেষ সময় ধরে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। কলকাতা পুলিশের এক প্রাক্তন আধিকারিকের কথায়, ‘‘মৃতের হাতে যদি ঘড়ি থাকে, যদি সেটি বন্ধ হয়, তা থেকে কখনও কখনও খুনের সময়ের একটা আন্দাজ করা যায়। অবশ্য তার পরেও আরও অনেক তথ্য-প্রমাণ জোগাড়ের প্রয়োজন হয় অপরাধীকে চিহ্নিত করতে।’’ কোভিড নগরজীবনকে স্তব্ধ করেছে, সেই ‘মৃত্যু’র হিসেব লেখা রয়েছে থেমে যাওয়া ঘড়ির কাঁটায়।

আরও পড়ুন: ‘ক্যানসার রোগীর ঘরের বাইরেই খাবার রেখে দিচ্ছে পরিবার’

লকডাউন ঘোষণার পরে মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে শতায়ু ওই বৃদ্ধ ঘড়িগুলিতে আর দম দেওয়া সম্ভব হয়নি। তার ফলেই সেগুলি থেমে গিয়েছে, জানালেন স্বপন দত্ত। পাঁচ পুরুষ ধরে তাঁরাই শহরের বিভিন্ন ক্লক টাওয়ার-সহ বড় বড় ঘড়ির রক্ষণাবেক্ষণ করেন। তিনি বলেন, ‘‘শহরে একশো বছর কিংবা তার চেয়ে পুরনো টাওয়ারের যে সব ঘড়ি রয়েছে, সেগুলি কখনও সপ্তাহে এক বার বা এক বারের বেশি দম দিতে হয়। লকডাউনের ফলে গত এক মাস ঘড়িগুলিতে দম পড়েনি।’’

তিনি জানান, জোড়া গির্জার ঘড়ি (১৮৬৪) সপ্তাহে দু’বার দম দিতে হয়। জিপিওর ঘড়ি (১৯১০) এক দিন অন্তর দম দিতে হয়। কলকাতা বন্দর, মেট্রোপলিটন বিল্ডিং এবং মানিকতলা বাজারের একশো বছর বা তার বেশি বয়সের ঘড়িগুলিকে সপ্তাহে এক দিন দম দিতে হয়।

শহরে এই ধরনের ঘড়ি সম্বন্ধে ইতিহাসবিদ তথা অধ্যাপক সৌমিত্র শ্রীমানী বলেন, “ইউরোপবাসীদের হাত ধরেই কলকাতা শহরে ক্লক টাওয়ার বসে। সেখানে গির্জায় বা স্বতন্ত্র ক্লক টাওয়ার তৈরি করে ঘড়ি রাখা হত।’’

কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, লকডাউনের মধ্যেও দম দিয়ে ঘড়ি চালু রাখতে তাঁরা চেষ্টা করছেন। কিন্তু এখনও তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ভারতীয় ডাক বিভাগ জানিয়েছে, লকডাউনের জন্য দম না দেওয়ায় কলকাতা জিপিও-র ঘড়ি বন্ধ। লকডাউন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছুই করা সম্ভব নয়। মানিকতলা বাজারের অন্যতম শরিক মীরা নান বলেন, “লকডাউনের কারণে দম না দেওয়ায় ঘড়ি অচল হয়েই রয়েছে।” মেট্রোপলিটন বিল্ডিংয়ের ঘড়ির মালিক জীবন বিমা নিগম। সংস্থার তরফে রবীন্দ্রনাথ দত্ত বলেন, “বহু ঐতিহ্যমণ্ডিত আমাদের এই ঘড়ি শহরের অনেক ইতিহাসের সাক্ষী। একে বাঁচিয়ে রাখার গুরুদায়িত্ব সম্বন্ধে আমরা সচেতন। তবে লকডাউনে দম দেওয়ার সমস্যা হচ্ছে।”

জোড়া গির্জার ঘড়ি না চলায় একই রকম উদ্বিগ্ন সেখানকার কর্তৃপক্ষ। তাঁদের তরফে প্রীতম দে বলেন, “দেড়শো বছরেরও বেশি পুরোনো আমাদের এই ঘড়ি বন্ধ থাকায় আমরা চিন্তিত। লকডাউনের পরেই দম দিয়ে ঘড়ি চালু করার সমস্ত ব্যবস্থা হবে।”

আরও পড়ুন: সরকারি নির্দেশ, তবু রোগী ভর্তিতে দুর্ভোগ চলছে

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement