মেছুয়ার ফলপট্টিতে ভিড়। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
হাওড়ায় ফলপট্টির জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় কোনও পরিকাঠামো না-থাকায় সেখানে বাজার সরাতে আপত্তি জানালেন মেছুয়ার ফল বিক্রেতারা। তাঁদের অভিযোগ, কোনা ট্রাক টার্মিনাসের পিছনে যে জমিতে ফলপট্টি করার পরিকল্পনা করেছে রাজ্য, সেটি আগাছার জঙ্গলে ঢাকা নিচু জলাজমি। অস্থায়ী ভাবে সেখানে বসতে গেলেও একটি প্ল্যাটফর্ম-সহ মাথার উপরে ছাউনি থাকা প্রয়োজন। রাজ্য সরকার জানিয়ে দিয়েছে, ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ওই জায়গায় অস্থায়ী পরিকাঠামো তৈরি করে দেওয়া হবে।
করোনার সংক্রমণ এড়াতে জোড়াসাঁকোর ফলপট্টি কোনা ট্রাক টার্মিনাসের কাছে সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। সেই মতো রবিবার বিকেলে হাওড়ার জেলাশাসক এবং পুলিশ কমিশনার কোনা এক্সপ্রেসওয়ের খেজুরতলার পাশে ট্রাক টার্মিনাসের পিছনে ওই জায়গাটি প্রথমে ঘুরে দেখেন। এর পরে সোমবার বেলা ১১টা নাগাদ ওই জমি পরিদর্শনে আসেন কলকাতা পুলিশের কয়েক জন পদস্থ কর্তা-সহ হাওড়ার জেলাশাসক, পুলিশ কমিশনার এবং কেএমডিএ-র শীর্ষ কর্তারা। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন জোড়াসাঁকোর ফলপট্টি সংগঠনের নেতারা। ট্রাক টার্মিনাসের পিছনে এবড়োখেবড়ো কাঁচা রাস্তা আর আগাছায় ঢাকা নিচু জলাজমি দেখেই সংগঠনের তরফে আপত্তি জানানো হয়।
সংগঠনের সভাপতি মহম্মদ শরাফ বলেন, ‘‘আমাদের বাজারে প্রতিদিন ফল নিয়ে আসে ৫০টি ট্রাক। রমজানের সময়ে সেই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যায়। কোনার এই জায়গায় ট্রাক আসার পরে ছোট গাড়িতে করে কলকাতায় ফল নিয়ে যেতে হবে। এতে খরচ বাড়বে। তা ছাড়া এখানে ফলমান্ডি চালানোর মতো পরিকাঠামো নেই।’’
আরও পড়ুন: চপারের কোপ মেরে গয়না ছিনতাই যাত্রাশিল্পীর
বিক্রেতারা দাবি করেন, ফল রাখার জন্য মাথার উপরে ছাউনি প্রয়োজন। তা না-হলে ফল পচে যাবে। তা ছাড়া আর এক মাস পরেই বর্ষা আসছে। নিচু জমিতে জল জমবে। সেখানে প্ল্যাটফর্ম না করে দিলে দোকানদারি হবে কী করে?
এ দিন কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে জমি পরিদর্শনে এসেছিলেন অতিরিক্ত কমিশনার (৩) দেবেন্দ্রপ্রতাপ সিংহ, যুগ্ম কমিশনার (ট্র্যাফিক) সন্তোষ পাণ্ডে-সহ পুলিশের পদস্থ কর্তারা। ছিলেন হাওড়া সিটি পুলিশের কমিশনার কুণাল আগরওয়াল, জেলাশাসক মুক্তা আর্য এবং কেএমডিএ-র সিইও অন্তরা আচার্য। ফল বিক্রেতাদের আপত্তি শুনে অন্তরাদেবী বলেন, ‘‘অস্থায়ী ভাবে এখানে ফলপট্টি করার মতো পরিকাঠামো তৈরি করে দেওয়া হবে।’’ এর পরেই তিনি দফতরের অফিসারদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পরিকাঠামো তৈরি করতে নির্দেশ দেন।
কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের বোঝানোর চেষ্টা হয়, ফলপট্টি সরানোর সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারের। করোনার এই পরিস্থিতিতে কলকাতায় সংক্রমণ রুখতে ট্রাক ঢোকা বন্ধ করতেই হবে। কারণ, ভিন্ রাজ্য থেকে ট্রাক শহরে ঢুকলে সংক্রমণ আরও ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়বে।
যদিও প্রশাসনের এই যুক্তি মানতে রাজি নন ফলপট্টির ব্যবসায়ীরা। তাঁদের বক্তব্য, জোড়াসাঁকো এলাকায় এক জনেরও করোনা পজ়িটিভ হয়নি। বরং বড়বাজার-সহ আরও বহু বাজার এলাকায় করোনা ছেয়ে গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে ফলপট্টির পাশাপাশি সেগুলিকেও সরানো প্রয়োজন। কিন্তু তা করা হচ্ছে না। প্রায় নিমরাজি হওয়া ব্যবসায়ীরা জানিয়ে দেন, হাওড়ায় ফলপট্টি সরিয়ে আনলে পরিবহণ খরচ-সহ অন্য খরচ বাড়বে। তাই ফলের দামও বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে ফলপট্টির ৫০০ দোকানদার এবং শ্রমিকেরা কী ভাবে হাওড়ায় আসবেন, সেটাও রাজ্য সরকারকেই ভাবতে হবে।
আরও পড়ুন: কোয়রান্টিন কেন্দ্রে মিলছে জ্বর মাপার কাজ, অভিযোগ আয়ুষ চিকিৎসকদের
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)