Coronavirus Lockdown

নাচ-গান-আবৃত্তিতে অনলাইনেই রবীন্দ্র-স্মরণ, প্রস্তুতি বিশ্ব জুড়ে

নিয়ম মেনে ঘরে থেকেও বিশ্ব জুড়ে ২০২০ সালের রবীন্দ্র জন্মোৎসব তাই পালিত হতে চলেছে অনলাইনে।

Advertisement

জয়তী রাহা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২০ ০৩:০৬
Share:

জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে রবীন্দ্রজয়ন্তী। এ বার দেখা যাবে না এমন দৃশ্য। ফাইল চিত্র

‘আজ আমরা এডেন বলে এক জায়গায় পৌঁছব। অনেক দিন পরে ডাঙা পাওয়া যাবে। কিন্তু সেখানে নামতে পারব না, পাছে সেখান থেকে কোনও রকম ছোঁয়াচে ব্যামো নিয়ে আসি। এডেনে পৌঁছে জাহাজ বদল করতে হবে। সে একটা মহা হাঙ্গামা রয়েছে।’ — দ্বিতীয় বার বিলেত যাওয়ার পথে স্ত্রী মৃণালিনীকে লেখা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই চিঠির সময়কাল ১৮৯০ সালের অগস্ট। তখন বিশ্ব জুড়ে চলছে প্লেগের দৌরাত্ম্য। বিপুল ক্ষতি সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা সেই মহামারি থামিয়ে রাখতে পারেনি অনেকের মতোই কবির যাত্রাপথ। যেমন, আজও ঘরবন্দি মানুষকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি কোভিড-১৯।

Advertisement

নিয়ম মেনে ঘরে থেকেও বিশ্ব জুড়ে ২০২০ সালের রবীন্দ্র জন্মোৎসব তাই পালিত হতে চলেছে অনলাইনে। ফেসবুক আর ইউটিউবের মাধ্যমে যা পৌঁছে যাবে কয়েক কোটি মানুষের কাছে। আপাতত এ নিয়েই ব্যস্ত একাধিক অনুষ্ঠানের আয়োজকেরা।

অনেকের মতোই অনলাইনে রবীন্দ্রজয়ন্তীর আয়োজন করছেন নাট্য ব্যক্তিত্ব সৌমিত্র মিত্র এবং আবৃত্তি শিল্পী প্রণতি ঠাকুর। সাড়ে তিন ঘণ্টার সেই অনুষ্ঠানে ভারত এবং বাংলাদেশের ৭০ জন শিল্পী অংশ নিচ্ছেন। বিভিন্ন শিল্পীর রবীন্দ্রগান ও নাচের পাশাপাশি সেখানে থাকবে জয় গোস্বামীর আবৃত্তি। স্ত্রীকে রবীন্দ্রনাথের লেখা চিঠির অংশ পড়ে শোনাবেন দেবশঙ্কর হালদার। ৮ মে সকাল ৯টা থেকে অনলাইনে ‘আপন ঘরে রবিঠাকুর’ একই সঙ্গে দেখা যাবে শিল্পীদের ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউবে। এটিকে ‘ফেসবুক প্রেমিয়ার’ (রেকর্ড করা অনুষ্ঠানটি নির্দিষ্ট সময়ে শো-এর মতোই যাবে) বলছেন অনুষ্ঠানের টেকনিক্যাল সাপোর্ট টিমের সুপ্রভ ঠাকুর এবং ঋত্বিকা চৌধুরী। তাঁরা জানাচ্ছেন, শিল্পীরা নিজেদের বাড়ি থেকে গান, নাচ বা আবৃত্তি ভিডিয়ো রেকর্ড করে পাঠাচ্ছেন উদ্যোক্তাদের। সেই সব এক সূত্রে গাঁথা হবে।

Advertisement

রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীদের অনেকেই এ বার কবিপক্ষে অন্য ভাবে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাচ্ছেন। যেমন, শ্রীকান্ত আচার্য এবং জয়তী চক্রবর্তী। শ্রীকান্ত আচার্য যদিও শ্রোতাদের সামনে বসে গান গাইতেই বেশি স্বচ্ছন্দ, তবু করোনা হানায় ধ্বস্ত দুই শিল্পীর সঙ্গী যন্ত্রশিল্পীদের সাহায্য করতেই অনলাইন লাইভ অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন তাঁরা। ওয়েবিনারে রেজিস্ট্রেশন ফি দিয়ে ১৬ মে রাত সাড়ে ৮টা থেকে অনুষ্ঠানটি দেখা যাবে।

আগামী বছর ফেব্রুয়ারির ১৩ তারিখ রবীন্দ্রনাথের হিউস্টন যাত্রার শতবর্ষ। সেই স্মরণে শিল্পীরা মিলিত না-হলেও থেমে থাকবে না রবীন্দ্রজয়ন্তী। ৯ মে ভারতীয় সময় সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৯টা ভারত ও বাংলাদেশের শিল্পীদের নিয়ে লাইভ অনুষ্ঠান হবে ফেসবুকে ‘টেগোর সোসাইটি অব হিউস্টন’ (টিএসএইচ) পেজ থেকে। সন্ধ্যায় দেখা যাবে সোসাইটির শিল্পীদের অনুষ্ঠান, জানাচ্ছেন টিএসএইচ-এর সভাপতি গোপেন্দু চক্রবর্তী এবং উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানের ঐচ্ছিক দানের অর্থ ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোভিড তহবিলে দেওয়া হবে।

পিছিয়ে নেই লন্ডনও। দক্ষিণায়ন ইউ কে, টেগোরিয়ান, আনন্দম, উদীচী বাংলাদেশের মতো নিয়মিত সংস্কৃতিচর্চা করা সংস্থাগুলি অনলাইনে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করবে। ছ’বছর ধরে এসেক্সের বাসিন্দা, সঙ্গীত শিল্পী সোমা দাস তিনটি অনলাইন অনুষ্ঠান করছেন। সোমার মতে, “মঞ্চে গান গেয়ে যে তৃপ্তি হয়, আমি অন্তত সেটা পাচ্ছি না। এই মুহূর্তে অন্য উপায়ও তো নেই।”

শিল্পী প্রমিতা মল্লিকের আশঙ্কা, “আপাতত ঠিক আছে। কিন্তু এ ভাবে ফেসবুকে লাইভ অনুষ্ঠান দেখে মানুষের হলে গিয়ে শোনা বা দেখার অভ্যাস বন্ধ না হয়ে যায়। এক জন পেশাদার নতুন শিল্পীর কাছে দর্শকের মুখোমুখি হওয়া, পরিচিতি বাড়ানোটা জরুরি। সেটা যেন না-হারায়।” তবে এমন পরিস্থিতিতে অনলাইন অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের কাছে শিল্পীর আবেদন, “যদি রসিদ দেওয়ার শর্তে তাঁরা ঐচ্ছিক অনুদানের ব্যবস্থা রাখেন এবং সংগৃহীত অর্থ যোগ্য তহবিলে দেওয়া হয়, সেই ডাকে সাড়া দেব।” ৮ মে যে শিক্ষার্থীদের ক্লাস, তাঁদের নিয়েই অনলাইনে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেবেন তিনি।

সারা বিশ্বের ৩৩ জনকে অনলাইনে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করেছেন সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। কোভিড যুদ্ধে প্রথম সারির যোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানাতে তাঁদের নিয়ে ভিডিয়ো করে ইউটিউবে দিতে চলেছেন শিল্পী।

ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ থেকে বহু দূরে থাকা অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদারের কথায়, “কিছু অনলাইন অনুষ্ঠান করতে হচ্ছে। তবে শুধু আমার কাজটাই করছি। বাকিটা উতরে দিচ্ছে ছেলে-ভাইপো। তবে আমি সাবলীল সামনের কালো মাথার ভিড় আর দর্শকের নিঃশ্বাসের শব্দে। এক দিন নিশ্চয়ই শুনতে পারব। তত দিন না-হয় এমন চলুক।”

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement