প্রতীকী ছবি
লকডাউনে ঘরবন্দি মানুষ বহু ক্ষেত্রেই ডিজিটাল লেনদেনে সাবলীল হওয়ার চেষ্টা করছেন। অবসর যাপনেও বেড়েছে নেট-নির্ভরতা। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নেট দুনিয়ায় প্রতারণার ফাঁদ পাতছে সাইবার অপরাধীরা। কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম দফার লকডাউনেই এমন প্রতারণার হাজারেরও বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। গত এক সপ্তাহে অনলাইনে মদ ও মাস্ক বিক্রির নামে প্রতারণার সব চেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে সাইবার শাখায়।
পুলিশ জানাচ্ছে, গৃহবন্দি মানুষের অনেকের পক্ষেই জরুরি সামগ্রী বা ওষুধ হাতের কাছে পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সেগুলি দ্রুত বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার নাম করেই অনলাইনে প্রতারণা চক্র চালানো হচ্ছে। এই লকডাউন পরিস্থিতিতেই প্রথম অনলাইনে কেনাকাটায় সাবলীল হওয়ার চেষ্টা করছেন এমন লোকজনকেই প্রথম নিশানা করা হচ্ছে।
বিডন স্ট্রিটের তারক পাত্র পরিবারের সদস্যদের জন্য চেনা একটি ওয়েবসাইট থেকে ৫০টি সার্জিক্যাল মাস্ক নিতে অনলাইনে ৫০০ টাকা দামও দিয়েছিলেন। টাকা দেওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে পঁচিশ হাজার টাকা উধাও হয়ে যায়। এর পরে স্থানীয় থানা এবং পরে লালবাজার থেকে তিনি জানতে পারেন, ওয়েবসাইটটি আদতে ভুয়ো। আসল ওয়েবসাইটের নামে ইংরেজির ‘পি’ অক্ষরটি এক বারই রয়েছে। কিন্তু ভুয়ো ওয়েবসাইটে ‘পি’ অক্ষরটি দু’বার করে ব্যবহার করা হয়েছে। অর্ডার দেওয়ার সময়ে বিষয়টি লক্ষ করেননি তারকবাবু।
আরও পড়ুন: মেয়াদ শেষে কি ধাক্কা খাবে কাউন্সিলরদের উদ্যোগ
হরিশ মুখার্জি রোডের সাগ্নিক বন্দ্যোপাধ্যায় এই লকডাউনে বিদ্যুতের বিল মেটাতে চেষ্টা করেন ইউপিআই আইডি ব্যবহার করে। একটি ভুয়ো কিউআর কোড স্ক্যান করতে গিয়ে তিনি এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে গচ্ছিত ৬০ হাজার টাকা খুইয়েছেন।
ইন্ডিয়ান স্কুল অব এথিক্যাল হ্যাকিংয়ের অধিকর্তা সন্দীপ সেনগুপ্ত বলছেন, “একটা অক্ষর বাড়িয়ে, কমিয়ে, ভুয়ো ওয়েবসাইট তৈরি করে গোটা দেশ জুড়ে লুট চালানো হচ্ছে। আসল-নকল বোঝা যাচ্ছে না। অচেনা লিঙ্কে ক্লিক করার দরকার নেই। বাড়ি বসে করোনা মোকাবিলার পদ্ধতি শেখানোর নামে বহু ভুয়ো ইমেলও আসছে। এই পরিস্থিতিতে যতই জরুরি হোক, ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে সামনাসামনি আর্থিক লেনদেনের চেষ্টা করাই ভাল।”
সল্টলেকের বাসিন্দা শমীক কাঞ্জিলাল তাঁর অসুস্থ কুকুরের জন্য অনলাইনে ওষুধ খুঁজছিলেন। একটি সংস্থা ওষুধ পৌঁছনোর প্রস্তাব দিয়ে শমীকবাবুকে একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে অনলাইনে অন্তত পাঁচ টাকা পাঠিয়ে বরাত দিতে বলে। বাকি টাকা ওষুধ নেওয়ার সময়ে নগদে দেওয়া যাবে বলেও জানানো হয়। সেই মতো একটি অ্যাকাউন্ট থেকে পাঁচ টাকা পাঠানো হলেও ওষুধ আসেনি। অন্য অ্যাকাউন্ট থেকে বার কয়েক টাকা পাঠানোর কথা বলার পরেও শমীকবাবুরা রাজি না হওয়ায় শেষে গালিগালাজ করে ফোন কেটে দেওয়া হয়। ওই সংস্থার লোক বলে, “মাত্র ২১ টাকা নিয়ে ওষুধ কিনবে!” ঘটনাচক্রে যে অ্যাকাউন্টটি থেকে পাঁচ টাকা পাঠানো হয়েছিল তাতে ২১ টাকাই ছিল।
লালবাজারের সাইবার শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক বলছেন, “যদি বেশি টাকা থাকত তা হলে চোখের নিমেষে তুলে নেওয়া হত। মাত্র ২১ টাকা দেখেই গালিগালাজ করেছে।” কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়ায় সর্বক্ষণ নজরদারি চালানো হচ্ছে। এই সময়ে বেশ কিছু নতুন ধরনের অনলাইন প্রতারণার অভিযোগ আসছে। দ্রুত ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। তবে গ্রাহকেরা সতর্ক হোন। অচেনা লিঙ্কে ক্লিক করবেন না। লিঙ্কের আগে ‘https://’ লেখা রয়েছে কি না দেখে নিন। যে কোনও ওয়েবসাইটের নাম ভাল করে পড়ুন।’’
আরও পড়ুন: সাধারণ রোগীকে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে উদ্যোগ
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)