health

আলোচনায় শুধুই করোনা, সংক্রমণের অভিঘাত অভিধানেও

২০০২ সালে সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম) সংক্রমণের সময়ে একটি নতুন শব্দের জন্ম হয়েছিল ইংরেজি ভাষায়। যা পরবর্তীকালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও নিজেদের রিপোর্টে উল্লেখ করে।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২০ ০৪:১২
Share:

ভাষা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নাগরিকদের চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল রাষ্ট্র। তাই ভাষা সংস্কারের প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছিল। যেখানে রাষ্ট্রবিরোধী কোনও অবাঞ্ছিত শব্দ থাকবে না। মানে, বিপ্লব শব্দটি মুছে দেওয়া গেলে সেই চিন্তাও থাকবে না।

Advertisement

জর্জ অরওয়েলের ‘১৯৮৪’ উপন্যাসে রাষ্ট্র নির্মিত এ রকমই এক নতুন ভাষার কথা বলা হয়েছিল। যদিও ভাষাতাত্ত্বিকদের মধ্যে পরবর্তীকালে এ নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক হয়। সেই উপন্যাসের প্রসঙ্গ টেনে অনেকে বলেন, এটা অবশ্য একটি চূড়ান্ত তত্ত্ব (এক্সট্রিম থিয়োরি)। অনেকে আবার তার পাল্টা তত্ত্ব দেন। ভাষাতত্ত্বের একটি সূত্র অবশ্য বলছে, যার সহজ অর্থ,—‘যা আমাদের ভাষায় নেই। তা নেই।’

অনেকে বলছেন, এর উল্টোটিও সত্যি।—‘যা আমাদের ভাষায় রয়েছে। তা রয়েছে।’ যেমন কোভিড ১৯-এর সংক্রমণই প্রতিনিয়ত বোঝাচ্ছে, ব্যবহৃত ভাষা, দৈনন্দিন ভাষা কী ভাবে সকলের চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। কিছু দিন আগে পর্যন্ত যে শহরের অভিধানে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ), জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি), জাতীয়তাবাদ, অশান্তি ছিল, সেখানে সব মুছে গিয়ে শুধু রয়েছে করোনাভাইরাস, সামাজিক দূরত্ব (সোশ্যাল ডিসট্যান্স), ফেটালিটি রেট-সহ একাধিক শব্দ।

Advertisement

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্ব বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর অদিতি ঘোষ জানাচ্ছেন, নতুন কোনও কিছু ঘটলে সব সময়েই শব্দ তৈরি হয়। না হলে আলোচনা করাই তো সম্ভব নয়। তবে লক্ষণীয় হল, সেই নতুন শব্দগুলি নিয়ে কী এবং কী ভাবে আলোচনা করা হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘কিছু দিন আগেও যেখানে সিএএ, এনআরসি ঘুরছিল, বর্তমান পরিস্থিতিতে সেগুলি আলোচনায় নেই। আর আলোচনায় না থাকলে চিন্তাতেও থাকে না।’’ ভাষাতত্ত্বের আর এক অধ্যাপকের কথায়, ‘‘কিছুটা হলেও ভাষা আমাদের চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই সারাক্ষণ নোভেল করোনাভাইরাস ও সেই সংক্রান্ত আলোচনার ফলে আমাদের চিন্তাও তার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে।’’

২০০২ সালে সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম) সংক্রমণের সময়ে একটি নতুন শব্দের জন্ম হয়েছিল ইংরেজি ভাষায়। যা পরবর্তীকালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও নিজেদের রিপোর্টে উল্লেখ করে। তা হল, ‘ইনফোডেমিক’ বা তথ্য সংক্রমণ। কোভিড-১৯ সংক্রমণেও আরও একটি নতুন শব্দ সোশ্যাল মিডিয়া-সহ একাধিক জায়গায় ঘুরছে, ‘কভিডিয়ট’ (করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও তার নিয়মকানুন সম্পর্কে অজ্ঞ বা গ্রাহ্য না করা কোনও ব্যক্তি)। ভাষাতত্ত্বের এক গবেষকের কথায়, ‘‘এটি অবশ্য শৈলীগত ভাবে মূল শব্দটিরই একটি ভিন্ন প্রকাশ (স্টাইলিস্টিক ভ্যারিয়েশন)।’’

তবে কোনও শব্দের উৎপত্তি, তার প্রথম ব্যবহার-সহ সম্পূর্ণ তথ্যপঞ্জি ইংরেজি ভাষায় থাকলেও বাংলা ভাষায় তা নেই। তাই বর্তমানে সব থেকে আলোচিত ‘মহামারি’ শব্দটি কবে ব্যবহার শুরু হয়েছিল, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বলে জানাচ্ছেন ভাষাবিদদের একটি অংশ। ভাষাবিদ সুভাষ ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘সংস্কৃত থেকে শব্দটি আসেনি নিশ্চিত হওয়ার পরেই ঈ-কারের পরিবর্তে ই-কার ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ভাষাটি কবে এসেছে বা প্রথম ব্যবহৃত হয়েছে, এ রকম কোনও নথি আমাদের কাছে নেই।’’

‘মহামারি’ বা কোভিড-১৯ এবং সেই সংক্রান্ত শব্দের মাধ্যমে বর্তমান জীবন নিয়ন্ত্রিত হওয়ার ব্যাখ্যা হিসেবে মনোবিদ নীলাঞ্জনা স্যান্যাল বলেন, ‘‘মানুষের বেঁচে থাকার ইচ্ছে তীব্র। নিজের অস্তিত্ব থাকবে কি না, সেই আতঙ্ক যখন মনে ঢুকেছে, তখন তার মন আর কোনও দিকে যাচ্ছে না। অন্য কোনও আলোচনা করছে না।’’

‘বাঁচব। বাঁচতেই হবে’,— এই স্পৃহাই বর্তমানের অভিধান, যা চিন্তাকেও নিয়ন্ত্রণ করছে বলে জানাচ্ছেন সকলে।

অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement