প্রতীকী ছবি।
সর্দি জমে শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভোগা এক ব্যক্তিকে করোনা সন্দেহে ভর্তি না-করে ফিরিয়ে দিয়েছিল হাওড়ার একাধিক সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল। ঘটনাটি তিন দিন আগের। শেষে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ওই ব্যক্তির কোভিড পরীক্ষা হয়। কিন্তু সেই রিপোর্ট আসেনি ৪৮ ঘণ্টা পরেও। শনিবার দুপুরে বাড়িতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই ব্যক্তি। অভিযোগ, তখনও তাঁকে ভর্তি নেয়নি একটি নার্সিংহোম। শেষে ফের হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে কার্যত বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয় বছর বাহান্নর ওই প্রৌঢ়ের। পরিবারের অভিযোগ, করোনায় তিনি মারা গিয়েছেন কি না, এখনও সেই প্রমাণ মেলেনি। তা সত্ত্বেও পাড়ায় তাঁদের কার্যত একঘরে করে রাখা হয়েছে।
কয়েক দিন আগেই রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর নির্দেশ দিয়েছিল, সরকারি বা বেসরকারি— কোনও হাসপাতালই রোগী ফেরাতে পারবে না। রোগী ভর্তি না করলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল বা নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু সেই নির্দেশকে হাওড়ার ওই নার্সিংহোম ও হাসপাতালগুলি যে কোনও গুরুত্বই দেয়নি, এই ঘটনায় তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
ঠিক কী ঘটেছিল?
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত এক সপ্তাহ ধরে সর্দি-কাশিতে কষ্ট পাচ্ছিলেন ডুমুরজলা এইচআইটি আবাসনের কাছে বারুইপাড়ার বাসিন্দা অজয় সোম (৫২)। অজয়বাবুরা তিন ভাই, এক বোন। অজয়বাবুর ছোট ভাই সুজয় সোম জানান, বাড়িতে তিনি ছাড়া আছেন দুই ভাইয়ের পাঁচ ও দশ বছরের দুই ছেলে, দুই বৌদি এবং ৫৮ বছরের এক দিদি। সুজয়বাবু আরও জানিয়েছেন, বুকে সর্দি বসে যাওয়ায় তাঁর দাদার হাল্কা শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। গত ১০ জুলাই তাঁরা অজয়বাবুকে প্রথমে ডুমুরজলার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু অভিযোগ, ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে দেখা তো দূর, করোনা সন্দেহে পত্রপাঠ তাঁদের ফিরিয়ে দেন। এর পরে মধ্য হাওড়া ও বেলেপোল এলাকার আরও দু’টি বেসরকারি হাসপাতালে দাদাকে ভর্তির চেষ্টা করেন সুজয়বাবুরা। কিন্তু দুই হাসপাতালই জানিয়ে দেয়, করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট না-দেখে রোগীকে ভর্তি নেওয়া যাবে না।
সুজয়বাবু বলেন, ‘‘এর পরে আমরা হাওড়া জেলা হাসপাতালে যাই। সেখানেও জানানো হয়, করোনা পরীক্ষার পরেই ভর্তি করা হবে।’’ পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়া জেলা হাসপাতালে অজয়বাবুর লালারসের নমুনাও সংগ্রহ করা হয়। জানানো হয়, পজ়িটিভ হলে ২৪ ঘণ্টায় রিপোর্ট আসবে। কিন্তু সুজয়বাবুদের অভিযোগ, সেই রিপোর্ট দু’দিন পরেও আসেনি। শনিবার বাড়িতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন অজয়বাবু। ফের তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ডুমুরজলার কাছে ওই বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু অভিযোগ, সেখানে আবার ‘দুর্ব্যবহার’ করে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। শেষে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ওই প্রৌঢ়কে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানান, পথেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
রবিবার সুজয়বাবু জানান, তাঁর দাদার করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট এখনও আসেনি। এরই মধ্যে পাড়ায় রটে যায়, অজয়বাবু করোনায় মারা গিয়েছেন। পরিবারের অভিযোগ, তার পর থেকেই পাড়ার লোকজন তাঁদের একঘরে করেছেন। সুজয়বাবুর প্রশ্ন, ‘‘তা হলে কি অন্য রোগে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে এ ভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যাবেন? বাড়ির সদস্যেরা কেমন আছেন, মৃত্যুর পর সেই খোঁজও নেবে না জেলা স্বাস্থ্য দফতর?’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘হাওড়া জেলা হাসপাতাল কেন ওই রোগীকে ফিরিয়ে দিল, তার তদন্ত হবে। পাশাপাশি, অন্য বেসরকারি হাসপাতাল এবং সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোমের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ, এ ভাবে কোনও রোগীকে ফেরানো যায় না।’’ তবে বেসরকারি হাসপাতালগুলি এবং সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোমের তরফে এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।