থুতনিতে মাস্ক নামিয়েই মেট্রো সফর। ছবি: সুমন বল্লভ
গত সপ্তাহ দুয়েকের তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে দৈনিক কোভিড সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়ছে। তবে কি দ্বিতীয় ঢেউ এসে গেল? অর্থাৎ, পরিস্থিতি যে কঠিন হতে চলেছে, তা আঁচ করেই সপ্তাহখানেক আগে মাস্ক ব্যবহারে ফের কড়াকড়ি শুরুর কথা জানিয়েছিলেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। সব স্টেশনের প্রবেশপথে লেখাও, ‘নো মাস্ক, নো মেট্রো’। আদতে সেই বার্তা যে কার্যত লোক দেখানো, তা মানছেন মেট্রোর নিত্যযাত্রীদের একটি অংশ। তাঁদের প্রশ্ন, নয়তো সহযাত্রীর চোখা বাণে মাস্কহীন যাত্রী ব্যাগ হাতড়ে বার করেন মাস্ক? কিংবা
পুলিশ-পাহারার সামনে দিয়ে মাস্ককে থুতনিতে নামিয়ে রেখেই পার পেয়ে যায় গোটা পরিবার!
সপ্তাহখানেক ধরে যেন মেট্রোকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিধিভঙ্গের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। বলছিলেন নিয়মিত যাতায়াত করা যাত্রীদের অনেকেই। তাঁদের অভিযোগ, এ সব নিয়ে আরপিএফ কর্মীকে অভিযোগ করলে, সতর্ক করতে দরজার অন্য প্রান্ত থেকে স্রেফ টোকা মেরে ইশারায় মাস্ক পরতে বলে ক্ষান্ত দেন তিনি। অথচ প্ল্যাটফর্ম এবং ট্রেনের কামরায় নজরদারির দায়িত্ব আরপিএফের। কার্যক্ষেত্রে গল্পে কিংবা মোবাইলেই বুঁদ হয়ে থাকতে দেখা যায় ওই কর্মীদের। কামরায় নজরদারি তো নেই-ই। এমন ঢিলেঢালা নজরদারি মাস্ক না পরার প্রবণতা বাড়িয়ে তুলছে, অভিযোগ বেশির ভাগ মেট্রোযাত্রীর।
প্রবেশপথটুকু পেরিয়ে মুখের মাস্ক নামিয়ে ফেলছেন যাত্রীদের একটি অংশ। সেই সংখ্যা নেহাত কম নয়। এক যাত্রীর দাবি, ‘‘প্রতি কামরায় এমন বেপরোয়া মহিলা ও পুরুষ যাত্রী অন্তত ১৬ জন পাবেন। এমনকি ভিড় কামরায় অনেকেই মাস্ক ছাড়া বা সেটা নামিয়ে গল্পে মশগুল।’’ অভিযোগ, অন্য যাত্রীরা তাঁদের সজাগ করার চেষ্টা করলে শ্বাসকষ্টের দোহাই দেওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ আবার তর্ক জুড়ছেন এই বলে, ‘‘কোথায় করোনা? সব ঠিক হয়ে গিয়েছে। এত অসুবিধা হলে বাড়ি থেকে বেরোনোর দরকার কী?’’
মেট্রোয় গাদাগাদি ভিড়েও অনেকের মুখেই নেই মাস্ক। ছবি: সুমন বল্লভ
সম্প্রতি রাতের মেট্রোয় বরাহনগর থেকে ক্ষুদিরামে ফিরছিলেন বছর পঁয়ষট্টির নন্দদুলাল মিত্র। এসপ্লানেড থেকে ওঠা দুই মধ্যবয়সি ব্যক্তি উল্টো দিকের আসনে বসে মাস্ক থুতনির কাছে নামিয়ে গল্পে মশগুল হয়ে উঠেছিলেন। যা দেখে শঙ্কিত নন্দদুলালবাবু তাঁদের মাস্ক পরার কথা মনে করিয়ে দেন। এক জন বলে ওঠেন,‘‘আঙ্কেল, সারাদিন মাস্ক পরে দম আটকে যাচ্ছে। তাই খুলে শ্বাস নিচ্ছি।’’ তখনকার মতো চুপ করলেও স্টেশনে নেমে কর্তব্যরত আরপিএফ কর্মীকে বিষয়টি বলেন ওই বৃদ্ধ। আরপিএফ কর্মী বলেন , ‘‘সব যাত্রীর ট্রেনে ওঠানামা দেখব, নাকি কে মাস্ক পরেছেন সে সব দেখব?’’
মধ্য পঞ্চাশের তৃপ্তি দাশগুপ্ত, বছর তিরিশের সুমনা চৌধুরী কিংবা প্রৌঢ় সাইফুল হোসেনের অভিজ্ঞতাও এমনই। সুমনার কথায়, ‘‘মেট্রোর মহিলা যাত্রীদের একটি অংশও কিন্তু মাস্ক পরছেন না। তরুণ প্রজন্ম ছাড়াও মধ্যবয়সিরাও একই ভুল করছেন।’’
চাঁদনি চক স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে মাস্ক ছাড়াই অপেক্ষায় যাত্রীরা। মঙ্গলবার। ছবি: সুমন বল্লভ
ঠিক যেমন মাস্ক থেকে নজর ঘুরিয়ে ‘ভুল’ করছেন আরপিএফ কর্মী এবং মেট্রো কর্তৃপক্ষ। এমনই মতামত চিকিৎসকদের। তাঁদের মতে, মেট্রোর মতো গণপরিবহণে ঢিলেঢালা নজর অতিমারির ক্ষেত্রে আরও বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গেলে প্রশাসন যদি ফের লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়, সেই দায় কিন্তু মেট্রো কর্তৃপক্ষেরও থাকবে। সেটা মাথায় রেখে পরিষেবা চালু রাখা উচিত।
বেপরোয়া যাত্রীদের প্রসঙ্গ মেনে মেট্রোর এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘প্রথম থেকেই বলা হচ্ছে মাস্ক ছাড়া মেট্রোয় ওঠা যাবে না। যাত্রীদের সতর্ক করতে প্রচারও চলছে। তা সত্ত্বেও কিছু যাত্রীর গা-ছাড়া মনোভাব থাকছে।’’ আরপিএফ কর্মীর দায়িত্ব প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, অবশ্যই কর্মীদের এ বিষয়ে সজাগ থাকতে বলা হবে। স্টেশনের সিসি ক্যামেরাতেও নজর থাকবে।’’