প্রতীকী ছবি।
নিজের মতো করে ডিউটির সময় অদলবদল করে নেওয়াই দীর্ঘদিনের দস্তুর রাজ্যের বেশ কিছু সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের। ধরা যাক, কলকাতার কোনও ডাক্তারের পোস্টিং আলিপুরদুয়ারের হাসপাতালে। তিনি তিন দিন সেখানে থেকে সপ্তাহের বাকি দিনগুলো বাড়িতে থাকেন। হাসপাতালে যখন ওই দিন তিনেক থাকেন, তখন উদয়াস্ত পরিশ্রম করে নেন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের জেরে এই হিসেব গিয়েছে ঘেঁটে। লকডাউনের ঠিক আগের মুহূর্তে যে সব চিকিৎসক হাসপাতালে ডিউটিতে ছিলেন, তাঁরা পড়ে গিয়েছেন বেকায়দায়। বাকি চিকিৎসকদের একটা বড় অংশই তখন ছুটি নিয়ে যে যাঁর বাড়িতে ছিলেন। লকডাউনের পরে প্রথম কয়েকটা দিন হাসপাতালে থাকা চিকিৎসকেরাই কাজ সামলে দেন। কিন্তু পরে তাঁদের উপরে চাপ বাড়তে শুরু করে। কিছু সহকর্মী বাড়িতে রয়েছেন আর তাঁরা একনাগাড়ে কাজ করে যাচ্ছেন— এ নিয়ে চিকিৎসকদের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করেন।
তখনই বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতরের নজরে আসে। তখন থেকেই বাড়িতে থাকা সরকারি চিকিৎসকদের খুঁজে খুঁজে কাজে ফেরত পাঠাতে শুরু করেছে স্বাস্থ্য দফতর।
গত শনিবার এ ভাবে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩৫ জনকে পাঠানো হয়েছে। এই ফেরত পাঠানোর কাজ এখনও অব্যাহত। আজ, মঙ্গলবার সরকারি ভলভো বাসে ৩৬ জনকে পাঠানো হবে বহরমপুর, আলিপুরদুয়ার এবং শিলিগুড়ির হাসপাতালে। নবান্নের এক কর্তার কথায়, ‘‘রীতিমতো পুলিশের এসকর্ট দিয়ে, এসি বাসে চাপিয়ে, খাবারের ব্যবস্থা করে তাঁদের পাঠানো হচ্ছে।’’ কলকাতা-সহ আশপাশের জেলায় ছুটিতে থাকা এই সব চিকিৎসককে মঙ্গলবার সকালে সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টরে স্বাস্থ্য ভবনে পৌঁছে যেতে বলা হয়েছে। নিজস্ব উপায়ে সেখানে পৌঁছনোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাঁদের। বাস যাওয়ার রুট জেনে নিয়ে মাঝ রাস্তা থেকে উঠবেন বলেও জানিয়েছেন কিছু চিকিৎসক। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এখনও কিছু চিকিৎসকের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, প্রধানত দুই ধরনের সরকারি চিকিৎসক রয়েছেন। এক, যাঁরা সরাসরি চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা ডিরেক্টরেট অব হেলথ সার্ভিসের অধীন। আর একদল চিকিৎসক মূলত পড়ান। তাঁরা ডিরেক্টরেট অব মেডিক্যাল এডুকেশনের অধীনে রয়েছেন। দ্বিতীয় শ্রেণির চিকিৎসকদের একাংশ আবার শুধুই ছাত্রছাত্রীদের পড়ান। হাসপাতালে চিকিৎসার সঙ্গে তাঁরা নিয়মিত যুক্ত থাকেন না। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন তাঁরাও নিয়মিত চিকিৎসা করবেন বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।
বিষয়টি নিয়ে জানতে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীকে ফোন করা হলে সেটি বেজে যায়।