coronavirus

কোভিড মৃতের অন্ত্যেষ্টিতে পেসমেকার ফেটে বিপর্যয় রুখতে নির্দেশ রাজ্যের

এমন একাধিক ঘটনা ঘটছে, যেখানে মৃত করোনা রোগীর দেহে পেসমেকার বসানো থাকছে। সেই মৃতদেহ যখন বৈদ্যুতিক চুল্লির ভিতরে যাচ্ছে, তখন সেই পেসমেকার ফেটে বিপত্তি বাধছে।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২১ ০৫:৪৩
Share:

সারি সারি: নিমতলা মহাশ্মশানে রাখা কোভিড রোগীদের মৃতদেহ। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

করোনা রোগীদের দেহ সৎকার নিয়ে জটিলতা যেন আর কাটতেই চাইছে না। এ বার জটিলতা পেসমেকার ঘিরে। যার জন্য বিশেষ নির্দেশ জারি করতে হয়েছে রাজ্য প্রশাসনকে।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রের খবর, এমন একাধিক ঘটনা ঘটছে, যেখানে মৃত করোনা রোগীর দেহে পেসমেকার বসানো থাকছে। সেই মৃতদেহ যখন বৈদ্যুতিক চুল্লির ভিতরে যাচ্ছে, তখন সেই পেসমেকার ফেটে বিপত্তি বাধছে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে চুল্লি। ফলে সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখতে হচ্ছে করোনা আক্রান্তের মৃতদেহ সৎকার। এর জেরে সামগ্রিক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াই পিছিয়ে যাচ্ছে। সেই কারণে প্রশাসনের তরফে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, করোনা আক্রান্তের দেহে যদি পেসমেকার থাকে, সে ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক চুল্লিতে দেহ যাওয়ার আগে তা বার করে নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে মৃতের পরিবারকে মুচলেকা দিতে হবে যে, হৃদ্যন্ত্রে পেসমেকার বসানো নেই। রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘পেসমেকার থাকলে বৈদ্যুতিক চুল্লিতে যাওয়ার পরে তা ফেটে যাচ্ছে। এর ফলে চুল্লি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চুল্লি শাট ডাউন করে ফের চালু করতে সময় লেগে যাচ্ছে। তাই এই সিদ্ধান্ত।’’

প্রশাসনের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, শুধু করোনার ক্ষেত্রে নয়, সাধারণ মৃত্যুর ক্ষেত্রেও পেসমেকার বসানো থাকলে তা রোগীর দেহ থেকে বার করে নেওয়া হয়। কিন্তু করোনা আক্রান্ত মৃতদেহের চাপ যখন ক্রমশ বাড়ছে, তখন সেই পদ্ধতিতে ফাঁক থেকে যাচ্ছে। এখন কোন রোগীর পেসমেকার রয়েছে আর কার নেই, তা ভাল জানবেন তাঁর পরিবারের সদস্যেরাই। তাই প্রয়োজনের ভিত্তিতে তাঁদের তরফে ওই ‘ডিক্লারেশন’ দিতে হবে যে, মৃতের শরীরে পেসমেকার বসানো নেই। প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘সৎকার-পর্ব যাতে কোনও ভাবে ব্যাহত না হয়, সেটাই নিশ্চিত করা হচ্ছে।’’

Advertisement

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, করোনায় মৃতদের মধ্যে হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা থাকা পুরুষের হার ১০.৪৭ শতাংশ। আর মহিলাদের ক্ষেত্রে এই হার ৮.১৩ শতাংশ। এর মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই পেসমেকার বসানো থাকছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। ‘কার্ডিয়োলজিক্যাল সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’-র পশ্চিমবঙ্গ শাখার প্রেসিডেন্ট অঞ্জনলাল দত্তের কথায়, ‘‘সাধারণ সময়েও পেসমেকার মৃতের শরীর থেকে বার করে নেওয়া হয়। তা না হলে চুল্লিতে মৃতদেহ সৎকারের সময়ে পেসমেকার আওয়াজ করে ফেটে সমস্যা তৈরি করতে পারে।’’ আর এক হৃদ্রোগ চিকিৎসকের কথায়, ‘‘আসলে করোনা আক্রান্তের মৃত্যুর ক্ষেত্রে পেসমেকার বসানো থাকলেও অনেক সময়েই তা জানা যাচ্ছে না। কারণ, এতটাই দিশাহারা পরিস্থিতি চার দিকে। ফলে রোগীর পরিবার যদি জানিয়ে দেয় পেসমেকার বসানো আছে কি না, তা হলে অনাবশ্যক সমস্যা এড়ানো সম্ভব।’’

এমনিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চুল্লির সংখ্যাও বাড়াতে হয়েছে প্রশাসনকে। কলকাতার ক্ষেত্রে যেমন ধাপা, নিমতলা, বিরজুনালা, সিরিটি শ্মশান-সহ একাধিক জায়গায় করোনা-দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ। কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অনেক সময়ে প্রায় ২০ ঘণ্টা ধরে বৈদ্যুতিক চুল্লি চালাতে হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। তার মধ্যে পেসমেকার ফেটে যাতে চুল্লি-বিপর্যয় না ঘটে, সেটাই আপাতত নিশ্চিত করতে চাইছে প্রশাসন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement