coronavirus

করোনা-সঙ্কটেও পাভলভের ধোবিঘর চালাচ্ছেন পরিমলেরা

বছর সাতেক আগে মানসিক রোগীদের নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে পাভলভ মানসিক হাসপাতাল চত্বরে শুরু হয়েছিল ধোবিঘর।

Advertisement

জয়তী রাহা

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২০ ০৬:০৪
Share:

নিরলস: পাভলভ হাসপাতালে চলছে রোগীদের পোশাক-চাদর কাচার কাজ। নিজস্ব চিত্র

সময় চিনিয়ে দেয় মানুষকে। করোনাভাইরাসের আতঙ্কে কিছু মানুষ যখন বাড়িতে অতিরিক্ত খাবার-ওষুধ সঞ্চয় করে স্বার্থপরতার পরিচয় দিচ্ছেন, ওঁরা তখন অসংখ্য রোগীকে পরিচ্ছন্ন রেখে সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে নীরবে কাজ করে চলেছেন। যদিও এ কাজের কৃতিত্ব চান না ওঁরা। জরুরি পরিষেবায় যুক্ত এই ‘সৈনিক’রা এক সময়ে পাভলভ মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বর্তমানে সুস্থ হয়ে ওঁরা সেখানকার ধোবিঘরের কর্মী।

Advertisement

বছর সাতেক আগে মানসিক রোগীদের নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে পাভলভ মানসিক হাসপাতাল চত্বরে শুরু হয়েছিল ধোবিঘর। সেখানে গোটা পাভলভ হাসপাতালের রোগীদের পোশাক এবং চাদর কাচা হয়। বর্তমানে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বারুইপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের রোগীদের পোশাক ও চাদর। দিনে মোট সাড়ে ছ’শো কেজি কাপড় কাচা হয় সেখানে। যার মধ্যে বারুইপুর থেকে দৈনিক প্রায় তিনশো কেজি কাপড় আসে। ৫৫ কেজি এবং ২৫ কেজি করে কাচার ক্ষমতাসম্পন্ন দু’টি যন্ত্রে এক বার কাচতে সময় লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা। এর পরে রয়েছে যন্ত্রে ভারী চাদর ইস্ত্রি করে পাট করা, পোশাক হাতে ইস্ত্রি করার মতো পরিশ্রমসাধ্য কাজও।

এ সব কাজের জন্য রয়েছেন পাভলভেরই পরিমলদা, সাদিকুল ভাই আর শিখা। এ নামেই পরিচিত ওঁরা। সঙ্গে ওঁদের দু’জন প্রশিক্ষক। সকাল দশটা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত চলে ডিউটি। লকডাউনের সময়েও কাজে ফাঁকি দেওয়ার কথা ওঁরা ভাবতেই পারেন না। ‘‘কাজ বন্ধ করলে এত রোগীর কী হবে? তা হলে তো সংক্রমণও

Advertisement

ছড়াবে।’’ বলছিলেন এক কর্মী শিখা। গাড়ি বন্ধ। তবু তপসিয়ার বাসিন্দা দুই প্রশিক্ষক নিয়মিত আসছেন ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পাঠানো গাড়িতে। করোনা নিয়ে সতর্ক, কিন্তু ভীত নন পরিমলরা। “তবে বিশ্বকর্মা পুজোটা হবে তো?” প্রায় ছ’মাস পরের উৎসব ঘিরে এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছে পরিমলের মনে।

টাকা জমিয়ে তিনি যে ট্রানজিস্টর কিনেছেন, কাজের ফাঁকে তা থেকেই খবর শোনান সকলকে। নিয়মিত খবর নেন তাঁদের রত্নাদির। তিনিও অবশ্য প্রতিদিন আসেন ওঁদের উৎসাহ দিতে। সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে রত্নাবলী রায় বলছেন, ‘‘বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে যেখানে সকলে শুধু নিজেরটুকুই ভাবছেন, সেখানে যাঁদের সমাজ গ্রাহ্য করে না, তাঁরাই ভাবছেন সকলের কথা। সতর্ক থেকে নিজেদের দায়িত্বে সচেতন ওঁরা। এই মানসিকতাই বুঝিয়ে দিচ্ছে যে ওঁরা সেরে উঠেছেন।’’ ওই পাঁচ জনের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত রত্নাবলী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে ওঁদের মাস্ক দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই সময়ে ওঁদের সুরক্ষায় লিনেনের স্ক্রাব (গাউন) প্রয়োজন ছিল‌। পাঁচটি স্ক্রাব চেয়ে পাভলভ হাসপাতালের সুপারকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। এখনও কোনও উত্তর আসেনি।’’

তবে পাভলভের সুপার গণেশ প্রসাদ মনে করতে পারছেন না এমন চিঠি তিনি পেয়েছেন বলে। তাঁর কথায়, ‘‘এই ধরনের চিঠি আমার কাছে আদৌ এসেছে কি না, সেটাই মনে পড়ছে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement