Picnic

‘পিকনিক যেন মহামারির নতুন ষড়যন্ত্রের কারণ না হয়’

বড়দিনের আগে শেষ ছুটির দিন, রবিবার ভিড় উপচে পড়ল চিড়িয়াখানা, জাদুঘর চত্বরে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পিকনিক-পার্টির ভিড় দেখল ময়দানও। কেউ কেউ খুলে ফেললেন মাস্ক! দূরত্ব-বিধি পালনের ন্যূনতম চেষ্টাও দেখা গেল না বহু জায়গায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:১২
Share:

অনিয়ম: পিকনিকে দূরত্ব-বিধি মানার বালাই নেই। যত্রতত্র ফেলা হয়েছে আবর্জনাও। রবিবার, ময়দানে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

দুর্গাপুজো থেকে ছটপুজো পর্যন্ত বেপরোয়া উৎসব-যাপনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু শীতের উৎসব ঘিরে এখনও কোনও নির্দেশিকা নেই। ফলে করোনার ভয় কার্যত ভুলে বর্ষশেষের উদ্‌যাপনে মেতেছেন অনেকে। বিনা মাস্কে, দূরত্ব-বিধি উড়িয়ে শহরে দেদার পিকনিকের এমন দৃশ্যে তাই ভয় পাচ্ছেন অনেকেই। ‘‘প্রতি বার কড়া আইন না করা পর্যন্ত কি বিধি মেনে চলার কর্তব্য পালনে অভ্যস্ত হব না আমরা? কিছু লোকের লাগামহীন আনন্দ একটা বড় অংশের জন্য বিপদ ডেকে আনবে না তো?’’— প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।

Advertisement

বড়দিনের আগে শেষ ছুটির দিন, রবিবার ভিড় উপচে পড়ল চিড়িয়াখানা, জাদুঘর চত্বরে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পিকনিক-পার্টির ভিড় দেখল ময়দানও। কেউ কেউ খুলে ফেললেন মাস্ক! দূরত্ব-বিধি পালনের ন্যূনতম চেষ্টাও দেখা গেল না বহু জায়গায়।

গাদাগাদি ভিড়ে করোনার ভয় উধাও পিকনিক পার্টির গাড়িতেও। দত্তপুকুর থেকে পার্ক স্ট্রিটের কাছে পিকনিক করতে আসা ২০ জনের একটি দলের এক সদস্য বললেন, ‘‘মাস্ক পরে আনন্দ হয় না। ছবিও ভাল ওঠে না। তা ছাড়া এখন করোনা কোথায়?’’ চিড়িয়াখানার ভিড়ে দাঁড়িয়ে এক তরুণী আবার বলছেন, ‘‘কিসের ভয়? শীতে তো করোনা এমনিই মরে যায় শুনেছি।’’ ওই তরুণী ও তাঁর সঙ্গে থাকা দুই নাবালিকার মুখে মাস্কের বালাই নেই। একটু দূরে দাঁড়ানো এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘লোকে কী যে এত বলে! স্যানিটাইজ়ার হাতে মেখে খাবার খেলে উল্টে শরীর খারাপ হয়!’’

Advertisement

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর জন্য ১০টি ৪ তলা বাড়ি! খরচ প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি

আরও পড়ুন: সিএএ কবে, জবাব দিলেন অমিত

এই ছবিকেও ছাপিয়ে গেল নিউ টাউন, রাজারহাট বা দক্ষিণ শহরতলির নানা পিকনিক স্পট। সেখানে কোভিড-বিধি পালনে ঘোষণা বা পুলিশি নজরদারি— কিছুরই বালাই নেই। বিকেলের পরে পড়ে থাকা প্লাস্টিক এবং খাবারের বর্জ্য সাফ করার পুর ব্যবস্থাও অপ্রতুল। কসবা থেকে নিউ টাউনের একটি পার্কে পিকনিকে আসা সুকমল সরকারের মন্তব্য, ‘‘পিকনিকের জন্য পার্কগুলোতে একটু আবর্জনা থাকেই। এমনিই অনেক দিন লকডাউন ছিল, দুর্গাপুজোতেও সে ভাবে আনন্দ হয়নি। এ সব বলে কাউকে আর ঘরে রাখা যাবে না। কলকাতা তো তবু ভাল, জেলার পিকনিক স্পটগুলো ঘুরে দেখুন!’’

পিকনিকের এই ঢল দেখে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ছে চিকিৎসকদের। চিকিৎসক কুণাল সরকার বলছেন, ‘‘মানুষের হাবভাব দেখে চিন্তা হচ্ছে। মাস্কের বালাই নেই, দল বেঁধে পিকনিকে যাচ্ছেন। কয়েক ঘণ্টার আনন্দের খেসারত যাতে না দিতে হয়, সে কারণেই দুর্গাপুজোর আগে এত করে বলা হয়েছিল। সকলের কাছে অনুরোধ, আপনার পিকনিক যেন মহামারির নতুন ষড়যন্ত্রের কারণ না হয়!’’ চিকিৎসক অনির্বাণ নিয়োগীর মন্তব্য, ‘‘কোনও সাহসে ভর করেই করোনাকে হেলাফেলা করা যাবে না। আজ যেটুকু সুফল পাচ্ছি, তা কিন্তু উৎসবের মরসুমে সতর্ক থাকতে পেরেছি বলেই।’’

মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বলছেন, ‘‘পজ়িটিভ কেস হয়তো কিছুটা কমেছে। কিন্তু সেটাকে পাত্তা দিচ্ছি না। কারণ এখনও অনেকেই হয়তো পরীক্ষা করাচ্ছেন না। মৃত্যুর হার কিন্তু একই আছে। শুধু পিকনিক নয়, বড়দিনে পার্ক স্ট্রিটের ভিড়ও বাতিল করার ব্যবস্থা করতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement