প্রতীকী ছবি।
সুদৃশ্য কেক কাটলেন দম্পতি। উপহার পেলেন প্রিয় চকোলেট আর ফল। পরিস্থিতির যাঁতাকলে যাঁরা আসতে পারেননি, তাঁরা ‘উইশ’ করলেন মোবাইলে ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে। করোনাকে জয় করে বাড়ি ফিরে এ ভাবেই পঁচাত্তরতম বিবাহবার্ষিকী পালন করলেন নব্বই পার হওয়া সুনীলকুমার আর উজ্জ্বলা মণ্ডল।
এর আগের বেশ কয়েকটা দিন রীতিমতো উৎকণ্ঠায় কেটেছিল নবতিপর ওই দম্পতির প্রিয়জনদের। ৯৪ বছর ছুঁইছুই সুনীল আর ৯০ পেরনো উজ্জ্বলা দু’জনেই করোনা আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে। সম্প্রতি দু’জনেই করোনাকে হারিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন। নাতনি রাজশ্রী রায় বলেন, ‘‘প্রতিদিন চারপাশে যে ভাবে খারাপ খবর শুনছি, তাতে দাদু-দিদিমাকে নিয়ে আতঙ্কে ছিলাম। এখন আমরা খুব খুশি। ঠিকঠাক চিকিৎসা আর মনের জোর থাকলে যে কোনও বয়সেই করোনাকে হারিয়ে ফিরে আসা সম্ভব। ভয় না পেয়ে আমাদের সকলকেই মনোবল বজায় রাখতে হবে। এই ক’দিনের অভিজ্ঞতায় এটাই বুঝলাম।’’
সুনীলবাবু পেশায় চিকিৎসক ছিলেন। থাকেন খিদিরপুরে। এখন অবশ্য আছেন লেক মার্কেটে ছোট ছেলে প্রতাপের কাছে। আত্মীয়েরা জানান, সম্প্রতি সুনীলবাবু এবং উজ্জ্বলাদেবী করোনা সংক্রমিত হন। জ্বর,শ্বাসকষ্ট, ডায়েরিয়ার উপসর্গ নিয়ে দিন কুড়ি আগে উজ্জ্বলাদেবীকে মুকুন্দপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অক্সিজেনও দিতে হয় তাঁকে।
তার দিন কয়েক পরে জ্বর, সর্দি-কাশি এবং শ্বাসকষ্ট নিয়ে সুনীলবাবুকেও ওই হাসপাতালেই ভর্তি করানো হয়। দু’জনেরই বয়সজনিত শারীরিক কিছু সমস্যা আগে থেকেই ছিল। তার উপরে দু’জনের কেউই প্রতিষেধক নেননি।
সে জন্য আরও বেশি চিন্তায় ছিলেন বাড়ির লোকেরা। তবে চিকিৎসায় দু’জনেই সেরে ওঠেন। সুনীলবাবু হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান মে মাসের প্রথম সপ্তাহে। উজ্জ্বলাদেবী বাড়ি ফেরেন গত বুধবার।
তার পরের দিন, অর্থাৎ গত বৃহস্পতিবার ছিল তাঁদের বিবাহবার্ষিকী। নাতবৌমা প্রেমা মণ্ডল জানান, এ বারের ওই বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠান বড় করে করার পরিকল্পনা ছিল পরিবারের। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির জন্য সেই পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়। ওই দম্পতির দুই মেয়ে এবং দুই ছেলে। তাঁরা এবং নাতি-নাতনিরা কলকাতাতেই থাকেন। তাঁদের কয়েক জন শুভকামনা জানান। নাতনি রাজশ্রী বলেন, ‘‘দাদু-দিদিমা হাসিমুখেই কেক কাটেন। সঙ্গে চকোলেট আর ফল তো ছিলই। কোভিড পরিস্থিতি কেটে গেলে ওঁদের দু’জনকে নিয়ে সবাই মিলে হইহই করে অনুষ্ঠান করব।’’