Coronavirus in Kolkata

করোনা-বিধি ভাঙছেন যাঁরা, সেফ হোমে কি আপত্তি তাঁদেরই

করোনা অতিমারির সময়ে পাড়ায় পাড়ায় এমনই নাগরিকদের একাংশের তৎপরতা বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২০ ০২:৫১
Share:

প্রতীকী ছবি

এলাকায় সরকারি সেফ হোম তৈরির প্রতিবাদ করতে পথে নেমে তাঁরা গোলমাল বাধান বলে অভিযোগ। অথচ, দূরত্ব-বিধি মানার কথা তাঁদেরই মাথায় থাকে না! তাঁরাই আবার কোনও অসুস্থ ব্যক্তির করোনাই হয়েছে ধরে নিয়ে তাঁকে পাড়াছাড়া করতে নেমে পড়েন বলে অভিযোগ। কিন্তু মাস্ক পরার কর্তব্য পালন করেন না! এ-ও অভিযোগ ওঠে যে, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের পাড়ায় ঢোকা আটকাতে যতটা তৎপরতা দেখা যায় তাঁদের মধ্যে, রাস্তায় পড়ে থাকা কাউকে হাসপাতালে পাঠানোর ক্ষেত্রে ততটা চোখে পড়ে না।

Advertisement

করোনা অতিমারির সময়ে পাড়ায় পাড়ায় এমনই নাগরিকদের একাংশের তৎপরতা বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। এর জেরে ব্যাহত হচ্ছে করোনা মোকাবিলার একাধিক সরকারি উদ্যোগ। গত সপ্তাহেই যেমন রাজারহাটের যাত্রাগাছি এলাকায় একটি সেফ হোম নিয়ে তীব্র বাধার মুখে পড়তে হয়েছে পুলিশ-প্রশাসনকে। মানুষের প্রাণ বাঁচাতে যাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনার সঙ্গে যুদ্ধে নেমেছেন, তাঁদেরই ওই সেফ হোমে রাখা হয়েছিল। প্রশাসন সূত্রের খবর, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কাজ করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হলেও এই মুহূর্তে ওই রোগীরা উপসর্গহীন। এলাকার সেফ হোমে উপসর্গহীন করোনা রোগীদের রাখা হচ্ছে জেনে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ বাইরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। পরে বাধ্য হয়ে হোমটি বন্ধই করে দিতে হয় পুলিশকে।

রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর বার বার জানাচ্ছে, করোনা মোকাবিলায় এগিয়ে থাকতে সেফ হোমের সংখ্যা বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, রাজ্যে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১০৯টি সরকারি সেফ হোম তৈরি করা হয়েছে। তাতে সব মিলিয়ে শয্যার সংখ্যা সাত হাজারের আশেপাশে। কলকাতার সেফ হোমগুলিতে শয্যার সংখ্যা প্রায় ২৫০০। রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘‘এতেও হবে না। দ্রুত সেফ হোমের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন।’’ তাঁর দাবি, উপসর্গহীন করোনা আক্রান্তদের হাসপাতালে রাখা হলে শয্যা আটকে থাকে। এই মুহূর্তে প্রতিদিন যে হারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে শয্যা আটকে রাখার পরিস্থিতি নেই। উপসর্গহীনদের সেফ হোমে রাখলে গুরুতর অসুস্থ কাউকে শয্যা

Advertisement

আরও পড়ুন: যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের খুঁটিনাটি অ্যাপে, বলছে মেট্রো

দেওয়া যেতে পারে। তাঁর কথায়, ‘‘এটা যে সাধারণ নাগরিকদের জন্যই করা, তা বুঝতে হবে। সঙ্গে এ-ও বুঝতে হবে, কোনও চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীকে হেনস্থা করা অনৈতিক, বেআইনি কাজ।’’

এই বার্তা যে সব মানুষ বুঝছেন না, তা মালুম হয় রাজারহাটে যেখানে গোলমাল হয়েছিল সেখানকার এক বাসিন্দার কথায়। মাস্ক ছাড়াই ঘুরে বেড়ানো সমর সরকার নামে সেই বাসিন্দা বলেন, ‘‘করোনা রোগী পাড়ায় থাকবে কেন? সরকার অন্য কোথাও জায়গা না পেয়ে আমাদের পাড়ায় এসেছে। আমাদের পাড়ায় কোনও করোনা হোম হবে না।’’ মাস্ক পরেননি কেন? ওই ব্যক্তির যুক্তি, ‘‘মাস্ক পরি দূরে কোথাও গেলে!’’ কাঁকুড়গাছির যে পাড়ায় এক চিকিৎসককে বাড়ি ছাড়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, সেখানকার এক বাসিন্দা দলবল নিয়ে এসে বললেন, ‘‘নিজের নিরাপত্তা নিজের কাছে। করোনার সঙ্গে যুক্ত কাউকেই এলাকায় রাখা যাবে না, চিকিৎসক হলেও না।’’ কিন্তু দূরত্ব-বিধি ভুলে দল বেঁধে এসেছেন কেন? ওই ব্যক্তির বক্তব্য, ‘‘দরকার সকলের, তাই সকলে এসেছেন। ভিড়ে কোনও ক্ষতি নেই, ওই ডাক্তার পাড়ায় থাকলে আছে।’’

এ বিষয়ে আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের মত, সচেতনতার প্রচারের পাশাপাশি সরকারের উচিত মামলা করে বিধিভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া। তাঁর কথায়, ‘‘এই মুহূর্তে মহামারি প্রতিরোধ আইন বলবৎ রয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৮ নম্বর ধারায় এই পরিস্থিতিতে বিধি ভঙ্গের ক্ষেত্রে সাজার কথা আছে। এ ছাড়া, সরকারি কর্মীকে কর্তব্যে বাধাদানের ধারাতেও মামলা করা যায়। তবে আমি বলব, গ্রেফতারি নয়, কড়া হাতে পরিস্থিতি সামলাতে মোটা অঙ্কের জরিমানা করা দরকার।’’

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement