তোড়জোড়: বেহালার একটি স্কুলে প্রতিষেধক নেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পড়ুয়াদের সাহায্য করছেন শিক্ষকেরা। সেখানেই নির্দিষ্ট করা হচ্ছে প্রতিষেধক নেওয়ার পরে অপেক্ষা করার কক্ষ। রবিবার। ছবি: সুমন বল্লভ
করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় আজ, সোমবার থেকে আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার পথে হাঁটছে রাজ্য প্রশাসন। তবে ১৫-১৮ বছর পর্যন্ত কিশোর-কিশোরী এবং স্কুলপড়ুয়াদের প্রতিষেধক দেওয়ার কর্মসূচি চালু থাকবে। শিক্ষা দফতরের এক কর্তা রবিবার বলেন, ‘‘প্রথম পর্যায়ে শহরের ১৬টি বরোর ১৬টি স্কুলে ১৫-১৮ বছর বয়সি, যাদের জন্ম ২০০৭ সাল বা তার আগে, তাদের প্রতিষেধক দেওয়ার কর্মসূচির পরিবর্তন হচ্ছে না। সোমবার থেকেই তা শুরু হচ্ছে। ১৬টি স্কুলে প্রস্তুতিও প্রায় সম্পূর্ণ।’’
কলকাতার যে ১৬টি স্কুলে আজ প্রতিষেধক প্রদান কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা, তার মধ্যে একটি সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গভর্নমেন্ট গার্লস হাইস্কুল। সেখানকার প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া নাগ সিংহ মহাপাত্র জানালেন, তাঁদের স্কুলের একাদশ শ্রেণির ১০০ জন পড়ুয়া সোমবার প্রতিষেধক নেবে। তার জন্য প্রস্তুতি সম্পূর্ণ। পড়ুয়ারা স্কুলে ঢোকার সময়ে থার্মাল গান দিয়ে তাদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হবে। এর পরে হাত জীবাণুমুক্ত করে স্কুলে ঢুকবে তারা এবং একটি ঘরে অপেক্ষা করবে। কোনও পড়ুয়া যদি কোউইন পোর্টালে তার নাম আগেই নথিভুক্ত করায়, সে ক্ষেত্রে তার রেজিস্ট্রেশন নম্বর বলতে হবে না। তবে কোউইন পোর্টালে কেউ নাম নথিভুক্ত না করিয়ে এলে স্কুলের তরফ থেকে সেই ব্যবস্থা করা হবে। এর পরে সংশ্লিষ্ট পড়ুয়ার নাম ডাকা হলে সে একটি নির্দিষ্ট ঘরে গিয়ে প্রতিষেধক নেবে। আধ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখার পরে ওই পড়ুয়া বাড়ি যাবে। পড়ুয়াদের সঙ্গে অভিভাবকেরা আসতে পারবেন। তাঁদের অন্য ঘরে বসার ব্যবস্থা করা হবে। ছেলেমেয়েদের প্রতিষেধক দেওয়ায় যে মা-বাবার আপত্তি নেই, সেই সংক্রান্ত সম্মতিপত্র আনতে হবে পড়ুয়াদের।
পাপিয়াদেবী আরও জানান, তাঁরা ১০০ জন পড়ুয়াকে একসঙ্গে ডাকছেন না। ২৫ জন করে পর্যায়ক্রমে রোল অনুযায়ী ডাকা হবে। যেমন, যাদের রোল ১ থেকে ২৫-এর মধ্যে, তাদের হয়তো ডাকা হবে সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। তার পরের ঘণ্টায় ডাকা হবে পরবর্তী ২৫ জনকে। এ ভাবে পর্যায়ক্রমে ১০০ জন পড়ুয়াকে প্রতিষেধক দেওয়া হবে।
বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শাশ্বতী অধিকারী জানিয়েছেন, তাঁদের স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া-সংখ্যা ১৩১। তাদের মধ্যে ১২০ জন মতো পড়ুয়া প্রতিষেধক নেবে বলে তাঁরা জেনেছেন। বাকিদের বয়স ১৮ পেরিয়ে যাওয়ায় তারা আগেই প্রতিষেধক নিয়েছে বলে জানিয়েছে। শাশ্বতীদেবী বলেন, ‘‘আমাদের তরফে প্রস্তুতি সারা। পড়ুয়াদের আগেই বলা হয়েছিল কোউইন পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করতে। যারা তা এখনও করতে পারেনি, স্কুলেই তাদের নাম নথিভুক্ত করে নেওয়া হবে। সকাল ১০টা থেকে শুরু হবে এই কর্মসূচি। তবে সবাইকে একসঙ্গে ডাকা হচ্ছে না।’’ তিনি জানান, স্কুলের প্রবেশপথে থাকছে স্যানিটাইজ়ার। পড়ুয়াদের হাত জীবাণুমুক্ত করে তবে ঢুকতে হবে। মাপা হবে তাদের শরীরের তাপমাত্রাও। প্রত্যেক পড়ুয়াকে টোকেন দেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী নাম ডেকে তাদের প্রতিষেধক দেওয়া হবে। পড়ুয়াদের সঙ্গে রাখতে হবে অভিভাবকদের সম্মতিপত্র। প্রধান শিক্ষিকা জানালেন, সমগ্র কর্মসূচির জন্য আট-দশটি শ্রেণিকক্ষ পৃথক করে রাখা হয়েছে। জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে পুরো স্কুলভবন।
স্কুলে এসে যাতে প্রতিষেধক পেতে দেরি না হয়, তার জন্য রবিবারেই কোউইন পোর্টালে পড়ুয়াদের নাম নথিভুক্ত করিয়ে নিয়েছে বেহালা হাইস্কুল। প্রধান শিক্ষক দেবাশিস
বেরা বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে নবম থেকে দ্বাদশের ৬০৮ জন পড়ুয়া রয়েছে। প্রতিদিন ২০০ জনকে প্রতিষেধক দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হলেও সোমবার ২০০ জনকে ডাকা হচ্ছে না। ওই দিন দ্বাদশ শ্রেণির
১৫৭ জন পড়ুয়াকে প্রতিষেধক দেওয়া হবে। মঙ্গলবার থেকে বাকি পড়ুয়ারা ধাপে ধাপে প্রতিষেধক পাবে।’’ তিনি জানান, ১৫৭ জন পড়ুয়ার মধ্যে ১০০ জন এ দিনই স্কুলে এসে কোউইন পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করিয়ে নিয়েছে। বাকিরা সোমবার স্কুলে এসে করবে। দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘অভিভাবকদের সঙ্গে আসবে পড়ুয়ারা। রোল অনুযায়ী তাদের ডাকা হবে। স্কুলে যাতে ভিড় না হয়, তার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতিষেধক দেওয়ার ঘর থেকে শুরু করে তার আগে অপেক্ষা করার ঘর, পর্যবেক্ষণ-কক্ষ— সব তৈরি। শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরাও স্কুলে আসবেন।’’