Howrah

পিপিই পরে তর্পণ করিয়ে নায়ক তিনিই

প্রৌঢ় গোপালবাবু জানালেন, করোনার কারণে গত মার্চ থেকে এ ভাবেই সতর্ক রয়েছেন তিনি। নিজে সচেতন তো রয়েইছেন, সেই সঙ্গে কোনও কারণে বিধি ভাঙলে স্ত্রী ভগবতী দাসের রোষানলও রয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:০৭
Share:

ব্যতিক্রমী: তেলকল ঘাটের একটি মন্দিরে গোপাল দাস (বাঁ দিকে), শনিবার। সেখানেই মহালয়ায় পিপিই পরে তর্পণ করান তিনি। —নিজস্ব চিত্র।

তর্পণ করতে ঘাটে ঘাটে বেলাগাম ভিড়। তার মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রম তিনিই। সংক্রমণের রেখচিত্র ঊর্ধ্বমুখী হতে দেখেও যে শহরবাসীর বড় অংশের মাস্ক না পরার ‘দাদাগিরি’ দেখানোই দস্তুর, সেখানেও ব্যতিক্রম হয়ে রইলেন তিনি। হাওড়ার তেলকল ঘাটে পিপিই-গ্লাভস পরে বছর ষাটেকের পুরোহিত গোপাল দাসের তর্পণ করানোর দৃশ্য তাই অনেকেরই মতে এ বারের মহালয়ার সেরা ছবি।

Advertisement

যদিও কোনও একটি বিশেষ দিনের ব্যাপার নয়। প্রৌঢ় গোপালবাবু জানালেন, করোনার কারণে গত মার্চ থেকে এ ভাবেই সতর্ক রয়েছেন তিনি। নিজে সচেতন তো রয়েইছেন, সেই সঙ্গে কোনও কারণে বিধি ভাঙলে স্ত্রী ভগবতী দাসের রোষানলও রয়েছে। আর তাই স্ত্রীর কথা ভেবেই মহালয়ার সকালে পিপিই পরে যজমানদের তর্পণ করাতে নামতে হয়েছিল গোপালবাবুকে। সঙ্গে ছিল বিশাল স্যানিটাইজ়ারের বোতল, স্প্রে করার যন্ত্রও। এক যজমানকে বলে আনিয়ে রেখেছিলেন প্রায় ছ’হাজার সার্জিক্যাল মাস্কও। গোপালবাবুর কথায়, “আমার সুগার আছে। তাই স্ত্রীর কথামতোই সব করেছি। যজমান এলে মাস্ক দিয়েছি। অনেকে অবশ্য মাস্ক দেওয়ার পরেও পরেননি।”

গোপালবাবুরা আদতে ওড়িশার ভদ্রকের বাসিন্দা। ছেলে জয়দেব এবং উদয়দেবকে নিয়ে হাওড়ার তেলকল ঘাটের কাছেই চলে তাঁর পৌরোহিত্যের কাজ। জানালেন, গত শিবরাত্রির পরে যা আয় হয়েছিল তা নিয়ে দুই ছেলের সঙ্গে গিয়েছিলেন ভদ্রকের বাড়িতে। সেখানেই থাকেন স্ত্রী এবং পরিবারের বাকি সকলে। তবে হঠাৎ লকডাউন হয়ে যাওয়ায় আর ফিরতে পারছিলেন না। প্রৌঢ় বললেন, “বাড়িতে বসে দমবন্ধ হয়ে আসছিল। তবে ভগবতীর বেশ লেগেছে ব্যাপারটা। এ দিকে যজমানেরা ফোন করে যাচ্ছেন। শেষে অনেক বুঝিয়ে এ মাসের ২ তারিখ জনশতাব্দী এক্সপ্রেসে কলকাতায় এসেছি। স্ত্রী বলে দিয়েছিলেন, মাস্ক পরে সব করছি কি না, সেই খোঁজখবর নেবেন ছেলেদের থেকে। তাই এ সব আয়োজন।”

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘সেফ করিডোর’ বাংলায় কোন পথে শাখা মেলছে জিহাদি নেটওয়ার্ক

আরও পড়ুন: আগামী সপ্তাহেই উচ্চ আদালতে যাবে অনিন্দিতার পরিবার​

লকডাউনে গ্রামের বাড়িতে কী ভাবে চলছিল সংসার? গোপালবাবু জানান, যজমানদের সাহায্য আর সরকারি রেশনের ভরসাতেই কেটে গিয়েছে সে সব দিন। ফোকলা দাঁতে হাসতে হাসতে বললেন, “এ বার থেকে এক হাজার টাকা করে পাওয়া যাবে শুনলাম। দিদি বলেছেন।” মুখ্যমন্ত্রীর গল্পেই পুরোহিত ফিরে যান নিজের বাবার কথায়। তাঁর দাবি, তাঁর বাবা বাবাজি দাস দীর্ঘদিন পুজো করেছেন মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারে। মন্ত্রী সুব্রত বক্সীর বহু পুজোও নাকি হয়েছে তাঁর হাতে। গোপালবাবু বলেন, “দিদি আমাকেও চিনতেন। এখন মনে হয় আর চিনবেন না। সবই ঠিক আছে, তবে পুরোহিতদের আরও আগে আর্থিক সাহায্য দিলে ভাল হত। এক হাজার টাকাতেও তো আজকাল কিছুই হয় না।”

মহালয়ার সকালে কত জনকে তর্পণ করালেন? গোপালবাবু জানালেন, দুই ছেলে আর আত্মীয়েরা মিলে প্রায় পাঁচ হাজার! তবে তাঁর হাত দিয়ে তর্পণ নাকি শুরু হয়ে গিয়েছিল গত ৩ তারিখ থেকেই। প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত তেলকল ঘাটে তর্পণ করানোটাই ছিল তাঁর কাজ। তবে প্রবল গরমে পিপিই পরে যে রীতিমতো অসুবিধা হয়, সে কথা অবশ্য গোপন করছেন না তিনি। বলছেন, “বেলার দিকে একটু ফাঁকা পেলেই পিপিই-র চেন খুলে একটু হাওয়া খেয়ে এসেছি।”

তবে পুজোয় মাস্ক যে পরতেই হবে, সে কথা অবশ্য বলতে ভুলছেন না এই প্রৌঢ়। মুখের মাস্ক দেখিয়ে বললেন, “দুর্গাপুজো যদি করতে হয়, মানুষকে কিন্তু এখনই সতর্ক হতে হবে। এখনও অনেকেই মাস্ক পরছেন না। আমার স্ত্রীর মতো কেউ তাঁদের জীবনে থাকলে তবেই তাঁরা হাড়ে হাড়ে বুঝবেন মাস্কের প্রয়োজনীয়তা।’’

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement