প্রতীকী ছবি।
দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে শহরে। গত তিন সপ্তাহ ধরে সংক্রমণ পাল্লা দিয়ে ছড়াচ্ছে কলকাতা পুলিশেও। এই অবস্থায় বাহিনীর সদস্যদের কথা মাথায় রেখে লালবাজার দু’টি কোয়রান্টিন কেন্দ্র তৈরি করছে।
লালবাজার সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই প্রথম কোয়রান্টিন কেন্দ্রটি হাওড়ার ডুমুরজলার কলকাতা পুলিশ অ্যাকাডেমিতে তৈরি হয়েছে। সেখানে ১৫০ শয্যার ব্যবস্থা হয়েছে। দ্বিতীয় কোয়রান্টিন কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে ভবানীপুরে কলকাতা পুলিশ হাসপাতালে। আপাতত ওই হাসপাতালের ৫০টি শয্যা নিয়ে কেন্দ্রটি চালু হবে চলতি সপ্তাহেই। প্রয়োজনে শয্যা বাড়ানো এবং নতুন কোয়রান্টিন কেন্দ্র চালু করা হবে বলে জানানো হয়েছে পুলিশের তরফে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় বেসামাল দেশ। পিছিয়ে নেই এই রাজ্য। শুধু গত তিন সপ্তাহেই কলকাতা পুলিশে আক্রান্তের সংখ্যা একশো ছাড়িয়েছে। হাসপাতালের শয্যা সঙ্কটে ভর্তির সমস্যা হচ্ছে। পুলিশকর্তাদের দাবি, সে সব ভেবেই আপাতত ওই দুই জায়গা বাহিনীর সংক্রমিত সদস্যদের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। গত বছর করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় লালবাজার সে বারেও শহরে কয়েকটি কোয়রান্টিন কেন্দ্র তৈরি করেছিল। পুলিশ সূত্রের খবর, করোনায় সংক্রমিত যে সদস্যদের তেমন শারীরিক সমস্যা নেই, তাঁদেরকেই ওই কেন্দ্রে রেখে চিকিৎসা করা হবে। কেন্দ্রগুলিতে করোনা চিকিৎসার প্রাথমিক সব রকম ব্যবস্থা থাকছে বলে জানানো হয়েছে। কলকাতা পুলিশ হাসপাতাল বর্তমানে এসএসকেএম হাসপাতালের শাখা হিসেবে কাজ করছে। ফলে সেখানে চিকিৎসাধীন সাধারণ রোগীদের অন্যত্র সরানো হবে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
যে হারে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, তাতে বাহিনীতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলে হাসপাতালে জায়গা পাওয়া কঠিনতম হয়ে যাবে। তাই আগেভাগেই সদস্যদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করে প্রস্তুতি সেরে রাখতে চাইছে লালবাজার। এক পুলিশকর্তার কথায়, “দরকার পড়লে আরও কিছু জায়গায় যাতে কোয়রান্টিন কেন্দ্র করা যায় সেই আলোচনাও চলছে।”
এ দিকে, ধরপাকড় এবং রাজনৈতিক মিছিল-সমাবেশে ডিউটি করার কারণে বাহিনীতে সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন নিচুতলার পুলিশকর্মীরা। তাঁদের মতে, পুলিশ রাস্তায় ঘুরে ঘুরে করোনা-বিধি মানা নিয়ে মানুষকে সচেতন করছে, মাস্কহীনকে মাস্ক পরাচ্ছে। কিন্তু যিনি মাস্ক পরছেন, তিনি সংক্রমিত কি না তা জানা নেই। অথচ তাঁকে এক হাত দূর থেকে মাস্ক পরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে পুলিশের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বাড়ছে। লালবাজারের এক কর্তা জানান, এই বিষয়টি তাঁদের নজরে এসেছে। তাই মাস্ক পরানো নিয়ে সতর্ক হতে বলা হয়েছে পুলিশকর্মীদের। ওই কর্তা জানান, উপরতলা থেকে থানা এবং ট্র্যাফিক গার্ডের আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে বাহিনীর কেউ মাস্ক
পরিয়ে না দেন।
পুলিশের আর একটি অংশের অভিযোগ, গত বছর বাহিনীকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। অথচ, এ বার সদস্যদের সুরক্ষা নিয়ে সে ভাবে ভাবাই হচ্ছে না। যেমন, কাউকে গ্রেফতার করলে তাঁকে কোভিড পরীক্ষা না করেই লকআপে রাখা হচ্ছে। তেমনই ভিড়ে মিশে গিয়ে রাজনৈতিক সভায় ডিউটি করতে হচ্ছে পুলিশকে। এতে সংক্রমণ বাড়ছে বাহিনীতে। এমনই দাবি একাধিক পুলিশ আধিকারিকের। তাঁদের দাবি, নিচুতলার পুলিশকর্মীরা গণপরিবহণ ব্যবহার করে ডিউটিতে যোগ দিতে আসায় সঙ্কট আরও বাড়ছে।