বি আর সিংহ হাসপাতাল। ফাইল চিত্র।
শিয়ালদহের বি আর সিংহ হাসপাতালে কোভিড-চিকিৎসার অব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগের মুখে পড়ে পরিকাঠামোর ফাঁক ভরাট করতে তৎপর হলেন রেলের কর্তারা। পূর্ব রেলের প্রধান হাসপাতাল হওয়া সত্ত্বেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে গুরুতর অসুস্থ রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করার পরে সেখানে চিকিৎসা পরিষেবা ঠিকমতো মেলেনি বলে অভিযোগ তুলেছিল রেলের কর্মী সংগঠন। পরিকাঠামোগত সেই সমস্যার কথা প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসেন রেল কর্তৃপক্ষ।
করোনায় আক্রান্তদের রোগ নির্ণয়ের উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই, এমনই অভিযোগ ছিল বি আর সিংহ হাসপাতালের বিরুদ্ধে। সেই সমস্যার সমাধানে আগামী সপ্তাহের মধ্যেই আরটি-পিসিআর পরীক্ষার নিজস্ব পরিকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে সেখানে। এত দিন হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহ হলেও রিপোর্টের জন্য বাইরের সংস্থার উপরে নির্ভর করতে হত। নিজস্ব ব্যবস্থাপনা থাকলে রিপোর্ট জানার জন্য অপেক্ষার সময় কমবে। প্রকারান্তরে যা দ্রুত চিকিৎসা শুরুর ক্ষেত্রে কার্যকর হবে বলে আশা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
এর পাশাপাশি, প্রধান হাসপাতালে রোগীর চাপ কমাতে অপেক্ষাকৃত কম অসুস্থ রোগীদের জন্য বেহালায় পূর্ব রেলের স্পোর্টস কমপ্লেক্সে কোভিড ম্যানেজমেন্ট সেন্টার গড়ছেন কর্তৃপক্ষ। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই ওই ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে বলে খবর। এ ছাড়া, বহির্বিভাগে আসা রোগীদের জন্য চালু হয়েছে পৃথক অ্যাপ। তার মাধ্যমে ১৫ দিন আগে বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসককে দেখানোর সময় নির্দিষ্ট করা যাবে বলে দাবি রেলের। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য সিসিইউ-এ ২০টি শয্যা বাড়ানো হচ্ছে। করোনা রোগীদের চিকিৎসার প্রয়োজন মেটাতে ২৭টি ভেন্টিলেটর এবং ২১টি ইসিজি মেশিনও কেনা হবে।
বি আর সিংহ হাসপাতালে অক্সিজেনের চাহিদা মেটাতে এখন দৈনিক ছ’হাজার লিটার উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন অক্সিজেন প্লান্ট রয়েছে। শীঘ্রই সেখানে ১৩ হাজার লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন আর একটি প্লান্ট চালু হবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। আপৎকালীন পরিস্থিতির মোকাবিলায় কেনা হয়েছে ৭৫টি অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে নিয়োগ করা হয়েছে ৪৬ জন চিকিৎসক, ৪২ জন নার্স ও একাধিক ল্যাব টেকনিশিয়ান। তার মধ্যে ক্রিটিক্যাল কেয়ার টেকনিশিয়ানও আছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, নতুন নিযুক্ত অস্থায়ী চিকিৎসকের সংখ্যা ধরে মোট ১৯৯ জন চিকিৎসক রয়েছেন। অস্থায়ী নিয়োগ ধরে নার্স রয়েছেন ৫৭৯ জন। রোগীদের যে খাবার দেওয়া হয়, তার মানোন্নয়নে পৃথক সংস্থাকে খাবার সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পূর্ব রেলের কর্মীদের জন্য ২৬টি প্রতিষেধক কেন্দ্র চালু হয়েছে। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী বলেন, ‘‘উপযুক্ত পরিষেবা দিতে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’
রেলের এই তৎপরতাকে স্বাগত জানিয়েছে কর্মী সংগঠন। ইস্টার্ন রেলওয়ে মেন্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অমিতকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘দেরিতে হলেও পরিকাঠামোর ঘাটতি মেটাতে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ সদর্থক। তবে, পুরো ব্যবস্থাপনায় যথাযথ সমন্বয় গড়ে তোলা জরুরি। তা না হলে উদ্যোগের সুফল মিলবে না।’’