Coronavirus in Kolkata

সুরক্ষা ছাড়াই কেনাবেচা রাতের ফলবাজারে

জোড়াসাঁকো থানার দাবি, ওই বাজারে দূরত্ব-বিধি মানা হচ্ছে কি না দেখতে প্রতি রাতে টহল দেওয়া হয়।

Advertisement

জয়তী রাহা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২০ ০৫:৩৩
Share:

অগ্রাহ্য: ফল কেনা-বেচার কাজে জড়িতদের কারও মুখেই নেই মাস্ক, মানা হচ্ছে না দূরত্ব-বিধিও। কলেজ স্ট্রিটে বর্ণপরিচয় মার্কেটের কাছে আমের আড়তে। ছবি: সুমন বল্লভ

রাত ১টা। লকডাউন শিথিল হওয়া শহরে জেগে উত্তর কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের বর্ণপরিচয় মার্কেটের সামনে আমের আড়ত। রাস্তার দু’দিকে দাঁড়িয়ে ছোট আর মাঝারি সাত-আটটি মালবাহী গাড়ি। কোনওটি বোঝাই ডাবে, কোনওটি আম-লিচুতে ভর্তি। একটা করে গাড়ি ঢুকছে, আর সঙ্গে সঙ্গে হাজির হয়ে যাচ্ছেন বিলাল, রজ্জাক, আমির, জিতেন, দুলাল, লক্ষ্মণেরা। লুঙ্গি গোটানো, গলায় গামছা। মুখে মাস্ক নেই। গা-ঘেঁষাঘেঁষি করেই চলছে গাড়ি খালি করার কাজ। করোনা সংক্রমণ ঠেকানোর অন্যতম প্রধান শর্ত যে দূরত্ব-বিধি মেনে চলা, তাঁদের দেখে কে বলবে সে কথা!

Advertisement

অথচ করোনা-আতঙ্কেই গত আড়াই মাস বন্ধ ছিল এই মানুষগুলির রোজগার। প্রতিদিনের খাবার জোটাতে তাঁদের ভরসা ছিল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা পুলিশ। তার পরেও এই বেপরোয়া ভাব? ব্যবসায়ী সিরাজুল শেখের যুক্তি, বেপরোয়া নয়। এর মূ‌ল কারণ অনভ্যাস এবং তাঁদের মতো করে এমন বিধির প্রচার না-হওয়া। কাজের তদারকি করতে নিজে অবশ্য মাস্ক এবং গ্লাভস পরেছিলেন সিরাজুল। কিন্তু যাঁরা কাজটা করছেন, অধিকাংশের সে-সবের বালাই নেই। তা-ও যাঁরা মাস্ক পরেছেন, তাঁদের মাস্কও ঝুলছে গলায়!

বসিরহাটের ডাব ব্যবসায়ী, প্রৌঢ় রমজান সর্দারকে দেখা গেল মাস্ক ছাড়াই কাজে ব্যস্ত। কেন পরেননি মাস্ক? ‘‘মাথা থেকে আড়াই মাসের ক্ষতির ভার সরাতে মালিক-শ্রমিক সকলে এখন একজোট। এমনই পরিস্থিতি যে, করোনা না-হলেও আমাদের অনেককে মরতে হবে। স্রেফ না-খেতে পেয়ে। মাস্ক-গ্লাভস পরা বা এ নিয়ে ভাবার ফুরসত কোথায়?’’— জবাব রমজানের।

Advertisement

নদিয়ার শান্তিপুরের হিমসাগর আমের আড়তদার এবং কলেজ স্ট্রিট মার্কেট ভেজিটেবল অ্যান্ড ফ্রুটস হোলসেলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সুশান্ত দে-র দাবি, ‘‘আমরা সংগঠনের তরফে সবাইকে মাস্ক বিলি করেছি। নিজেও মাস্ক-গ্লাভস পরেছি।’’ পকেট থেকে বার করে স্যানিটাইজ়ারও দেখালেন। কিন্তু যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের মাস্ক কোথায়? সঙ্গে সঙ্গে সুশান্তবাবু আশপাশের সবাইকে বলতে শুরু করলেন, ‘‘তোমরা মাস্ক পরনি কেন? কেন ঘেঁষাঘেঁষি করে বসছ?’’ পরে তিনি বলেন, ‘‘কত বার বলব বলুন? ব্যবসা সামলাব না এ সব দেখব?’’

কী বক্তব্য কলকাতা পুরসভার? ৩৮, ৩৯ এবং ৪০— পুরসভার তিনটি ওয়ার্ডের সীমানায় ফলের এই পাইকারি বাজার। তিন ওয়ার্ডের পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্যেরাই মানছেন, পুরসভার তরফে এখানকার মোটবাহকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয় না। যদিও ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জসিমউদ্দিনের দাবি, ‘‘চার দিন অন্তর বাজার জীবাণুমুক্ত করা হয়। এখনও পর্যন্ত কারও অসুস্থতার খবর আসেনি। তবে এটা ঠিক, এত দিন স্বাস্থ্য পরীক্ষার কথা ভাবা হয়নি। এ বার প্রশাসকমণ্ডলীতে আবেদন জানাব।’’ পুর প্রশাসকমণ্ডলীর আর এক সদস্য তথা পুর স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘প্রত্যেক মোটবাহকের করোনা পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। তবে বাজারগুলিতে কী ভাবে বিক্রেতাদের তাপমাত্রা মাপা যায় এবং তাঁরা যাতে দূরত্ব-বিধি মেনে ব্যবসা করেন তা নিশ্চিত করা যায়, তা নিয়ে পুর প্রশাসকমণ্ডলীতে আলোচনা চলছে।’’

থানাই বা কী করছে? জোড়াসাঁকো থানার দাবি, ওই বাজারে দূরত্ব-বিধি মানা হচ্ছে কি না দেখতে প্রতি রাতে টহল দেওয়া হয়। রোজ ওই এলাকা জীবাণুমুক্ত করা হয়। কেউ মাস্ক না-পরলে মহামারি আইন অনুযায়ী অভিযোগও দায়ের করা হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement