দীর্ঘদিন পরে মেট্রো সকলের। চলার কথা ৫০% যাত্রী নিয়ে। অথচ শুরুর দিনেই ভিড় দমদম মেট্রো স্টেশনে। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র।
প্রায় দু’মাস সাধারণ যাত্রীদের জন্য বন্ধ থাকার পরে শুক্রবার চালু হল মেট্রো। তবে প্রথম দিনের চিত্র দেখে আতঙ্কিত যাত্রীদের মধ্যেই কেউ কেউ কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ের প্রমাদ গুনলেন। এ দিন যাত্রীদের মুখে মাস্ক ছিল বটে, কিন্তু এক ইঞ্চিও জমি না-ছাড়ার পণে ঠাসা মেট্রোয় ছাড় পায়নি দুই কামরার মাঝের অংশও (ভেস্টিবিউল)। দূরত্ব-বিধি মানার আবেদন নিয়ে মাইকে ঘোষণা বা রেলরক্ষী বাহিনীর সক্রিয়তা, কোনও কিছুই সেই অর্থে দেখা যায়নি। দিনের শেষে প্রাপ্তি বলতে, আগামী সপ্তাহ থেকে বাড়ানো হচ্ছে মেট্রোর সংখ্যা।
সকাল ৯টায় মহানায়ক উত্তমকুমার স্টেশনে দক্ষিণেশ্বরগামী মেট্রোয় ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সাড়ে ৯টার চাঁদনি চক স্টেশনে কবি সুভাষগামী মেট্রো দেখেও মনে হয়েছে, স্বাভাবিক সময়ের অফিস টাইম। সকালের ঘণ্টা দুয়েক মেট্রোর দরজা খুলতেই সেন্ট্রাল, চাঁদনি চক, এসপ্লানেড, পার্ক স্ট্রিট, ময়দান, রবীন্দ্র সদন স্টেশনে হুড়মুড়িয়ে নেমে চলমান সিঁড়ির দিকে ছুটছিলেন যাত্রীরা। সন্ধ্যায় দমদম, দক্ষিণেশ্বর, মহানায়ক উত্তমকুমার, নেতাজি, গীতাঞ্জলি, কবি নজরুল স্টেশনেও ভিড় ছিল যথেষ্ট। ভিড় ট্রেনে ঠাসাঠাসি করে সাত থেকে আট জন বসেই যাত্রা করেছেন। ভিড় মেট্রো অবশ্য এ দিন দেখা গিয়েছে সকাল এবং সন্ধ্যার ব্যস্ত সময়ে। বাকি সময়ে ফাঁকাই ছিল কামরাগুলি।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিশেষ পরিষেবায় যুক্ত কর্মীদের নিয়ে কাজের দিনে গড়ে ৫০ হাজার মানুষ মেট্রোয় যাতায়াত করেছেন। শুক্রবার দিনের শেষে কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, ১৯২টি ট্রেন চালিয়ে যাত্রী হয়েছে ১,২৮,৯৫৭।
এমন ভিড় দেখে আগামী সোমবার থেকে মেট্রোয় ট্রেনের সংখ্যা বাড়িয়ে ২০৮ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। আপ এবং ডাউনে দৈনিক ১০৪টি করে ট্রেন সোম থেকে শুক্রবার চলবে। এর মধ্যে দক্ষিণেশ্বর থেকে কবি সুভাষের মধ্যে চলবে ১৩৮টি ট্রেন। পরিস্থিতি দেখতে এ দিন মেট্রো রেলের জেনারেল ম্যানেজার মনোজ জোশী সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ পার্ক স্ট্রিট থেকে মেট্রোয় নোয়াপাড়া যান। কারশেড এবং ট্রেনের রক্ষণাবেক্ষণের অবস্থা দেখেন তিনি।
মেট্রো পরিষেবা চালু হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই খুশি যাত্রীরা। তেমনই এক জন দমদমের প্রাইভেট রোডের বাসিন্দা সিরাজ আলি। প্রতিদিন সাইকেলে কলেজ স্ট্রিট যেতেন বইয়ের দোকানের ওই কর্মী। দমদম থেকে মেট্রোয় ওঠার সময়ে এ দিন বললেন, “খুব ভিড় ঠিকই। তবে এতটা পথ সাইকেলে যাওয়া থেকে তো বাঁচলাম।” উত্তর শহরতলির অনেকেই মধ্য কলকাতায় আসার জন্য দমদম বা দক্ষিণেশ্বর থেকে মেট্রোর যাত্রাকে স্বস্তির মনে করছেন। বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মী মনজিৎ কউর বলেন, “অনুমতি থাকায় মাসখানেক মেট্রোয় যাতায়াত করেছি। আজ মেট্রোয় সত্যিই ভিড় বেশি।”
এ দিন প্রথমে দমদম স্টেশনে কিছুটা বিভ্রান্ত হয়েছিলেন যাত্রীরা। দু’প্রান্তের প্রবেশপথই খুলে দিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তা যাত্রীদের না-জানা থাকায় অনেকেই এক দিকে ভিড় করেন। যদিও মেট্রো জানিয়েছে, সব ক’টি স্টেশনেই বেশি সংখ্যক প্রবেশপথ খুলে দেওয়া এবং চলমান সিঁড়ি সচল রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।