প্রতীকী ছবি।
করোনার মোকাবিলায় কলকাতা পুরসভার পরিকাঠামো নিয়ে আগেই প্রশ্ন উঠেছে।
অভিযোগ, অনেক সময়েই করোনা রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়া যায় না। একই অভিযোগ শববাহী গাড়ি পাওয়ার ক্ষেত্রেও। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পুর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অথবা শহরের বিভিন্ন ক্লাবের কাছে অ্যাম্বুল্যান্স এবং শববাহী গাড়ি চাইলেও অনেক সংস্থাই করোনার আতঙ্কে তাদের গাড়ি পুরসভাকে দিতে রাজি হচ্ছে না।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, এ রকম জরুরি পরিস্থিতিতে কলকাতা পুরসভা কেন বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে অ্যাম্বুল্যান্স বা শববাহী গাড়িগুলি ব্যবহারের জন্য নিচ্ছে না?
পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে কর্তৃপক্ষ আইনের সাহায্য নিয়ে ক্লাবগুলিকে নোটিস দেওয়ার কথা ভেবেছেন। প্রয়োজনে এই গাড়ি জোগাড় করতে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সঙ্গেও পুর কর্তৃপক্ষ আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওই দফতর তাদের আইনে অ্যাম্বুল্যান্স এবং শববাহী গাড়ি জোগাড় করে দিতে পারবে।
কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান তথা প্রাক্তন মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, “আপাতত পুরসভাকে আটটি সংস্থা স্বেচ্ছায় অ্যাম্বুল্যান্স দিয়েছে। আরও সাতটি সংস্থা দেবে বলে জানিয়েছে। আমার নিজের একটি সংস্থা থেকে একটি অ্যাম্বুল্যান্স পুরসভাকে দিয়েছি। করোনার সময়ে রোগীদের পরিষেবা দিতেই বিধায়ক এবং সাংসদদের জানাচ্ছি যে সব অ্যাম্বুল্যান্স কাজে লাগছে না, সেগুলি আমাদের দিলে কাজের সুবিধা হয়। বিষয়টি নজরে রাখছি।’’
কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য তথা প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ আগেই জানিয়েছেন, পুরসভার নিজস্ব অ্যাম্বুল্যান্স এবং শববাহী গাড়ির সংখ্যা যথেষ্ট নয়। সেই কারণেই চুক্তির বিনিময়ে পুর কর্তৃপক্ষ বাইরে থেকে ওই ধরনের যানবাহন ভাড়া নিতে চায়। যে সব সংস্থার ওই ধরনের গাড়ি রয়েছে তাদের কাছে আবেদনও করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
সমস্যা কোথায়?
শহরের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং ক্লাবের একাংশের বক্তব্য, করোনার আতঙ্কেই তারা এই ধরনের যান পুরসভাকে দিতে চাইছে না। আশঙ্কা, পরবর্তী কালে এই গাড়িগুলি নাগরিকেরা হয়তো আর নিতে চাইবেন না। যদিও পুরসভার দাবি, ব্যবহারের পরে যানগুলি জীবাণুমুক্ত করে পরিষ্কার করা হবে। তার পরেই সেগুলিকে সংস্থার কাছে হস্তান্তর করা হবে।
সমাজগড়ের একটি ক্লাবের সম্পাদক অমিত সেনাপতি বলেন, “আমাদের অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে। কিন্ত করোনার আতঙ্কে পুরসভাকে অ্যাম্বুল্যান্স দিতে পারছি না। গাড়ির চালক এবং তার সহকারী তাঁরা রাজি হবেন কি না, তা নিয়েই মূল সমস্যা তৈরি হয়েছে। এই বিষয়গুলি কী ভাবে মোকাবিলা করা যাবে তা নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন।’’
বেলেঘাটার একটি ক্লাবের অন্যতম কর্ণধার দীপঙ্কর দাস বলেন, “আমাদের শববাহী যান রয়েছে। পুরসভাকে করোনা রোগে মৃত ব্যক্তিদের নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করতে দেওয়া নিয়ে
আতঙ্ক কাজ করছে। পরবর্তী কালে অন্য রোগীর দেহ নিয়ে যেতে সমস্যা হবে কি না, তা জানা নেই। পুরসভাকে এই বিষয়গুলি জানাতে হবে।’’
রিজেন্ট এস্টেট অঞ্চলের একটি সংস্থার তরফে সংস্থার সম্পাদক স্বপন বসু বলেন, “বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের পাশে আমরাও দাঁড়াতে চাই। কিন্তু করোনার কথা মাথায় রেখেই চটজলদি কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে পারছি না। সংস্থার অন্য সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে পুরসভাকে জানাব।’’
পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, আপাতত পুরসভার নিজস্ব অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে ২২টি। শববাহী গাড়ির সংস্থা ছ’টি। বর্তমান অবস্থায় অন্তত পুরসভা ৫০টি অ্যাম্বুল্যান্স এবং ১০টি শববাহী যান দরকার বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানান।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)