প্রতীকী ছবি।
কলকাতায় হু হু করে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে আপাতত তিনটি সেফ হোম চালু করতে চলেছে কলকাতা পুরসভা। সোমবার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে ই এম বাইপাস, গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম ছাড়াও উত্তর কলকাতার হরেকৃষ্ণ শেঠ লেনে একটি সেফ হোম শীঘ্রই চালু করা হবে।’’ পুরসভার এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘কলকাতা পুরসভা করোনা মোকাবিলায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করতে প্রস্তুত। পুরসভা পরিচালিত সমস্ত সেফ হোমই প্রস্তত রাখা হচ্ছে।’’
কলকাতা পুরসভার কমিশনার সস্ত্রীক করোনায় আক্রান্ত হয়ে গৃহ-পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। অন্য দিকে, মেয়রের আপ্ত সহায়ক-সহ তাঁর বাড়ির পাঁচ সদস্যও করোনায় আক্রান্ত। পুরভবনের আধিকারিক ও কর্মীদের মধ্যে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে।
ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ জানান, বাইপাসের সেফ হোমে আপাতত ২০০টি, গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামে ১০০টি ও হরেকৃষ্ণ শেঠ লেনে ৫০টি শয্যার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। পরিস্থিতি বুঝে এই সংখ্যা বাড়ানো হবে। মেয়র জানান, করোনা আক্রান্তদের অনেকেরই বাড়িতে পৃথক থাকার মতো ব্যবস্থা থাকে না। তাঁদের জন্যই এই সেফ হোম চালু করা হচ্ছে।
তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে
আক্রান্তেরা বেশির ভাগই উপসর্গহীন হওয়ায় সেফ হোমে ডাক্তার, নার্স থাকলেও অক্সিজেন সিলিন্ডার বা কনসেন্ট্রেটরের প্রয়োজন নেই বলেই মনে করেন মেয়র। তাঁর কথায়, ‘‘সেফ হোমে অক্সিজেন সিলিন্ডার, কনসেন্ট্রেটর থাকবে। তবে এখন যা অবস্থা, তাতে সেগুলি ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। পরিস্থিতি বুঝে ব্যবহার করা যাবে।’’
পুরসভার তরফে অবশ্য আলিপুরের ‘উত্তীর্ণ’ এবং বেহালা পলিটেকনিক কলেজেও সেফ হোম চালু করার প্রস্তুতি নিয়ে রাখা
হচ্ছে। এর পাশাপাশি, প্রয়োজনে অন্য সেফ হোমগুলিও চালু করা হতে পারে। কোভিডের মোকাবিলায় এ দিন পুরভবনে পুর স্বাস্থ্য
দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ছিলেন ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ, মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার, সন্দীপন সাহা প্রমুখ। সেই বৈঠকে বাজার দফতরের আধিকারিকেরাও উপস্থিত ছিলেন। মেয়র জানান, শহরের বিভিন্ন বাজারে
করোনা-বিধি যাতে কঠোর ভাবে মেনে চলা হয়, সে বিষয়ে বাজার
দফতরের ডিজি-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুরসভার তরফে প্রতিটি বাজারে ‘নো মাস্ক, নো এন্ট্রি’ নোটিসও টাঙানো হবে। পুলিশকেও কঠোর
হতে বলা হয়েছে। মাস্ক না পরলে হকারদের যাতে বসতে দেওয়া না হয়, তা-ও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে পুলিশকে। মেয়র জানান, ক্রেতা ও বিক্রেতা, প্রত্যেককেই মাস্ক পরতে হবে। নইলে পুলিশ আইনানুগ
ব্যবস্থা নেবে।
মেয়রের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের পর থেকেই বিধায়ক, মেয়র পারিষদ থেকে শুরু করে কাউন্সিলরেরা অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সংক্রমণের সেই ধারা এখনও থামেনি। রাজ্য সরকার এর মধ্যে সরকারি অফিসের কর্মীদের ৫০ শতাংশ হাজিরার কথা ঘোষণা করেছে। তবে মেয়র এ দিন জানান, পুরসভার যে সমস্ত বিভাগ জরুরি পরিষেবার কাজে যুক্ত, সেখানে ৫০ শতাংশের বেশি কর্মী নিয়েই কাজ করতে হবে। অন্যান্য বিভাগে ৫০ শতাংশ হাজিরা-বিধি বলবৎ থাকবে।
মেয়র জানিয়েছেন, পুরসভা ইতিমধ্যেই এক লক্ষ মাস্ক বিতরণ করেছে। আরও ছ’লক্ষ মাস্ক কেনা হবে। এ হেন পরিস্থিতিতে
শহরের ব্যবসায়ী মহলকে পুরসভার পাশে থাকতে অনুরোধ জানিয়ে ফিরহাদ বলেন, ‘‘শহরের ব্যবসায়ীরা অতীতে করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে যে ভাবে পুরসভার পাশে থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার, কনসেন্ট্রেটর সরবরাহ করেছেন, সেই ভাবে এই সঙ্কটের সময়েও এগিয়ে আসুন।’’