প্রতীকী ছবি।
দক্ষিণ কলকাতাই যত মাথাব্যথার কারণ। গত কয়েক দিন ধরে দক্ষিণ কলকাতার অন্তর্গতকলকাতা পুরসভার ১০ ও ১২ নম্বর বরোয় করোনা সংক্রমণের হার বেড়েছে। কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শনিবার সাত, আট এবং নয় নম্বর বরো এলাকাতেও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বেড়েছে।
কলকাতায় গত বৃহস্পতিবার করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ২৯৯ জন। শুক্রবার সংখ্যাটাকমলেও (১১৬) শনিবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪৮-এ। গত দু’সপ্তাহ ধরে শহরে করোনা আক্রান্তের লেখচিত্র এমনই ওঠানামা করছে। বেশ কয়েক মাস আক্রান্তের সংখ্যা একদম কম থাকার পরে এই ওঠানামাকে চিন্তার কারণ বলে মনে করছেনচিকিৎসকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, সাধারণ মানুষের উদাসীনতার মাসুল গুনতে হচ্ছে এখন। মাস্ক প্রায় কেউই আর পরছেন না। ট্রেন, বিমান,বাসে মাস্ক পরা নিয়ে কড়াকড়ি উধাও। এই পরিস্থিতিতে করোনা চলে গিয়েছে ভেবে মানুষ মাস্কবিহীন হয়েই বাইরে বেরোলে বিপদ আরও বাড়বে। বক্ষরোগ চিকিৎসকঅনির্বাণ নিয়োগীর কথায়, ‘‘করোনা যে হারে বাড়ছে, তাতে বাড়ির বাইরে বেরোনোর সময়ে মাস্ক পরতেই হবে। একমাত্র মাস্ক পরার মাধ্যমেই আমরা করোনাকে রুখতে পারি।পাশাপাশি, স্যানিটাইজ়ারও ব্যবহার করতে হবে।’’
কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শনিবার সাত নম্বর বরোয়করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩৪। আট, নয় এবং ১০ নম্বর বরোয় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৪৫, ২৭ এবং ৪৬। দেখা গিয়েছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আবাসনেরবাসিন্দারাই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। সাত নম্বর বরোর ট্যাংরা, শেক্সপিয়র সরণি, কড়েয়া, কসবা এলাকাতেও আক্রান্তের হার বাড়ছে। পিছিয়ে নেই আট নম্বর বরোর গড়িয়াহাট,বালিগঞ্জ, ভবানীপুর এলাকা। ন’নম্বর বরোর আলিপুর ছাড়াও ১০ নম্বর বরোর নিউ আলিপুর, গরফা, লেক এলাকা, গল্ফ গ্রিন, যাদবপুর, নেতাজিনগর, রিজেন্ট পার্ক এলাকাতেও সংক্রমিতের হার বাড়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে গত কয়েকদিন ধরেই।
করোনার দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ঢেউয়ের সময়ে দক্ষিণ কলকাতার ৮, ৯, ১০, ১১, ১২ বরোএলাকার বিশেষ করে বিভিন্ন আবাসনে করোনা সংক্রমণের হার ছিল খুব বেশি। তৃতীয় ঢেউয়ের সময়ে কলকাতা পুরসভার তরফে বিভিন্ন আবাসন কমিটিকে বাড়তি সতর্কতা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, ফের দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন আবাসনে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় ওই সমস্ত আবাসন কমিটিকে সতর্ক করা হয়েছে। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা, স্যানিটাইজ়ারের নিয়মিত ব্যবহার করা, আবাসনে ঢোকা-বেরোনোর জায়গায় স্যানিটাইজ়ার রাখারপরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলেসূত্রের খবর।
পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সংক্রমণ বাড়ার প্রবণতা শুরুহয়েছে। ৫ জুন শহরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২০। গত কয়েক দিনের মধ্যে ২২ জুন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সর্বাধিক (৩৩৯) হয়েছিল। তবে কলকাতাপুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, করোনা আক্রান্তের বেশির ভাগই উপসর্গহীন। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের তরফেসংক্রমিতদের পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত ফোনে যোগাযোগ করা হচ্ছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, খুব বেশি সমস্যা না হলে বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা করানো সম্ভব। নিয়মিত গরম জলে গার্গল করারপাশাপাশি প্রোটিনজাতীয় খাবার খেতে পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। চিকিৎসক অনির্বাণ নিয়োগী জানাচ্ছেন, করোনা আক্রান্ত রোগী নিয়মিত সুষম খাবার খাবেন। প্রচুরপরিমাণে জল খেতে হবে। বিশ্রামে থাকতে হবে। তবে শ্বাসকষ্ট দেখাদিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।