এই অ্যাপার্টমেন্ট থেকেই ঝাঁপ দেন রামকিশোর কেজরীবাল। নিজস্ব চিত্র।
নিজের অ্যাপার্টমেন্টের তলাতেই রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া গেল ৭৩ বছরের এক বৃদ্ধকে। পুলিশ সূত্রে খবর ওই বৃদ্ধ কোভিড আক্রান্ত। ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব কলকাতার ফুলবাগান থানা এলাকার নারকেলডাঙা মেইন রোডের উপর একটি আবাসনে। তবে আত্মহত্যা না কি দুর্ঘটনার জেরে ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সকাল সওয়া ৬টা নাগাদ ওই আবাসনের বাসিন্দারা অ্যাপার্টমেন্টের মধ্যে রাস্তায় বৃদ্ধকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়়ে থাকতে দেখেন। আবাসনের লোকজনই তাঁকে তিনতলার বাসিন্দা রামকিশোর কেজরীবাল বলে শনাক্ত করেন। তাঁরাই পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে রামকিশোরের দেহ হাসপাতালে পাঠানোর বন্দোবস্ত করে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
রামকিশোর ওই ফ্ল্যাটে তাঁর দুই ছেলে এবং স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন। তিনি আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোডের একটি সেরামিক সংস্থার কর্মী ছিলেন। তার একমাত্র মেয়ে বিবাহিত। তিনি থাকেন উত্তরপ্রদেশে। পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁরা যখন বৃদ্ধকে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান, তখনও তাঁরা জানতেন না যে তিনি কোভিড আক্রান্ত। পরিবারের সদস্যরাও কিছু বলেননি। ফলে পিপিই বা বিশেষ কোনও ব্যবস্থা ছাড়াই বৃদ্ধকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। পরে পুলিশ আধিকারিকরা জানতে পারেন যে, বৃদ্ধ কোভিড আক্রান্ত ছিলেন। গত ২৭ জুলাই তাঁর কোভিড টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
আরও পড়ুন: হাসপাতালের অগ্রিম চাই ২ লক্ষ! মৃত্যু কোভিড আক্রান্ত বৃদ্ধার
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের ধারণা, তিনি নিজেই ঝাঁপ দিয়েছেন নয়তো দুর্ঘটনাবশত পড়ে গিয়েছেন। কেউ ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে এমন সম্ভাবনা আপাতত দেখতে পাচ্ছেন না তদন্তকারীরা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সাড়ে তিনটে নাগাদ ওই বৃদ্ধ ছাদে গিয়েছিলেন লিফটে করে তা জানা গিয়েছে আবাসনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে। তার কিছু পরে অন্য এক বাসিন্দাও ছাদে যান। তিনি কিছু অস্বাভাবিক দেখেননি। সেখান থেকে পুলিশের ধারণা, সাড়ে তিনটে থেকে পৌনে চারটের মধ্যে ঘটনাটি ঘটেছে। তবে দেওয়ালের পাশ দিয়ে যাওয়া কেবলের তার ছেঁড়া দেখে তদন্তকারীদের ধারণা ওই তার আঁকড়ে ধরতে চেয়েছিলেন বৃদ্ধ। সেখান থেকে তদন্তকারীদের ধারণা শেষ মুহূর্তে বাঁচার চেষ্টা করেছিলেন তিনি নয়তো দুর্ঘটনাবশত পড়ে গিয়েছেন।
তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, অফিস থেকে ঋণ করে তিনি একটি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন মানিকতলায়। যাক দাম প্রায় ২ কোটি টাকা। সেই ফ্ল্যাটের দখল পাচ্ছিলেন না তিনি। তা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল এবং তিনি অবসাদগ্রস্ত ছিলেন। তা থেকে প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের অনুমান, অবসাদ থেকেই তিনি ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তবে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
আরও পড়ুন: রাজ্যে ৫ মাসের মাথায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষের গন্ডি ছাড়াল
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)