প্রতীকী ছবি
স্বাস্থ্যকর্মীর পরে এ বার নার্স— করোনা-যোদ্ধাদের হেনস্থা করার ঘটনা ঘটেই চলেছে। করোনা আক্রান্ত বলে গুজব রটিয়ে উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভার মণিরামপুরে একঘরে করা হয়েছিল বি এন বসু হাসপাতালের এক স্বাস্থ্যকর্মীকে। ওই একই এলাকা এবং একই হাসপাতালের এক নার্স এবং তাঁর স্বামীকে হেনস্থার শিকার হতে হল বৃহস্পতিবার। অভিযোগের তির নার্সের প্রতিবেশী এবং পুলিশের দিকেও।
সুচিত্রা প্রামাণিক নামে ওই নার্সের শরৎনগরের বাড়িতে পুলিশ ‘হোম কোয়রান্টিন’ কাগজ সেঁটে দেয় বলে অভিযোগ। শারীরিক নিগ্রহ করা হয় তাঁর স্বামীকেও। এমনকি পুলিশ ওই নার্সের মোবাইল ফোনটিও কেড়ে নেয় বলে অভিযোগ। অবশ্য বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হতেই শুক্রবার পুলিশ সুচিত্রার বাড়ি থেকে কোয়রান্টিনের কাগজ খুলে নিয়ে যায়। ফেরত দেয় তাঁর মোবাইলও।
সুচিত্রা উচ্চশিক্ষার জন্য সোনারপুরের দিকে একটি নার্সিং কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। স্বামীর সঙ্গে তিনি সোনারপুরেই থাকতেন। লকডাউনে কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে তাঁরা নিজেদের গৃহবন্দি রেখেছিলেন। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য ভবন নির্দেশ জারি করে উচ্চশিক্ষার জন্য যাঁরা ছুটিতে রয়েছেন, তাঁদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিজেদের হাসপাতালে কাজে যোগ দিতে হবে। ফলে বুধবার সুচিত্রা ও তাঁর স্বামী গাড়ি জোগাড় করে সোনারপুর থানায় যান। পুলিশ তাঁদের এবং গাড়ির চালকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পরে ব্যারাকপুর ফেরার অনুমতি দেয়। ওই দিনই আবার ব্যারাকপুরের ওই হাসপাতালেই সুচিত্রা এবং তাঁর স্বামীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। তার পরেই সুচিত্রাকে কাজে যোগ দিতে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: বিঘ্ন যাত্রাতেও, শুরুই হয়নি মহরতের প্রস্তুতি
অভিযোগ, বৃহস্পতিবার সকালে সুচিত্রার বাড়িতে এসে নোয়াপাড়া থানার তিন পুলিশকর্মী তাঁদের সঙ্গে কোনও কথা না বলেই বাড়ির বাইরের দেওয়ালে ‘হোম কোয়রান্টিন’ লেখা পোস্টার সেঁটে দেন। পুলিশের সাফাই, পাড়ার লোকেরা অভিযোগ করেছিলেন বলেই ওই পদক্ষেপ। সুচিত্রাকে হাসপাতালে পৌঁছনোর জন্য তাঁর স্বামী ওই দিন বিকেলে মোটরবাইক বার করে বাড়ির বাইরে রেখেছিলেন। তার মধ্যেই পাড়ার লোকজন সুচিত্রাদের বাড়িতে ঢুকে পড়েন। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই মহিলা। সুচিত্রা বলেন, “ওঁরা জোরে জোরে দরজায়-জানলায় ধাক্কা দিতে শুরু করেন। বলেন, তোরা বেরিয়ে আয়। বাইরে এলে আমাদের কাছে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট দেখতে চান তারা। তারই মধ্যে পুলিশ আসে।”
আরও পড়ুন: মুক্তিপণ চেয়ে ফোন, মিলল নিখোঁজ কিশোরের দেহ
সুচিত্রার অভিযোগ, “পুলিশের সামনে আমাদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করা হয়।মোবাইলে আমাদের ছবি-ভিডিয়ো করা শুরু হয়। পুলিশের সামনেই ভিড় থেকে হুমকি-হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় যে, বাইরে বেরোলে আমাদের দেখে নেওয়া হবে। কয়েক জন আমার স্বামীকে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আমি মোবাইল বার করে ক্যামেরা অন করতেই এক পুলিশকর্মী আমার হাত থেকে মোবাইল ছিনিয়ে নেন। আমি বারবার বলি মোবাইলের মধ্যেই সরকারি নির্দেশ, স্বাস্থ্য পরীক্ষার তথ্য রয়েছে। কিন্তু পুলিশ তখন মোবাইল ফেরত দেয়নি।’’ বৃষ্টির মধ্যেই হেঁটে হেঁটে সুচিত্রারা থানায় যেতে বাধ্য হন। তার পরে তিনি তাঁর স্বামীর ফোন থেকে হাসপাতালের সুপার সুদীপ্ত ভট্টাচার্যকে বিষয়টি জানান। হাসপাতাল সুপার পুলিশকর্তাদের বিষয়টি জানালে পুলিশ ফিরে যায়।
শুক্রবার উত্তর ব্যারাকপুরের পুর প্রধান মলয় ঘোষ ওই নার্সের বাড়িতে গিয়ে তাঁর পাশে থাকার বার্তা দেন। নোয়াপাড়া থানার পুলিশও দুঃখপ্রকাশ করে তাঁদের সব রকমের সাহায্যের আশ্বাস দেয়। তাঁদের বাড়িতে পুলিশ চাল-ডালও পাঠিয়েছে। এমনকি পাড়াতেও পুলিশ ঘোষণা করেছে, কেউ ওই নার্স বা তাঁর স্বামীকে ফের হেনস্থা করলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। তবে ঘটনার জেরে মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত ওই পরিবার।