Holi

ছোঁয়াচ বাঁচবে কী ভাবে? রঙের উৎসব ঘিরে আতঙ্ক

গত জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসে গিয়েছিল, সেখানে গত ২০ দিনে শহরে লাফিয়ে বেড়েছে সংক্রমণ।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২১ ০৬:২৯
Share:

দোলের কেনাকাটার ভিড়। বুধবার, বড়বাজারে । ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

মাস্ক পরার বালাই নেই কারও। দূরত্ব-বিধি মেনে দায়িত্ব পালনের চেষ্টাও চোখে পড়ছে না কোথাও। অনেকে মিলে এক জনের পিছনে ছুটে তাঁকে জাপটে ধরে এমন ভাবে রং মাখাচ্ছেন যে, করোনা-সতর্কতা তাঁদের মনে আছে বলে মালুম হয় না। দোলের এক সপ্তাহ আগে থেকেই শহরের নানা জায়গায় এমন ভাবে রং খেলা শুরু হয়েছে যে, রীতিমতো আতঙ্কিত চিকিৎসক থেকে সচেতন নাগরিকদের বড় অংশ। তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘বড়দিন বা দুর্গোৎসব নিয়ে যেখানে কড়া নির্দেশিকা জারি হয়েছিল, সেখানে ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে যে উৎসব পালন করা সম্ভবই নয়, তার ক্ষেত্রে কেন বাড়তি সতর্কতা থাকবে না?’’

Advertisement

প্রসঙ্গত, দিল্লি সরকারের থেকে উদাহরণ নিয়ে দেশের সব রাজ্যে দোল-হোলি, শব-এ-বরাত, বিহু, ইস্টার ও ইদে প্রকাশ্যে জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা জারি করার সুপারিশ করে বুধবারই
রাজ্য প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসে গিয়েছিল, সেখানে গত ২০ দিনে শহরে লাফিয়ে বেড়েছে সংক্রমণ। এই পরিস্থিতিতে আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, চলতি মাসে সংক্রমণের শতকরা হিসেব গত বছরের লকডাউনের আগের মার্চের হিসেবকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে। আর এরই মধ্যে শহরের নানা জায়গায় রীতিমতো পোস্টার দিয়ে জানানো হচ্ছে দোল উৎসব আয়োজনের কথা। কোথাও সপরিবার উপস্থিত থাকতে বলা হচ্ছে। কোথাও জানানো হচ্ছে, রঙের উৎসবের সঙ্গেই থাকছে খাবারের মেলা। উত্তর কলকাতার একটি আয়োজক সংস্থা আবার ঘোষণা করে রেখেছে, রং মাখার এবং মাখানোর প্রতিযোগিতা হবে তাদের এলাকায়। রং মাখা ‘সেরা মুখকে’ পুরস্কৃতও করবে তারা।

Advertisement

বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, এই আয়োজকদের বড় অংশই এক-একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত। করোনা অতিমারির কথা ভেবে জনতার উল্লাসে লাগাম পরানোর পরিবর্তে দোল উৎসবের মোড়কে জনসংযোগকেই তাঁরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। বৌবাজার এলাকার এমনই একটি উৎসবের উদ্যোক্তা দেবু ঘোষ বললেন, ‘‘অন্য ভিড় নিয়ে যখন মাথা ঘামানো হচ্ছে না, তখন সামান্য রং খেলা নিয়ে এত কথা হচ্ছে কেন?’’ যদিও ওই এলাকারই একটি দুর্গাপুজো কমিটি করোনার কথা বলে দর্শনার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল আদালত কড়া অবস্থান নেওয়ার আগেই। সেই প্রসঙ্গে দেবুর দাবি, ‘‘এখন পরিস্থিতি ভিন্ন।’’

চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার যদিও বলছেন, ‘‘পরিস্থিতি বরং আগের চেয়েও খারাপ। ছ’-সাতটি রাজ্যে এই মুহূর্তে করোনার ব্যাপক প্রকোপ চলছে। তবে করোনা তার মধ্যেই আটকে থাকবে ভাবলে দুর্ভাগ্য। দ্রুত প্রতিষেধক নেওয়ার পাশাপাশি দূরত্ব-বিধি মেনে চলা এবং বাইরে বেরোলেই মাস্ক পরে থাকার মতো সতর্কতা মেনে চলতেই হবে। সেই সঙ্গেই মনে রাখতে হবে, অফিসে তো নয়ই, বাড়িতেও একটি টিফিন বক্স থেকে অনেকে মিলে খাওয়া চলবে না। কারণ, সেই সময়েও মুখ আবরণহীনই থাকে।’’ চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী বললেন, ‘‘নির্বুদ্ধিতার একটা সীমা থাকে! যে উৎসব ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে করাই সম্ভব নয়, তা এই পরিস্থিতিতে পালনের কথা আসে কোথা থেকে? সতর্ক না হলে কিন্তু আগামী দিনে কী পরিস্থিতি আসতে চলেছে, তা চিন্তাও করা যাবে না।’’

এই চিন্তাহীন পরিবেশই জগৎ মুখার্জি পার্কের দোল উৎসবে দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ। গত রবিবার সেই রং খেলার আসরে মাস্ক তো নয়ই, দূরত্ব-বিধি পালনেরও কোনও রকম চেষ্টা দেখা যায়নি বলে দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের। সেখানকার অন্যতম উদ্যোক্তা দ্বৈপায়ন রায় যদিও দাবি করেছেন, ‘‘মাস্ক ছাড়া কাউকেই পার্কে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। উপস্থিতির সংখ্যাও কমিয়ে আনা হয়েছিল। তবে কাউকেই যে মাস্ক পরিয়ে রাখা যায়নি, এটা ঠিক। বহু দিন ধরে আয়োজন করছি, এ বার তাই বন্ধ রাখতে পারলাম না।’’

চিকিৎসক অরিজিৎ রায়চৌধুরী বললেন, ‘‘আসলে অনেকের মধ্যেই গা-ছাড়া ভাব এসেছে। মনে রাখতে হবে, কোনও সরকারই বলেনি, করোনা-বিধি মানার প্রয়োজন নেই। বেপরোয়া রং খেলার চেয়ে জীবনের রং ধরে রাখা যে অনেক বেশি মূল্যবান, সেটা নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement