প্রতীকী ছবি।
বেলেঘাটার আইডি হাসপাতাল থেকে রাজারহাটের কোয়রান্টিন সেন্টার— সর্বত্র এই দুর্যোগে বাধ্যতামূলক তাঁদের উপস্থিতি। এমনকি আসন্ন লকডাউনে অবরুদ্ধ শহরে এটিএম কাউন্টারেও টাকা পৌঁছতে একমাত্র ভরসা তাঁরা। অথচ, বিপদে কোনও স্বীকৃতি নেই তাঁদের!
ভোট-প্রচারে সেই মানুষগুলির ভূমিকা মেলে ধরে নিজেকে তাঁদেরই এক জন বলে দাবি করেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার তরফে প্রশ্ন উঠছে, সত্যিকারের বিপদে জরুরি পরিষেবার অঙ্গ হিসেবে এই পেশাগত চৌকিদারদের কথা কেন মনে রাখা হয় না?
জরুরি পরিষেবার অঙ্গ হিসেবে তাদের চিহ্নিত করতে এ বার প্রধানমন্ত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানাল দেশের নিরাপত্তারক্ষীদের সর্বভারতীয় সংগঠন। ‘সেন্ট্রাল অ্যাসোসিয়েশন অব প্রাইভেট সিকিউরিটি ইন্ডাস্ট্রি’-র পশ্চিমবঙ্গ শাখার সম্পাদক সতনম সিংহ অহলুওয়ালিয়া টুইট করে এই প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর দাবি, মারণ ভাইরাসের সংক্রমণ
ঠেকাতে গোটা দেশ যখন ছুটিতে, তখন দেশ জুড়ে পথে নামছেন ৮৫ লক্ষ নিরাপত্তারক্ষী। পশ্চিমবঙ্গে এই সংখ্যা প্রায় ৮ লক্ষ, আর কলকাতায় তা হবে ৩-৪ লাখ।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়— দু’জনের কাছে ন্যূনতম স্বীকৃতি এবং সরকারি সহায়তা চেয়ে তিনি টুইট করেছেন।
কলকাতায় বিভিন্ন এটিএমে নগদের দেখভাল, ব্যাঙ্ক থেকে টাকা পৌঁছনো থেকে একেবারে করোনা-প্রতিরোধের মূল কেন্দ্র বেলেঘাটার আই ডি হাসপাতাল এবং বেশ কয়েকটি কোয়রান্টিন কেন্দ্রে সক্রিয় একটি নিরাপত্তা সংস্থার কর্ণধার শ্যামল কর্মকার বলছিলেন, ‘‘ভয় যে আমাদের ছেলেরা পান না, তা তো নয়! কিন্তু তাঁদের বোঝাতে হচ্ছে। মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার ইত্যাদি সরবরাহ করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারি স্বীকৃতি বা কিছু সহায়তা থাকলে ভাল হত।’’ যেমন শ্যামলবাবু এখনও বুঝতে পারছেন না, ব্যাঙ্কের ডিউটিতে চাকদহ বা বর্ধমানের ছেলেটিকে কী ভাবে কলকাতায় নিয়ে আসবেন! হঠাৎ দু’-তিন দিনের মধ্যে দেশে সব কিছু অবরুদ্ধ করার দ্রুত সিদ্ধান্তে যুদ্ধকালীন কায়দায় তাঁরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
অন্য এক সর্বভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থার কর্ণধার দেবজ্যোতি সরকারও কলকাতায় সাড়ে ন’হাজার নিরাপত্তাকর্মী সরবরাহ করেন। তিনি বলছিলেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের শান্তিরক্ষার দিকও দেখতে হচ্ছে। চার পাশে নানা গুজবের ছড়াছড়ি। অজানা ভয়ে শিক্ষিত লোকেরাই কাতর।’’ তিনি জানান, স্বাস্থ্যবিধি বা পরিচ্ছন্নতার নিয়ম বজায় রাখতে নিরাপত্তাকর্মীদের এসএমএসে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। পাশাপাশি, গুজবে মাথা ঠান্ডা রাখার দিকটাও বোঝাতে হচ্ছে।
সতনমের সংস্থার তরফে রবিবার ‘জনতা কার্ফুর’ দিনেও কিছু চলমান ভ্যান সক্রিয় ছিল কয়েকটি এলাকায়। নিরাপত্তাকর্মীদের তালিম, মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার সরবরাহ তাঁরা আগেই শুরু করেছেন। সেই সঙ্গে নাইট ডিউটির পরে আটকে থাকা বিভিন্ন শপিংমল এবং অফিসের কর্মীদের এ দিন সকাল থেকে খাবার ও জল সরবরাহের কাজ করে চলেছেন তাঁরা। সতনম জানাচ্ছেন, আপৎকালীন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাকর্মীদের থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করতে হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক আবাসনে বিদেশ থেকে আসা লোক রয়েছেন। সেখানে অন্য আবাসিকেরা অনেকেই আতঙ্কে বেরোতে চাইছেন না। এই পরিস্থিতিতে কিন্তু নিরাপত্তাকর্মীরাই সিঁড়ি থেকে লিফট, জীবাণুমুক্ত করার কাজ দফায় দফায় অক্লান্ত ভাবে করছেন।’’ স্বাস্থ্যকর্মীদের স্মরণে থালা-ঘণ্টা বাজিয়ে ধন্যবাদ চান না সতনমেরা। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন আবাসন বা সরকারি সংস্থায় নিয়োগকারীদের কাছ থেকেও সহমর্মিতা ও মানবিক সহায়তাটুকু কাম্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন তিনি।