ফস্কা গেরো: শিয়ালদহ স্টেশনের ভিড়ে সোমবার চোখে পড়েনি করোনাভাইরাস নিয়ে প্রতিরোধমূলক কোনও ব্যবস্থা (বাঁ দিকে)। হাওড়া স্টেশনে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কোনও কোনও কর্মী মাস্ক ও দস্তানা ব্যবহার করছেন। নিজস্ব চিত্র
আপনি আচরি ধর্ম।
স্টেশনে করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্কতামূলক প্রচার শুরু করেছে রেল। কিন্তু সেখানে কর্মরত রেলকর্মীদের জন্য সংক্রমণ ঠেকানোর কোনও ব্যবস্থা নেই। ওই কর্মীদের অভিযোগ, রেলের তরফে তাঁদের মাস্ক কিংবা দস্তানা দেওয়া হয়নি। পরিবারের সদস্যদের সুস্থ রাখতে তাঁরা নিজেদের খরচে মাস্ক বা দস্তানা কিনে ব্যবহার করছেন।
করোনা নিয়ে রাজ্য ও দেশ জুড়ে সতর্কতা জারি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, পূর্বাঞ্চলের অন্যতম দু’টি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন হাওড়া ও শিয়ালদহে সতর্কতার কার্যত বেহাল দশা দেখা গেল। শিয়ালদহ স্টেশনে কোনও রেলকর্মীকেই সতর্ক হতে দেখা যায়নি সোমবার। স্যানিটাইজ়ার তো দূর, দস্তানা বা মাস্ক ব্যবহার করতেও কাউকেই দেখা যায়নি। অথচ টিকিট পরীক্ষক, রেল পুলিশ, টিকিট কাউন্টারে বসা রেলকর্মীদের সংস্পর্শে প্রচুর যাত্রীকে আসতে হয়। কিন্তু কাউকেই সাবধানতা অবলম্বন করতে দেখা যায়নি।
সোমবার শিয়ালদহ স্টেশনে করোনার সতর্কতায় ন্যূনতম কোনও ঘোষণাও শোনা যায়নি। শুধুমাত্র স্টেশন ম্যানেজারের ঘরের বাইরে নোটিস বোর্ডে দেখা গেল করোনা সংক্রান্ত সতর্কতামূলক পোস্টার।
তার বাইরে টিকিট পরীক্ষক, রেলের কর্মী বা রেল পুলিশের কারও হাতেই দস্তানা কিংবা মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। যাত্রীদের অধিকাংশকেই দেখা গেল খোলা মুখে আর খালি হাতে চলাচল করতে। হাতে গোনা কয়েক জনকে মাস্ক পরা বা মুখে রুমাল বাঁধা অবস্থায় দেখা গিয়েছে।
শিয়ালদহের স্টেশন ম্যানেজারের অফিস সূত্রে খবর, রোজ ১২-১৪ লক্ষের মতো মানুষের পা পড়ে ওই স্টেশনে। লোকাল, মেল এবং এক্সপ্রেস মিলিয়ে ট্রেনের সংখ্যা প্রায় ৬৫০। দেখা গেল, উত্তর ও দক্ষিণ শহরতলির ট্রেনগুলিতে ভিড় উপচে পড়ছে। এত মানুষকে হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার দেওয়া সম্ভব নয় বলেই জানালেন এক আধিকারিক। কিন্তু কেন স্টেশনে কর্মরত রেলকর্মীদের সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না? ওই আধিকারিকের কথায়, ‘‘রেলকর্মীদের মাস্ক বা দস্তানা দেওয়া হবে কি না, তা রেল শীঘ্রই ঘোষণা করবে।’’
অবশ্য হাওড়া স্টেশনে করোনা নিয়ে সতর্ক করতে ঘনঘন ঘোষণা হতে শোনা গিয়েছে এ দিন। কিন্তু স্টেশনের রেলকর্মীদের অধিকাংশকেই দেখা গেল সুরক্ষার সরঞ্জাম ছাড়াই কাজ করতে। তবে কোনও কোনও কর্মী জানালেন, তাঁরা নিজেদের খরচে দস্তানা, মাস্ক কিনে ব্যবহার করছেন। হাওড়া স্টেশনের ১০ নম্বর গেটে এ দিন দুপুরে দেখা গেল তিন মহিলা টিকিট পরীক্ষক হাতে দস্তানা, মুখে মাস্ক পরে যাত্রীদের টিকিট পরীক্ষা করছেন। তাঁদের ক্ষোভ, ‘‘কোনওটাই রেল দেয়নি। বাড়িতে বাচ্চা আছে। তাদের কথা ভেবেই নিজের খরচে এ সব কিনে পরেছি।’’ তাঁদের মতোই স্টেশনের অন্য টিকিট পরীক্ষকদেরও একই বক্তব্য, ‘‘সোমবার পর্যন্ত রেল কিছুই দেয়নি। নিজেরাই স্যানিটাইজ়ার কিনে মাঝে মাঝে হাত পরিষ্কার করে নিচ্ছি।’’
পূর্ব রেল সূত্রে খবর, প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১২ লক্ষ মানুষ হাওড়া হয়ে যাতায়াত করেন। ৪০ জোড়া দূরপাল্লার ট্রেন চলে হাওড়ায়। তা সত্ত্বেও সোমবার হাওড়ার পুরনো ও নতুন কমপ্লেক্সে ঘুরে করোনাভাইরাস নিয়ে শুধুমাত্র সতর্কতামূলক পোস্টার ও মাইকে ঘোষণাই শোনা গেল। নজরদারি বা মেডিক্যাল ক্যাম্পের কোনও ব্যবস্থাও দেখা যায়নি। অভিযোগ, সতর্কতা হিসেবে কী কী করণীয় রেল বোর্ড তা এখনও জানায়নি। হাওড়ার স্টেশন ম্যানেজার আনন্দ বর্ধন বলেন, ‘‘এত লোকের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ারের ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। তবে বোর্ডের নির্দেশ পেলে মেডিক্যাল ক্যাম্প-সহ সমস্ত ব্যবস্থা করা হবে।’’