ভরসা: রাজারহাটে একটি ক্যানসার হাসপাতালে তৈরি হয়েছে কোয়রান্টিন কেন্দ্র। বুধবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
মূল ফটকের সামনে মুখে মাস্ক পরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কলকাতা পুলিশের কর্মীরা। ফটকের অপর প্রান্তে হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীরাও রয়েছেন। পরিচয়পত্র বা প্রবেশের অনুমতিপত্র ছাড়া কাউকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। হাসপাতালের কর্মী থেকে শুরু করে রোগীর পরিজনেরাও বাদ যাচ্ছেন না নজরদারি থেকে। হাসপাতালের উল্টো দিকের রাস্তায় দিনভর নজরদারি চালাতে দেখা গেল কলকাতা পুলিশের কর্মীদের।
বুধবার সকাল থেকে এমন ছবিই দেখা গেল রাজারহাটের একটি ক্যানসার হাসপাতালের সামনে, যেখানে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে কোয়রান্টিন কেন্দ্র। কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে সন্দেহ হলে ওই হাসপাতালেই তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও প্রয়োজনে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
হাসপাতালটি কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানা এলাকায়। এ দিন সকাল থেকে প্রবল তৎপরতা দেখা গেল ওই হাসপাতালের কর্মীদের মধ্যে। দফায় দফায় প্রশাসনের কর্তারা হাসপাতালে গিয়ে কাজকর্মের তদারকি করলেন। সূত্রের খবর, যে তিন জনকে সেখানে রাখা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ফ্রান্স থেকে আসা এক মহিলাও রয়েছেন। এ দিন ওই কেন্দ্রে এনে রাখা হয়েছে করোনা-আক্রান্ত তরুণের মা, বাবা ও দুই গাড়িচালককে।
বিভিন্ন উড়ান থেকে বিমানবন্দরে নামা (যাঁরা অন্যান্য দেশ থেকে শহরে এসেছেন) যাত্রীদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ওই কোয়রান্টিন কেন্দ্রে। যেমন, সকালে জার্মানি থেকে কলকাতায় আসেন গড়িয়ার বাসিন্দা এক তরুণী। বিমানবন্দরে তাঁকে আনতে যান বাবা এবং বোন। ওই তরুণীর সঙ্গে তাঁরাও চলে আসেন কোয়রান্টিন কেন্দ্রে। সকলেরই চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ ছিল স্পষ্ট। ওই তরুণী জার্মানির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। বিমানবন্দরে প্রাথমিক পরীক্ষার পরে তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় রাজারহাটের ওই হাসপাতালে। তাঁর বাবা জানান, ওই বিমানে চেপে আরও অনেকে এ দিন কলকাতায় এসেছেন। তাঁর মেয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ। হাসপাতালে পরীক্ষার পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
গড়িয়ার ওই তরুণীর মতো এ দিন আরও একাধিক যাত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করা হয়। তবে হাসপাতাল সূত্রের খবর, সন্দেহজনক কিছুই না মেলায় তাঁদের সকলকেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। জার্মানি থেকে আরও দুই যুবক এ দিন বিমানে কলকাতায় আসেন। তাঁদেরও স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, ন’তলায় ৪০০টি শয্যা নিয়ে খোলা হয়েছে কোয়রান্টিন কেন্দ্র। প্রতিটি শয্যার মধ্যে রয়েছে নির্দিষ্ট দূরত্ব। রাখা হয়েছে খাওয়াদাওয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও। চলছে নজরদারি। সেখানে যাঁদের পরীক্ষা হচ্ছে, তাঁদের প্রত্যেকেরই নথিপত্রের প্রতিলিপি রেখে দিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের বাইরে চলছে রাস্তা মেরামতির কাজ। রাস্তার ধারে ঝোপজঙ্গল সাফ করার কাজও চলছে। মশা নিয়ন্ত্রণে স্প্রে-ও করা হচ্ছে। তবে ওই হাসপাতাল ঘিরে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ছড়িয়েছে আতঙ্ক। এ দিন সকালে দেখা গেল, যাঁরাই ওই হাসপাতালের ধারেকাছে যাচ্ছেন, সকলেরই মুখ মাস্ক, রুমাল বা কাপড়ে ঢাকা। হাসপাতাল ও পুলিশের কর্মীরাও সকলে পরে রয়েছেন মাস্ক। স্থানীয় এক যুবকের কথায়, ‘‘হাসপাতাল থেকে কেউ বেরিয়ে এসে অটোয় উঠলেও ভয় করছে। ছুঁলেই নাকি বিপদের আশঙ্কা আছে!’’
এ দিন রাতে রাজারহাটেরই টেকনোসিটি থানা এলাকায় আরও একটি কোয়রান্টিন কেন্দ্র তৈরির ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী। মন্ত্রী জানান, আপাতত ২০০ শয্যার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে সেখানে ৫০০ শয্যাও রাখা যাবে।