শম্ভুনাথ পণ্ডিত স্ট্রিটের একটি ওযুধের দোকানে মাস্ক নিয়ে পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে তর্কাতর্কি দোকানদারের। -নিজস্ব চিত্র।
গত শুক্রবারেই নবান্নে করোনাভাইরাস কী ভাবে এ রাজ্যে প্রতিরোধ হবে তা নিয়ে বৈঠক করে মাস্ক এবং ওযুধ নিয়ে কালোবাজারি না করার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তারপর দু’দিন কেটে গেলেও, কালোবাজারি কমার কোনও লক্ষণ নেই। করোনা নিয়ে আতঙ্ক যত বাড়ছে, ততই বাজার থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে মাস্ক। আর যেটুকুও বা পাওয়া যাচ্ছে, তা বিকোচ্ছে দ্বিগুণ দামে। রবিবার কলকাতা পুলিশের এনফোর্সমেন্ট শাখার আধিকারিকদের হানাতেও সেই ছবিই দেখা গেল।
রবিবার বিকেলে এসএসকেএম হাসপাতালের কাছে শম্ভুনাথ পণ্ডিত স্ট্রিটের ওযুধের দোকানে প্রথমে হানা দেন কলকাতা পুলিশের আধিকারিকরা। শুক্লা ফার্মসি নামে একটি দোকানে ক্রেতা সেজে যাওয়া পুলিশ আধিকারিকরা মাস্ক চাইলে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয় খুব সাধারণ মানের মাস্ক। যে মাস্ক অনেকেই ধূলো থেকে বাঁচতে ব্যবহার করে থাকেন। সেই মাস্কের দাম জিজ্ঞাসা করতেই পুলিশ আধিকারিকদের আক্কেল গুড়ুম হয়ে যায়। প্রতিটি মাস্কের দাম ৭০ টাকা। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, এ ধরনের মাস্ক তো ২০-২৫ টাকায় এতদিন পাওয়া যেত! দোকানদারের কাছে পুলিশ কর্মীরা জানতে চান, কত দামে তাঁরা ওই মাস্ক কিনেছেন? তার উত্তরে দোকানদার পরিস্কার জানিয়ে দেন য্ তিনি জানেন না কত দামে কেনা! পুলিশ আধিকারিকরা কেনার রসিদ দেখতে চাইলেও ওই দোকানদার তা দেখাতে পারেননি। ঠিক একই হাল ওই চত্বরের আরও বেশ কয়েকটি দোকানের।
কয়েকটি দোকানে সাধারণ মানের মাস্ক রয়েছে। তাও হাতে গোনা । বাকি দোকানের কর্মীদের দাবি যে, তাঁদের কাছে কোনও মাস্ক নেই। একটি নামী ওষুধের দোকানের চেনের ম্যানেজার শঙ্কর অধিকারী। তিনি বলেন,‘‘ আমাদের মতো দোকানেও কোনও মাস্ক নেই। লোক চাইছে্ কিন্তু দিতে পারছি না। যেখান থেকে মাস্ক সরবরাহ করা হত , সেখানেও মাস্ক নেই।” তা হলে কি রাতারাতি উবে গেল কয়েক লাখ মাস্ক? পুলিশের আধিকারিকরা এর পর যোগমায়াদেবী কলেজের কাছে হাজরা রোডে কয়েকটি ওযুধের দোকানে হানা দেন। ক্যালকাটা কেমিস্ট কর্নার নামে ওই দোকানেও দূষণ থেকে বাঁচতে বাইক আরোহীরা যে সাধারণ মাস্ক ব্যবহার করেন, সেই মাস্ক পাওয়া গেল। একেকটির দাম ১৫০ টাকা। পুলিশ কর্মীরা জানতে চান এত দাম কেন? পাল্টা দোকানদারের জবাব, সর্বাধিক বিক্রয় মূল্য মাস্কের গায়ে লেখা আছে ১৫০ টাকা। তাঁরা বাড়তি দাম নিচ্ছেন না। পুলিশ কর্মীরা কেনার রসিদ দেখতে চাইলে কাঁচা রসিদ দেখান দোকানদার। তাতে দাবি করা হয়েছে, একেকটি মাস্ক তাঁরা কিনেছেন ১০০ টাকায়। প্রতিটি মাস্কে ৫০ টাকা করে লাভ রাখছেন দোকানদার!
আরও পড়ুন: কেরলে করোনা একই পরিবারের ৫ জনের, দেশে আক্রান্ত বেড়ে ৩৯
দোকানে ওযুধ কিনতে আসা এক ব্যক্তি বলেন, বাধ্য হয়ে বাড়তি দাম দিয়েও অনেকে মাস্ক কিনছেন। কিন্তু সেই বাড়তি দাম দিয়েও খুব সাধারণ মানের মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘ অধিকাংশ দোকানই কোনও পাকা রসিদ দিয়ে এই মাস্ক কেনে না। যাঁরা প্রস্তুতকারক তাঁরা একটা বিক্রয়মূল্য মাস্কের প্যাকেটে লিখে রাখেন, যার সঙ্গে দোকানদারদের ক্রয়মূল্যের অনেক ফারাক।”
আরও পড়ুন: আমেরিকায় করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৯, জরুরি অবস্থা জারি নিউ ইয়র্কে
মুখ্যমন্ত্রী শুক্রবার কালোবাজারি রুখতে পুলিশকে কড়া নজর রাখার নির্দেশ দেওয়ার পরই কলকাতা পুলিশ কয়েকটি জায়গায় এ ভাবেই হানা দেয়। শনিবারও রবিবারের মতো বিভিন্ন ওযুধের দোকানে গিয়েছিলেন এনফোর্সমেন্ট শাখার আধিকারিকরা। কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, ‘‘ বাড়তি দাম নেওয়ার ঘটনা সামনে এলেও এখনও কোনও দোকানদারের বিরুদ্ধে কোনও মামলা দায়ের করা হয়নি। ” অন্য এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন,‘‘ আমাদের মূল উদ্দেশ্য, দোকানদাররা যাতে বেশি দাম না নেন তা দেখা। তাই আমরা তাঁদের সতর্ক করছি।”
কিন্তু বাস্তবে যে কলকাতা পুলিশের ‘‘নজরদারি’’-তে লাভ হচ্ছে না, তা ফের এক বার দেখা গেল রবিবার। কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন,‘‘ মেহতা বিল্ডিং বা বাগড়ি বাজারের পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে থাকা মাস্ক রাতারাতি উধাও হয়ে গেল কী ভাবে তা নিয়ে এনফোর্সমেন্ট শাখা খোঁজ নিলেও বোঝা যাবে কেন এত দামে বিক্রি হচ্ছে মাস্ক।”