—ছবি এএফপি।
রবিবার ভোর থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কলকাতা-সহ সারা দেশে আন্তর্জাতিক উড়ানের অবতরণ। ফলে আপাতত ভারতের সঙ্গে বিদেশের আকাশযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে। ভোর সাড়ে পাঁচটার পর থেকে কোনও আন্তর্জাতিক উড়ানকে দেশের মাটি ছুঁতে দেওয়া হবে না। আগামী এক সপ্তাহের জন্য জারি থাকবে এই নিষেধাজ্ঞা।
তবে এয়ার ইন্ডিয়ার যাত্রী-শূন্য উড়ান, যেটি শনিবার দুপুর আড়াইটেয় দিল্লি থেকে রোম উড়ে গিয়েছে, সেটি প্রায় তিনশো জন যাত্রী নিয়ে সকাল সাড়ে ন’টায় দিল্লি ফিরবে। এ দিকে, করোনা-আতঙ্কের জেরে শেষ মুহূর্তে দেশে ফেরার ভিড়ও বেড়েছে। যেখানে গত কয়েক দিন ধরে কলকাতায় গড়ে ১২০০ যাত্রী ফিরছিলেন, সেখানে শুধু শুক্রবারই ফিরেছেন ১৯০০ জন। শনিবার রাত পেরোলে সেই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে, মনে করা হচ্ছে।
শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত দুবাই, দোহা ও আবুধাবি থেকে আসা ৬৮৭ জন যাত্রীকে রাজারহাটের কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে। এমনই এক যাত্রী দেবলীনা হাঁটি শনিবার জানিয়েছেন, শুক্রবার মাঝ রাতে দুবাই থেকে নামার পরে তাঁদের বাসে করে ওই কোয়রান্টিন সেন্টারে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করা হয়। যাঁদের নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয়নি, তাঁদের ছেড়ে দেওয়ার সময়ে বাড়িতে ১৪ দিন গৃহবন্দি থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়াও শুক্রবার রাত ও শনিবার সকালে সিঙ্গাপুর এবং দিল্লি থেকে ইউরোপ ঘুরে আসা ২৬ জন যাত্রীকেও ওই কোয়রান্টিন সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। বিমানবন্দর কর্তাদের কথায়, রবিবার সকালের পরে চিন্তা থাকবে শুধু অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের নিয়ে। আপাতত কলকাতায় দিনে গড়ে ২০ হাজার অভ্যন্তরীণ যাত্রী নামছেন। তার মধ্যে অসংখ্য পড়ুয়া রয়েছেন। এঁরা বিভিন্ন রাজ্যে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন। ভিন্ রাজ্য থেকে কলকাতায় আসা প্রত্যেক যাত্রীকে বিমানবন্দরের বাইরে তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সেখানে যাঁদের দেহে সংক্রমণের সামান্য লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তাঁদের কোয়রান্টিন সেন্টারে পাঠানো হচ্ছে। সেখানে দ্বিতীয় দফায় পরীক্ষা করা হচ্ছে। বিমানবন্দরে অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের পরীক্ষা করছেন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা।
কেন্দ্রীয় বিমান মন্ত্রকের নির্দেশ মেনে শুক্রবার থেকে কলকাতায় নামা অভ্যন্তরীণ সব বিমানকে জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। মন্ত্রকের নির্দেশ, উড়ানে পাইলট ও বিমানসেবিকা মিলে যত জন কর্মী থাকবেন, ততগুলি বিশেষ পোশাক রাখতে হবে। যদি কোনও যাত্রীর মধ্যে কাশি-জ্বরের লক্ষণ দেখা দেয় এবং সেখান থেকে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে, তা হলে বিমানকর্মীদের বিশেষ পোশাক পরতে হবে। ওই যাত্রীকে অন্য যাত্রীদের থেকে দূরে সরিয়ে নিতে হবে।
এ দিকে, কলকাতা-সহ সারা দেশে মদ্যপানের পরীক্ষা (ব্রেথ অ্যানালাইজ়ার) বন্ধ করলেন বিমানবন্দরের এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) অফিসারেরা নিজেরাই। কলকাতায় এটিসি অফিসারদের সংগঠনের সম্পাদক কৈলাসপতি মণ্ডল জানিয়েছেন, এই পরীক্ষার সময়ে সংক্রমণের ভয় পাচ্ছিলেন অফিসারেরা। বারবার চিঠিও দেওয়া হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, যদি এক জনের মধ্যেও সংক্রমণ ছড়ায়, তা হলে অন্য অফিসারেরা কাজে আসতে চাইবেন না। সে ক্ষেত্রে এটিসি পুরো বন্ধ করতে হবে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও সাড়া না পেয়ে শনিবার সকাল থেকে এটিসি অফিসারেরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন এই পরীক্ষা।