ফাইল চিত্র
সল্টলেকের একটি মেসে গিয়ে সেখানকার ম্যানেজারের কাছে লগ বুক দেখতে চেয়েছিলেন স্থানীয় কাউন্সিলর। উদ্দেশ্য ছিল, কত জন ওই মেসে রয়েছেন, কেউ সম্প্রতি ভিন্ রাজ্য বা বিদেশ থেকে সেখানে এসেছেন কি না— তার তথ্য সংগ্রহ করা। সেই সূত্রেই জানা গেল, বুধবারই রাশিয়া থেকে ওই মেসে এসেছেন এক তরুণী। তাঁর পেশা মডেলিং। মাস্ক পরে ওই তরুণীর সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় তথ্য নিলেন পুরকর্মীরা। তাঁরা আরও জানতে পারলেন, বাংলাদেশের এক দম্পতি তাঁদের সন্তানকে নিয়ে এক সপ্তাহ আগে কলকাতায় এসেছেন চিকিৎসার জন্য। উঠেছেন ওই মেসে। দ্রুত সেই তথ্য পুরসভাকে জানালেন কাউন্সিলর। যাতে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরা গিয়ে ওই দম্পতির শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে পারেন।
এর পাশাপাশি বেশ কিছু অতিথিশালা এবং বাড়ি গিয়ে কথা বলেন পুরকর্মীরা। বিভিন্ন স্পা সেন্টারগুলিতেও যান। কারণ, ওই সেন্টারগুলিতে অনেক ভিন্ দেশি কর্মচারী কাজ করেন। সেই সূত্রে পুরকর্মীরা জানতে পারেন, এক মহিলা বৃহস্পতিবার ইংল্যান্ড থেকে সল্টলেকের বাড়িতে ফিরেছেন। তাঁকে আইডি হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সল্টলেকের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে এ ভাবেই ঘুরে ঘুরে বিদেশ বা ভিন্ রাজ্য থেকে আসা লোকজনের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করলেন কাউন্সিলর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় এবং পুরকর্মীরা। অনিন্দ্যবাবু জানান, যাঁরা গত কয়েক দিনের মধ্যে বিদেশ থেকে এসেছেন, পুরসভা থেকে সেই তথ্য দেওয়া হয়েছে। সেই অনুসারে তাঁদের বাড়ি গিয়ে খোঁজ রাখা হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে আবাসন কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছেন স্থানীয় কাউন্সিলর তুলসী সিংহ রায়। তিনি জানান, এই সময়ে বিদেশ থেকে অনেকেই বাড়ি ফেরেন। তাঁদের নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে এলাকার বাসিন্দাদের। সেই আতঙ্ক কাটাতেই এই বৈঠক। এ দিন ওয়ার্ড কমিটির সদস্যদের নিয়ে বাড়ি বাড়ি সচেতনতার প্রচার করেন ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্মল দত্ত।
শুধু পুরকর্তারাই নন, সংক্রমণ ঠেকাতে সতর্ক বাসিন্দারাও। বিভিন্ন ব্লক এলাকায় তাঁরা নিজেরাই খোঁজখবর রাখছেন। সল্টলেকের একটি ব্লক কমিটির এক কর্তা কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, ‘‘এখানকার বহু বাড়ির সন্তানেরা কর্মসূত্রে বিদেশে থাকেন। এই অবস্থায় নিজেদের স্বার্থেই বাসিন্দারা খোঁজ রাখছেন।’’ তবে তাঁরা এ-ও জানাচ্ছেন, বিদেশ থেকে ফিরে ১৪ দিনের জন্য গৃহ-পর্যবেক্ষণে থাকার বিষয়টি অনেকে মানছেন না। এতে শুধু ওই ব্যক্তির নয়, তাঁর কাছে
থাকা লোকজনেরও ক্ষতির আশঙ্কা রয়ে যাচ্ছে।
বিধাননগর পুরসভা সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত পুর এলাকায় ৭৩ জনের নাম পাওয়া গিয়েছে যাঁরা বিদেশ থেকে সম্প্রতি ফিরেছেন। তাঁদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ রাখা হচ্ছে। ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাণীব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কারা তাঁদের বাড়ি মেস বা অতিথিশালা হিসেবে ভাড়া দিচ্ছেন, অনেক ক্ষেত্রেই তা স্পষ্ট হচ্ছে না। অবিলম্বে সেই তথ্য প্রয়োজন। ওয়ার্ড কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ করা হবে।
ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায় জানান, বাসিন্দারা যাতে অযথা আতঙ্কিত না-হন, তার জন্য আবেদন জানানো হচ্ছে। বলা হয়েছে, কেউ যদি তাঁর এলাকায় বিদেশ থেকে আসা কারও খোঁজ পান, তা হলে দ্রুত পুরসভায় জানান। পুরকর্মীরা গিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবেন।