সতর্কতা: মাস্ক পরে অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীরা ছবি: সুমন বল্লভ
কেউ এসেছে মাস্ক পরে। কারও বা পেন-পেনসিলের পাউচে রাখা স্যানিটাইজ়ার। কেউ আবার করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েও ভিড় ট্রেনে চেপে সকাল-সকাল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার কেন্দ্রে পৌঁছেছিল। এক দিকে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কেমন আসবে তা নিয়ে চিন্তা। অন্য দিকে করোনার ভীতি। তাই শনিবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পিছিয়ে যেতে পরীক্ষার্থীদের অনেকেই খানিকটা স্বস্তি পেয়েছে। তবে কবে পরীক্ষা হবে, তার পরে আবার কলেজে ভর্তি নিয়ে কোনও সমস্যা হবে কি না, তা নিয়েও ভাবিত অনেকে।
শনিবার শহরের বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, পড়ুয়া ও তাদের অভিভাবকেরা চিন্তিত করোনা নিয়ে। দেখা গিয়েছে, পরীক্ষার্থীরা মাস্ক পরেই পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কিংবা গাছতলায় বসে শেষ মুহূর্তের পড়া ঝালিয়ে নিচ্ছে। তারা মাস্ক কিংবা স্যানিটাইজ়ার ঠিক মতো ব্যবহার করছে কি না, সে দিকে নজর দিতে দেখা গেল বহু অভিভাবককেও।
করোনার সংক্রমণের আশঙ্কার জেরে গণ পরিবহণের ব্যবহার কমাতে বিগত কয়েক দিন ধরেই সরকারের তরফে আবেদন করা হচ্ছে। জমায়েত না করার জন্যও অনুরোধ করা হচ্ছে। কিন্তু পরীক্ষা থাকায় ভিড় ট্রেনে, বাসে কিংবা ট্যাক্সিতে যাতায়াত করছিল পড়ুয়ারা। ফলে এ দিন সকালে বহু কেন্দ্রে গিয়েই এ সব নিয়ে আশঙ্কার সুর শোনা গিয়েছে অভিভাবক ও পড়ুয়াদের মধ্যে। যদিও তার পরেই বেলার দিকে উচ্চ মাধ্যমিকের বাকি পরীক্ষাগুলি পিছিয়ে যাওয়ার খবর জানা যায়।
যাদবপুর বিদ্যাপীঠের সামনে গাছতলায় দাঁড়িয়ে মাস্ক পরেই বইয়ের পাতা উল্টোচ্ছিল উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রী আত্রেয়ী বসু। আত্রেয়ী বলে, ‘‘আমাদের অনেককেই সোনারপুর থেকে ট্রেনে চেপে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে হয়। করোনার আতঙ্কে ট্রেন-বাস কম চলার আশঙ্কায় তাড়াতাড়ি চলে এসেছি। ভিড় ট্রেনে আসতে আসতে মনে হচ্ছিল এই পরিস্থিতিতে ভিড়ের মধ্যে চলাটা কি ঠিক হচ্ছে? সংক্রমিত হওয়ার ভয়ও লাগছিল।’’
পরীক্ষা যে পিছিয়ে যাচ্ছে তা জানতে পেরে বিষ্ণুপ্রিয়া মজুমদার নামে এক ছাত্রী বলে, ‘‘আজ সকালেই শুনলাম রাজ্যে আর এক জনের করোনা ধরা পড়েছে। পরীক্ষা দিতে আসার সময়ে তাই একটু ভয়ই করছিল। ভাবছিলাম কবে যে এই করোনা আতঙ্কের মধ্যে পরীক্ষা শেষ হবে।’’
এক পরীক্ষার্থীর অবশ্য বক্তব্য, ‘‘পরীক্ষাটা হয়ে গেলেই বোধ হয় ভাল হত। পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ায় আবার কলেজে ভর্তিতে না সমস্যা হয়।’’
এ দিন শহরের প্রায় সব পরীক্ষা কেন্দ্রেই স্যানিটাইজ়ার রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। দক্ষিণ কলকাতার কমলা গার্লস স্কুলের সামনে দেখা যায় স্যানিটাইজ়ার নিয়ে স্কুলের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন স্কুল কর্তৃপক্ষের এক প্রতিনিধি। হেয়ার স্কুলের শিক্ষক মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পরীক্ষার্থীরা ছাড়াও স্কুলের কর্মী, এমনকি পরীক্ষার ডিউটিতে আসা পুলিশকর্মীদেরও স্যানিটাইজ়ার দেওয়া হয়েছে।’’
তবে শুধুই স্যানিটাইজ়ার নয়, করোনা প্রতিরোধে বাড়িতে থাকা এবং জমায়েতে না যাওয়ার প্রয়োজনীয়তারও উল্লেখ করেন অভিভাবকেরা। আলোক বিশ্বাস নামে এক অভিভাবকের কথায়, ‘‘সংক্রমণের ভয়ে ছেলেকে ট্যাক্সিতে চাপিয়ে পরীক্ষা দিতে নিয়ে এসেছি।’’
হেয়ার স্কুলে পরীক্ষা দিতে আসা এক পরীক্ষার্থী বলে, ‘‘এই ছুটিতে বাকি পরীক্ষার পড়া আরও বেশি করে ঝালিয়ে নেওয়া যাবে। করোনার আতঙ্ক নিয়ে পরীক্ষাও দিতে আসতে হবে না।’’