coronavirus

লকডাউনে ব্যাহত সামাজিক জীবন, বাড়ছে গার্হস্থ্য হিংসা

কিন্তু সেই উপরি পাওনা সকলের জন্য লাভজনক হচ্ছে কি না, তা তলিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সমাজতত্ত্ববিদেরা।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২০ ০৪:৩২
Share:

করোনা মোকাবিলায় দেশ জুড়ে ঘরবন্দি সকলেই। অনেকেরই বক্তব্য, এই সুযোগে পরিবারের সঙ্গে ভাল ভাবে সময় কাটানো যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে কি তা-ই হচ্ছে?

Advertisement

১৫ মে বিশ্ব পরিবার দিবসের আগে এই প্রশ্নের উত্তরে সমাজতত্ত্ববিদেরা বলছেন, ‘লকডাউনে মানুষ পরিবারকে কাছে পাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সেই পাওয়া যে মধুর হচ্ছে, সেটা সর্বক্ষেত্রে বলা যাচ্ছে না। কারণ সময়টা ভয়ের, প্রতিকূলতার।’ লকডাউনের ফলে গার্হস্থ্য হিংসার ঘটনা বাড়ার কথা ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে। এ রাজ্যের মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গার্হস্থ্য হিংসার ঘটনা ফেব্রুয়ারির থেকে মার্চে কিছুটা বেশি ছিল। এপ্রিলে তার থেকেও বেশি হয়। আর মে মাসের কয়েক দিনেই সংখ্যাটা অনেক বেড়ে গিয়েছে।’’

এখন তো পরিবারের সব সদস্য একে অপরের সঙ্গে অনেকটা বেশি সময় কাটাতে পারছেন। ভাল-মন্দ ভাগ করে নেওয়ার অফুরান সুযোগ রয়েছে। তা হলে সমস্যা কোথায়? প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের এমেরিটাস অধ্যাপক প্রশান্ত রায়ের ব্যাখ্যা, ‘‘লকডাউন কিন্তু পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য হয়নি। এটার জন্য আগাম পরিকল্পনাও ছিল না। অর্থাৎ লোকে বাড়িতে থাকতে বাধ্য হলেন। এটা লকডাউনের উপরি পাওনা।’’ কিন্তু সেই উপরি পাওনা সকলের জন্য লাভজনক হচ্ছে কি না, তা তলিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সমাজতত্ত্ববিদেরা।

Advertisement

আরও পড়ুন: একসঙ্গে আক্রান্ত আট জন নার্স, বন্ধ হাসপাতাল

আরও পড়ুন: বডিগার্ড লাইন্সে আরও কঠোর নিরাপত্তা

লকডাউন যদি সর্বক্ষেত্রে পরিবারের সকলের মধ্যে মধুর সম্পর্ক তৈরি করত, তা হলে বিশ্ব জুড়ে গার্হস্থ্য হিংসা বাড়ত না বলেই মত প্রশান্তবাবুর। তিনি জানান, ইংল্যান্ডে গার্হস্থ্য হিংসা এতই বেড়েছে যে ভুক্তভোগীদের আলাদা থাকার জায়গা তৈরি করতে হচ্ছে। লীনা বলেন, ‘‘শহরের নাগরিক জীবনের পরিসরটা খুবই কম। প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিত্ব প্রতি মুহূর্তে খণ্ডিত হয়ে অসহিষ্ণুতা তৈরি করছে।’’ কর্মক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার জেরে হতাশ হয়ে পড়েছেন অনেকে। স্ত্রী ছাড়া কারও কাছে হতাশা প্রকাশের জায়গা পাচ্ছেন না তাঁরা। আবার

নেশা করতে না-পেরে স্ত্রী-মেয়েকে মারধর করার ঘটনাও ঘটছে বলে জানাচ্ছেন লীনা।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক অভিজিৎ কুণ্ডু মনে করেন, যত ক্ষণ সকলের সঙ্গে থাকা হচ্ছে, সেই সময়টা ‘কোয়ালিটি টাইম’ হওয়াই বাঞ্ছনীয়। তাঁর কথায়, ‘‘কোয়ালিটি টাইম যদি সমাজ বিচ্ছিন্ন হয়ে, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শুধু একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকা হয়, তাতে পরিবারের বন্ধন বাড়বে না। উল্টে মানুষ হাঁসফাঁস করবেন মুক্তির জন্য।’’

পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক কেমন, সেটা আগে দেখা দরকার বলে মনে করেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘বড় পরিবার একটি গোষ্ঠী তৈরি করে। তাতে সময় কাটানোর সুবিধা, আনন্দ আলাদা। স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানের পরিবারে সেই সুযোগ কম। স্বামী-স্ত্রী কত কথা বলবেন। কথা তো ফুরিয়ে যায়।’’ তা ছাড়া ছোট পরিবারে সব সময়েই একাকিত্ব থাকে বলে মত তাঁর।

সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিৎ মিত্র আবার মনে করাচ্ছেন, লকডাউনে স্ত্রী-সন্তানকে অনেকে সময় দিতে পারছেন। কিন্তু যাঁদের সন্তান, আত্মীয়েরা বাইরে রয়েছেন তাঁরা আশঙ্কায় ভুগছেন। সামাজিক জীবন বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় অনেকে এই বিচ্ছিন্ন, বন্দিদশা মেনে নিতে পারছেন না বলে জানাচ্ছেন ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রি-র অধিকর্তা প্রদীপ সাহা। তিনি বলেন, ‘‘পরিবারের প্রতিটি সদস্যের নিজস্ব জগৎ রয়েছে। সেটা ১০০ শতাংশ বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় চরম হতাশা, বিরক্তি তৈরি হচ্ছে। তা থেকে জন্ম নিচ্ছে গার্হস্থ্য হিংসা।’’

সব মিলিয়ে লকডাউনে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততা কম, বাধ্যবাধকতাই অনেক ক্ষেত্রে যেন বেশি হয়ে উঠছে, মত সকলের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement