মাস্ক-বাদ: বাড়ছে সংক্রমণ, তবু মাস্ক পরায় অনীহা অনেকের। মঙ্গলবার, বালিগঞ্জ এলাকায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
গত কয়েক দিনের তথ্যের ভিত্তিতে শহরে কোভিড সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত চিন্তায় ফেলেছে পুর প্রশাসনকে। সমীক্ষা থেকে এই তথ্যও উঠে আসছে যে, সংক্রমিতদের বড় অংশই বহুতলের বাসিন্দা। আবার দেখা যাচ্ছে, তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগের বয়স ৩০-৪০ বছরের মধ্যে। কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে পাওয়া তথ্য এ-ও জানাচ্ছে, বর্তমানে সংক্রমিতের তালিকায় এখনও তুলনামূলক ভাবে কম রয়েছেন বস্তির বাসিন্দারা। পুর স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, রবিবার শহরের ১৬৬ জন কোভিড সংক্রমিতের মধ্যে ৩৮ জন ষাট বছরের ঊর্ধ্বে। সোমবারে সংক্রমিত ১৭৮ জনের মধ্যে ৪৭ জন ষাটোর্ধ্ব। আক্রান্তদের বেশির ভাগ ৩০-৪০ বছর বয়সি। পুরসভার তথ্য অনুযায়ী, গত রবিবার শহরে কোভিড সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ১৬৬। এঁদের মধ্যে ৯৪ জন বহুতলের বাসিন্দা। পরদিন, সোমবার শহরে সংক্রমিত হয়েছেন ১৭৮ জন। এঁদের মধ্যে বাড়ির বাসিন্দা ৩৮ জন। বাকিরা সকলেই বহুতলের বাসিন্দা। ওই দিনের আক্রান্তদের মধ্যে ৩৩ জন উপসর্গযুক্ত। বাকিরা উপসর্গহীন। তবে আক্রান্তদের বেশির ভাগই হোম কোয়রান্টিনে রয়েছেন বলে খবর। পুর কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, ইতিমধ্যেই শহরবাসীর উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সতর্কতা পুনরায় জারি করা হয়েছে। কলকাতা পুরসভার ৩, ৭, ৮ এবং ১০ নম্বর বরোয় বেশি সংক্রমণ ছড়ানোয় ওই বরোগুলিতে দু’টি করে অটোয় ঘুরে সতর্কতার প্রচার চালানো হচ্ছে। বাকি বারোটি বরোর প্রতিটিতে একটি করে অটো প্রচারে বেরোচ্ছে। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, আট নম্বর বরোর বালিগঞ্জ, ভবানীপুর, গড়িয়াহাট, টালিগঞ্জে এবং ন’নম্বর বরোর অন্তর্গত আলিপুরে সংক্রমিতের হার বাড়ছে। সোমবার ন’নম্বর বরোর শুধু আলিপুরেই আক্রান্ত হয়েছেন ২০ জন! রবিবারে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৫। ওই দিন বালিগঞ্জে সংক্রমিত হয়েছেন ন’জন এবং সাত নম্বর বরোর অধীনস্থ শেক্সপিয়র সরণিতে সংক্রমিত সাত। হিসেব মতো গত দু’দিনে বালিগঞ্জ ও আলিপুরে কোভিড সংক্রমিত হয়েছেন যথাক্রমে ২৪ এবং ৩৫ জন। অন্য দিকে, সোমবার বেহালা ও পর্ণশ্রী মিলিয়ে ১৬ জন কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন। রবিবার ওই দুই এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল দশ। সোমবার ঠাকুরপুকুরে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ছ’জন। রিজেন্ট পার্কের একই এলাকায় আক্রান্ত হয়েছেন সাত জন। অথচ ঠাকুরপুকুর এবং রিজেন্ট পার্কে গত কয়েক দিনের তথ্যে সংক্রমিতের সংখ্যাই ছিল না। কোভিডের প্রকোপ বাড়ছে উত্তরের শ্যামপুকুর, ফুলবাগান, মানিকতলা, বেলেঘাটা এলাকাতেও। যদিও শহরে দৈনিক কোভিড সংক্রমিতের সংখ্যা নিয়ে পুরসভা এবং রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া পরিসংখ্যানে তফাত দেখা যাচ্ছে। পুরসভার তথ্য অনুযায়ী, ১৯-২২ মার্চ কোভিড সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ১২৬, ১৬৩, ১৬৬ এবং ১৭৮। অন্য দিকে, ওই চার দিনে স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, শহরে সংক্রমিত যথাক্রমে ৯৯, ১২৫, ১৫৮ এবং ১২৮। এই তারতম্য কেন? স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘দৈনিক সংক্রমিতের পরিসংখ্যান সব সময়ই আপডেট হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনের সঙ্গে পুরসভার পরিসংখ্যানের তফাতের মূল কারণ হল সময়। ধরা যাক, আমরা রাত ৮টা পর্যন্ত পরিসংখ্যান তৈরি করছি। কিন্তু পুরসভা আরও পরের সময় ধরে করছে। ফলে দু’টির পরিসংখ্যানে পার্থক্য থেকে যায়।’’ স্বাস্থ্য দফতরের অন্য এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, শুধু কলকাতা পুরসভাই নয়, যে কোনও জেলার দৈনিক কোভিড সংক্রমিতের পরিসংখ্যানের সঙ্গে প্রতি রাতে প্রকাশিত স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনের মিল থাকে না। কারণ, সাধারণত বিকেল ৪-৫টার মধ্যে কলকাতা ও জেলার পরিসংখ্যান জমা পড়ে স্বাস্থ্য দফতরে। তার পরে যে সংখ্যাগুলি আসে, সেগুলি পরদিন স্বাস্থ্য দফতরে পাঠানো হয়।